উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)

পুঁজিবাদীদের পুতুল

পুঁজিবাদীদের পুতুল
আমাদের মানসিকতা যদি থাকে, মানুষকে মূল্যায়ন না করে তার পোশাককে মূল্যায়ন করো- তাহলে ইরানের বিখ্যাত কবি শেখ সাদি’র নিজে না খাইয়ে পকেটকে খাওয়ানোর উদাহরণটা আজও চির-অম্লান ও দৃষ্টান্তমূলক হয়ে আছে। সেই ঘটনা আমরা সবাই জানি, সাদাসিদে পোশাকে আমীরের বাসায় যাওয়ায় মূল্যায়ন তো দূর, কিছু খেতেও দেয়া হলো না, অথচ সেই তিনিই যখন রাজার দেয়া পোশাক পরে, আমীরের বাসায় গেলেন তখন খাতিরের কমতি ছিলো না। যাই হোক, সেই আমীরের মতো মানসিকতায় যেনো ভরে গেছে আমাদের সমাজের সকল অনুষ্ঠান কিংবা আয়োজন। যেটা মানসিকভাবে পীড়া দেয় অধিকাংশ মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্তদের। গরিবের কথা- সে নাই বা বললাম। ভুক্তভোগী নারী-পুরুষ সবাই।     স্বাভাবিকভাবেই কোনো প্রোগ্রামে আমরা মোটামুটি ভালো একটা পোশাক পরে যেতে চাই। তবে লক্ষ্য করুন- কোনো পোশাক ‘ভালো’ হওয়া আর ‘দামী’ হওয়া যেমন এক নয়, তেমনি ফ্যাশন, স্মার্টনেস কিংবা স্ট্যাইল- এ ব্যাপারগুলোও এক নয়। নিত্যনতুন ফ্যাশন আমাকে মানাবে- এমনটা যেমন নয়, তেমনি ব্যক্তি বিশেষে স্ট্যাইলেরও পরিবর্তন হয়। যদিও অনেকেই উপরের সবগুলোকে ফ্যাশন ও দামী হওয়া দিয়ে চিন্তা করেন। যেমন- কারো কাছে তার পছন্দ মতো ২০০০টাকার পোশাক ভালো হলেও অনেকের কাছে সেটা হয়ে যায়- “মাত্র ২০০০! এটা পরে কেউ পার্টিতে আসে? ফকিরি ড্রেস”! আবার এর চেয়ে কম মূল্যে পোশাক কিনেও কেউ যদি মানানসই পদ্ধতিতে নিজের ব্যক্তিত্ব তথা স্ট্যাইল বজায় রাখে- তো অনেকের কাছে সেটা ‘হাল ফ্যাশনের মধ্যে পরে না’। কেউ কেউ তো আবার, মানুষকে বিবেচনা করেন- দামী ড্রেস, কিংবা কোথা থেকে কিনেছে-এসব দেখে। তারা এই মানদন্ডে মানুষকে বিচার করেন, মানুষের সাথে কথা বলেন, এর বাইরে নাক সিটকান। যদিও আমাদের বুঝা উচিত- আমরা এমন এক প্রতিযোগিতায় মানুষকে ফেলছি- যার কোনো সীমা নেই। যেখানে মনুষ্যত্বের কিংবা জ্ঞানের মূল্যায়ন নেই।   আমি বলছি না- “আমার জ্ঞান আছে, আমি অনেক জানি, মানুষকে আমার জ্ঞানের মূল্য দেয়াই লাগবে”- এমন বাহাদুরি দেখিয়ে একটা ভালো পোশাক ছেড়ে পুরাতন, জীর্ণ কিংবা ছেঁড়া পোশাক পরে অথবা জুতা কেনার সামর্থ্য থাকা স্বত্ত্বেও পায়ে রাবারের চপ্পল পরে বের হতে হবে। বরং আল্লাহ আমাদের যে পরিমাণ সামর্থ্য দিয়েছেন সেটা প্রকাশ করাও ইবাদত। অবশ্যই আল্লাহর অনুগ্রহ প্রকাশ করতে হবে, কৃপণতা কাম্য নয়।     তবে, বিভিন্ন আনুষ্ঠানে যেভাবে- নিজের কাপড়ের সাথে অন্যের কাপড় মিলিয়ে দেখা, স্বর্ণালংকার মিলিয়ে দেখা- দেখি কারটা দামী! মেকআপ মিলিয়ে দেখা, তার মতো হওয়ার চেষ্টা করা - ইত্যাদি ব্যাপারগুলোর অতিরিক্ত মাতামাতি আমাদেরকে ব্যক্তির উপরে বস্তুকে মূল্য দিতে শেখাচ্ছে। যার ফলে আমাদের মানসিক উন্নয়ন তো হচ্ছেই না বরং আমরা যেনো দিন দিন পুঁজিবাদীদের পুতুল কিংবা ব্যবসায়ীদের পণ্যে পরিণত হচ্ছি।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন