
নবী (সঃ) বলেন, "আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীন বা ধর্মে পারদর্শিতা দান করেন।“ আর তা এ কারণে যে, সে যখন পারদর্শিতা অর্জন করবে, তখন আমল করবে। আর তার সে আমল সুন্দর হবে। ইমাম আল-গাযালী (রহ) যেমন বলেছেন, একজন ফকীহ তথা দ্বীনে পারদর্শী র সর্বনিম্ন স্তর এই যে, তিনি এতোটুকু জানবেন যে, দুনিয়ার চেয়ে আখিরাত উত্তম। এই জানা যখন সত্য়ে পরিণত হয় এবং তার উপর বিজয়ী হয় তখন সে নিফাক (কপটতা) ও রিয়া (প্রদর্শনী মনোভাব) থেকে মুক্ত হয়ে যায়।
রাসূল (সঃ) এক ব্যক্তিকে অন্য এক ব্যক্তির নিকট সোপর্দ করে বলেন, তাকে শেখাও। তিনি লোকটিকে কুরআন শেখাতে লাগলেন। যখন এ আয়াতে পোছলেন, "কেউ "অনু পরিমাণ সত্কাজ করলে সে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসত্কর্ম করলে সেও তা দেখবে। (সূরা যিলযালঃ ৭-৮)
আমল (কর্ম) সঠিক হওয়ার জন্য ইলম (জ্ঞান) পূর্বশর্তঃ
একথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আমল তথা কর্মের জন্য ইলম তথা জ্ঞান অত্যাবশ্যক। যাতে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী আমল শুদ্ধ, সঠিক ও যথাযথ হতে পারে। সেই আমল আল্লাহর ইবাদত হোক বা হোক না তা মানুষের সাথে আচরণ ও আদান-প্র্দানমূলক। উমার ইবনে আবদিল আযীয (রহ) বলেনঃ "যে ব্যক্তি জ্ঞান (ইলম) ছাড়া কাজ করে, সে যতটুকু ঠিক করে তার চেয়ে বেশি নষ্ট করে।"
ইলম ছাড়া কোন ইবাদত সঠিক হয় নাঃ
এক ব্যক্তি রাসূল (সঃ) এর সামনে যথাযথভাবে রুকু-সিজদা না করে ও করে নামায শেষ করায় তিনি তাকে বললেন, যাও, আবার সালাত আদায় কর, তুমি সালাত আদায় করনি। এর কারণ হলো, তার সালাত ছিল ত্রুটিপূর্ণ ও বিক্ষিপ্ত যে যেন কোন সালাতই আদায় হয়নি।
ইলম ছাড়া কোন আচরণ সঠিক হবে নাঃ
স্পষ্টভাবে যা কিছু হালাল তা করা বা না করাতে কোন দোষ নেই. ঠিক তেমনিভাবে যা কিছু স্পষ্টভাবে হারাম তা করার পেছনে কোন যুক্তি বা ওজর থাকতে পারে না. আর যা কিছু এ দু’য়ের মাঝখানে সন্দেহযুক্ত - যা অধিকাংশ মানুষ জানে না, যে এটা হালাল না হারাম, সে ক্ষেত্রে সন্দেহের শেষ সীমা পর্যন্ত ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে. যেমন রাসূল (স:) বলেছেন: "যে সন্দেহ থেকে দূরে থাকলো সে তার দীন ও মান-ইজ্জতের মুক্তি কামনা করলো। আর যে সন্দেহে পড়লো সে হারামের মধ্যে পড়লো। যেমন একজন রাখাল সংরক্ষিত ভূমির পাশে ছাগল চরায়। যে কোন মুহূর্তে সে সংরক্ষিত ভূমিতে ঢুকে যেতে পারে।"
আমাদের পূর্ববর্তী সত্যনিষ্ঠগণ ব্যবসায়ীদেরকে কেনাবেচার ও লেনদেনের রীতিনীতি, নিয়ম-কানুন ভালো মত জেনে নেয়ার অথবা এ বিষয়ে একজন পারদর্শী ফকীহর পরামর্শ গ্রহণ করার উপদেশ দিতেন। একইভাবে তাঁরা মানুষের নেতৃত্ব দিতে অথবা মানুষের উপর কর্তৃত্ব করতে সক্ষম, এমনদেরকে পদে অধিষ্ঠিত হওয়া অথবা দায়িত্ব গ্রহনের পূর্বেই এ সংক্রান্ত জ্ঞানে পারদর্শিতা অর্জনেরও উপদেশ দিতেন। যাতে সে তার জ্ঞানের আলোকে পথ চলতে পারে। তাদের থেকে এ কথাটি প্রচলিত আছে: "নেতৃত্ব দেয়ার আগে তা ভালোভাবে জেনে বুঝে পারদর্শিতা অর্জন কর."
