ইন্টারন্যাশনাল উইমেন

নিজের জ্ঞান আর বুদ্ধি দিয়ে সব পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে হবে লক্ষ্যের দিকে।

নিজের জ্ঞান আর বুদ্ধি দিয়ে সব পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে হবে লক্ষ্যের দিকে।
11156124_450239298478202_1157141781326385471_n আজকে যাকে নিয়ে যার শুরু এবং সফলতা নিয়ে কথা হবে তিনি আমাদের মাঝে অনেক গুলো পরিচয়ে পরিচিত। একাধারে গৃহিনী,মা,স্ত্রী এবং সফল ব্যবসায়ী। সমাজে নিজ পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত একজন সফল নারী। তখন সত্তরের দশকে বাঙ্গালী সমাজে কোন নারী নিজ উদ্যোগে কিছু করার ব্যাপারে,নিজের আলাদা একটা পরিচয় দাঁড় করানোর ব্যাপারে অতোটা ভাবতেন না। কিন্তু ব্যতিক্রম তো কেউ না কেউ থাকে,যারা কি না সাধারনের ভীড় থেকে তৈরী করেন নিজের অসাধারন পরিচয়। তেমনই একজন আমাদের অত্যন্ত প্রিয় মুখ,গর্বিত হাসির অধিকারিণী মিসেস হাসিনা নেওয়াজ। মিসেস নেওয়াজের শুরুটা ছিল ১৯৭৬ সালে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে পড়াশোনা শেষে সবাই ধরেই নিয়েছিল গৃহিণীই হবেন তিনি। মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করার জন্য যেকোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানেই চাকরির সুযোগ মিলত তাঁর। এমফিল করার সুযোগও ছিল। বাংলা একাডেমিতে চাকরির সুযোগ ছিল। সেসব কিছুই করলেন না তিনি। হাসিনা বলেন, ‘আমি নিজে কিছু করতে চাইছিলাম। প্রচলিত চাকরির ধারণাকে ছাপিয়ে নিজের ব্যবসা বা উদ্যোগের প্রতি আমার আগ্রহ ছিল তখন।’ চাকরির চেয়ে হাসিনা নেওয়াজের অবশ্য ভাবনা ছিল বড় কিছু করা। ঢাকায় স্বামী আর কন্যাকে নিয়ে সুখেই দিন কাটানোর সব সুযোগই ছিল তাঁর। সব একপাশে রেখে বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি লেখা শুরু করেন তিনি। বিভিন্ন দূতাবাস থেকে ঠিকানা জোগাড় করে বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানির জন্য লিখতেন। চিঠি লিখতে লিখতে একসময় একটা সুযোগ পেয়ে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধু সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণী রপ্তানির বুদ্ধি দেয়। সহপাঠী হংকংয়ের এক ব্যবসায়ীর খোঁজও দেয়। অনেক দৌড়াদৌড়ি আর পরিশ্রমের পরে সেই ভদ্রলোক হাসিনা নেওয়াজের কাছ থেকে কচ্ছপ, ইলিশ মাছ, কাঁকড়া নেওয়া শুরু করেন। বাবার অনুপ্রেরণা আর স্বামী শাহনেওয়াজ তালুকদারের উৎসাহে ধীরে ধীরে শুরু করেন অন্য ব্যবসা। 11146283_450243981811067_2870035727694325137_n ১৯৮২ সালে শুরু করেন অর্কিড প্রিন্টার্স। হাসিনার ভাষ্যে, ‘ব্যবসায় প্রচুর প্রতিবন্ধকতা থাকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় সামাজিক প্রতিবন্ধকতা। অনেকেই অনেক কথা বলতেন, কিন্তু আমার একটা ব্যাপারেই মনোযোগ ছিল; আর তা কাজ আর কাজ।’ বাবা আবদুল হাসিব চৌধুরীর ব্যবসা দেখেই ছোটবেলা থেকে নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন হাসিনা। তিনি জানান, ‘আমার বাবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েও চাকরি করেননি, ব্যবসা করেছেন। আমিও বাবার মতো কিছু করতে চেষ্টা করেছি।’ ১৯৮২ সালে শুরু করা মুদ্রণ ব্যবসাকে সময় আর শ্রম দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন হাসিনা। তিনি বলেন, ‘পথে নামলে অনেক কথা শুনতে হয়। অন্যদের কথায় মন দিলে নিজের লক্ষ্যের দিকে যাওয়া যায় না। সমাজের প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, কিন্তু নিজের জ্ঞান আর বুদ্ধি দিয়ে সব পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে হবে লক্ষ্যের দিকে।’ এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রত্যয়ী হাসিনা নেওয়াজ। 11103023_1408111039507852_5894643267663730164_n মিসেস হাসিনা নেওয়াজ বর্তমানে ঢাকার একটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান অর্কিড প্রিন্টার্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সেই সাথে বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্সের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি। এ ছাড়া তিনি ডেইলি স্টার-ডিএইচএল ‘আউটস্ট্যান্ডিং উইমেন ইন বিজনেস’ পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৫ সালে। ২০১৩ সালে পেরুর রাজধানী লিমাতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থা ইউএনআইডিওর এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর মিনিস্ট্রিয়াল সাউথ সাউথ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সদস্য ছিলেন তিনি। উইমেন এক্সপ্রেস পরিবারের পক্ষ থেকে মিসেস হাসিনা নেওয়াজের জন্য রইলো অনেক অনেক সফলতা ও শুভ কামনা।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)