মেয়েটা একটা ছেলের বউ হতে অনায়াসে রাজি কিন্তু একটা পরিবারের বউ হতে কিছুতেই রাজি নয় । শ্বশুর-শ্বাশুরিকে বাবা-মায়ের স্থান দিতে বেশ শক্তভাবেই নারাজ অথচ এই মেয়েটাই তার পিতৃগৃহে বাবা-মায়ের দারুণ ভক্ত এবং তার ভ্রাতৃবধু শ্বশুর-শ্বাশুরির যত্ন করুক, এটা সে দারুণ ভাবেই কামনা করে । বৈবাহিক সূত্রে স্বামীর প্রতি স্ত্রী’ একক অধিকার ও আধিপত্য অর্জন করে বটে কিন্তু ভাবা উচিত, তার স্বামী একটি পরিবারের সন্তান । পরিবারের দান-অবদানে তার বেড়ে ওঠা এবং যা কিছু প্রাপ্তি তার সবটাই এদের কল্যানপুষ্টতায় অর্জন । বাবা-মা, ভাই-বোনের প্রতি তার দায়-কর্তব্য আছে এবং এদেরও তাদের সন্তান, ভাইয়ের প্রতি অধিকার-চাওয়া আছে । এসব কিছু না ভেবে স্ত্রী যদি তার স্বামীর সবকিছু একক দখলে নিতে চায় তাহলে হয় পরিবারের বন্ধন ভাঙবে নয়ত একরাশ কষ্ট দু’কূলকে ছাপিয়ে রাখবে । আজ যদি শুধু বর্তমান সময়ের সূখকে প্রধাণ্য দেয়া হয় তবে সেদিন কি খুব বেশি দূরে যেদিন আজকের বালিকা বধূটি হবে, তার সবটা জুড়ে বার্ধক্য ভর করবে এবং সেও অসহায় বোধ করবে । সেদিন যদি তার প্রিয় পূত্রের বধূ তার প্রতি বিতৃষ্ণা দেখায় তবে সেটা কিভাবে সহ্য করবেন ? নিশ্চিত ভবিষ্যতকে একটু বর্তমানে টেনে এনে ভাবুন এবং সিদ্ধান্ত নিন । তাতে ভালো রাখতে সচেষ্ট হবেন এবং ভালো থাকার গ্যারান্টি পাবেন ।
……
পুরুষ সকল ! বিবাহরে সূত্রে একটা মেয়েকে বউ হিসেবে পেয়ে যেমন ইচ্ছা তেমন আচরণ করার অধিকার তুমি রাখোনা । শুধু স্বামী নয় বরং নববধূর বন্ধু হতে চেষ্টা করো । ভুলেও কখনো প্রভূ হওয়ার চিন্তা করো না । অবশ্য প্রভূ কিংবা স্বামী হলেও তোমার জীবন কেটে যাবে, যান্ত্রিকভাবে তোমার চাওয়ার পূর্ণতাও ঘটবে কিন্তু এমন কিছু ব্যাপারের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবে না, যা তোমার জীবনকে নব আলোয় উদ্ভাসিত করতো । স্বামী হিসেবে একটা মেয়ের ত্যাগের মর্ম তোমাকে বুঝতে হবে । যে মেয়েটা তার চিরচেনা পরিবেশ, স্বজন, স্বাদ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে শুধু তোমাকে ভরসা করে যোজন যোজন পাড়ি দিয়েছে তাকে যদি বন্ধু বানাতে না পারো তবে পুরুষ হিসেবে তোমার স্বার্থকতা কোথায় ? নিজের মানসিকতা তার ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা আদৌ কাম্য নয় । বরং তার মনকে বুঝতে চেষ্টা করা আবশ্যকীয় কর্তব্য । তোমার সামান্য সামান্য ত্যাগ কিংবা কসুরে যদি তার হাসি দেখতে পাও তবে সেটায় কার্পণ্য করা উচিত নয় বরং অতীতের সাথে প্রতিযোগিতা করে এটার ব্যপ্তি বাড়ানো উচিত । একটু বেড়ানো, দু’দন্ড বসা, ছোট ছোট ব্যাপারে বিস্মিত করে দেয়া, হাতে হাত রেখে জ্যোস্না দেখাতেই নারীত্বের তৃপ্ততা । এসব উপায়ে স্ত্রীকে সন্তুষ্ট রাখতে শ্রম কিংবা অর্থের আধিক্যের প্রয়োজন হয়না বরং সুন্দর মনের গহীনে লুকিয়ে রাখা ভালোবাসার চর্চা করতে হয় শুধু । স্বার্থক পুরুষ হিসেবে স্ত্রী’র জন্য এটুকু অন্তত করা উচিত ।
…..
স্বামী-স্ত্রীর সমন্বয়েই উদ্ভব ঘটে একটি পরিবার, চিরায়ত বন্ধনের । গ্রাম কিংবা শহরের কোথাও আজ আর সেই আদিম অবস্থা নেই যেখানে শ্বাশুরি কর্তৃক বউয়ের চরমভাবে নিগৃহীত হয় । এখন যা আছে সেটা অতীতের ভীতি । এদেশের অনেক পরিবারে -পুত্রবধূর মধ্যে যে মধুর বন্ধুত্ব হয় বা হচ্ছে তা মা-কন্যার মধ্যেও হচ্ছে না । কাজেই বধূদের উচিত শ্বাশুরিদের বন্ধু ভাবা এবং শ্বাশুরিদের উচিত বধূদের ছায়া হয়ে আগলে রাখা । স্বামীসহ শ্বশুরকূলের সবার ভাবা উচিত, অন্য পরিবারের একটি মেয়ে যখন তাদের পরিবারের বউ হয়ে এসেছে তখন তার সবকিছু ত্যাগ করেই এসেছে । এটা মেয়েটি দ্বিতীয় জন্মের মত । কাজেই তাকে কিভাবে বড় করবে সে দায়িত্ব শ্বশুরকূলের । বর্তমানের ছেলেরা স্বামী হওয়ার পর কিছুটা দ্যোদূল্যতায় ভোগে, হতাশা ভর করে । কেননা স্ত্রী নাকি পরিবার-স্বার্থের কোন কূল রক্ষা করবে, কার মন তুষ্ট রাখবে । অবশ্য পুরুষের সামর্থ্যের কিছুটা সীমাবদ্ধতাও রয়েছে । তবে একটু কৌশলী হলে এবং স্ত্রী-পরিবারের সদস্যরা সহযোগীতা করলে দু’পক্ষকেই সমসন্তুষ্ট রাখা সম্ভব । শুধু সবার মানসিকতায় একটু অদল-বদল ঘটলে একেকটি পরিবার শান্তির আবাসস্থল হিসেবে গড়ে উঠতে পারে । অতিরিক্ত এবং শৈথিল্যের যা কিছু তার সবটুকু বর্জন করে বুদ্ধি-ত্যাগের শিক্ষা ধারণ করে তা বাস্তব জীবনে চর্চা করলে শান্তি-সূখের নীড়ে বাস করা সম্ভব, খুব সহজভাবে সম্ভব ।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)