নেতৃত্ব- কর্তৃত্ব -এর পদসমূহের নিয়োগ লাভের পূর্বশর্ত ইলম (জ্ঞান):
নবী ইউসুফ (আ) চাচ্ছিলেন মিসর -রাজ তাঁকে মিসরের মাটিতে এমন নেতৃত্বের আসনে অধিষ্টিত করুন যেখানে তাঁর মত যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষকে করা হয়. তিনি নিজের গত যে সকল যোগ্যতার কথা তুলে ধরেন তার শীর্ষে হলো হিফয ও ইলম তথা আমানতদারী ও জ্ঞান। তিনি বলেন: "আমাকে দেশের ধনভান্ডারের উপর কর্তৃত্ব প্রদান করুন, আমি তো উত্তম রক্ষক, জ্ঞানী।" সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বমূলক কর্মসমূহে, যেমন রাষ্ট্র পরিচালনা, বিচারপতির দায়িত্ব পালন করা ইত্যাদি, যারা নিয়োগ লাভ করবেন তাদের জন্য ফকিহগণ এই শর্ত আরোপ করেছেন যে, তাকে এতোখানি স্বতন্ত্র জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে যাতে তিনি মুজতাহিদের স্তরে পৌঁছতে পারেন। কেউ কোন ফতোয়া জিজ্ঞেস করলে তিনি নিজ জ্ঞান দ্বারা ফতোয়া দিতে পারেন, কোন আদেশ করলে সত্য-সঠিক আদেশ করতে পারেন, কোন বিচার করলে ন্যায়বিচার করতে পারেন এবং কোন আহবান জানালে দূরদৃষ্টির সাথে জানাতে পারেন। উম্মতের অপরিহার্য দায়িত্ব যে, তারা তাদের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকবে। সে দায়িত্ব পালনের জন্য যেন যোগ্যতম রা ছাড়া অন্য কেউ সেই পদে অধিষ্ঠিত হতে না পারে।আল্লাহর শরীয়ত তথা বিধি-বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ কোন মুসলিমদের রাজনীতি ও বিচার বিভাগের পদে আসীন হোক, ফকিহগনের কেউ তা বৈধ মনে করেননি। কারণ আল্লাহর শরীয়ত হলোই দু'জন মুসলিমের মধ্যে বিচার-ফয়সালার ভিত্তি। সুতরাং সে বিচারে যথাযথ জ্ঞান না থাকলে হয় অজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে অথবা নিজের খেয়াল-খুশিমত বিচার করবে। সেক্ষেত্রে সে হবে জাহান্নামী। বুরাইদা (র:), রাসূল(স: ) থেকে বর্ণনা করেছেন: "দুই প্রকারের বিচারক জাহান্নামে যাবে। জান্নাতে সেই যাবেন যিনি সত্যকে জেনে সেই অনুযায়ী বিচার করেন। আর যে সত্যকে জানলো এবং অন্যায়ভাবে সিদ্ধান্ত দিল, সে যাবে জাহান্নামে, অনুরূপভাবে যে অজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে মানুষের মধ্যে বিচার করে সেও জাহান্নামে যাবে।" [১]
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)