অনির্ধারিত

আজ 'অরণ্যে'র সব হারানোর দিন!

আজ 'অরণ্যে'র সব হারানোর দিন!
আজকের রাতটা কি অনেক বড় লাগছে? আঁধারটাও কি বড় বেশী গভীর লাগছে? কিন্তু কেন? মাথার উপরে ভেসে থাকা মেঘগুলো আজ এতো থমথমে কেন? নীলাকাশের অসীম বিস্তৃত অই জগতের কোথাও কোন তারা কি তাঁর পথ ভুলে আজ বিষণ্ণ হয়ে আছে? কিন্তু আজ তো অন্য কারো এমন হবার কথা নয়! আজ শুধু তাঁরই মন খারাপ থাকবার অধিকার আছে, আর কারো না। আজ রাতে তো আর কেউ হারায়নি তাঁর মতো করে নিজের জীবনের সবচেয়ে প্রিয় অথচ চির-অধরা কাউকে? আজ শুধু তাঁরই মন খারাপ, আজ তাঁর সব হারাবার দিন..! . সেই ছোটবেলায় মামণি’টা কেমন একটা অদ্ভুদ কারণে তাঁর নাম রেখেছিলো ‘অরন্য’! এমন নাম নিয়ে প্রায়ই বড় বেশী অস্বস্তি হতো জীবনে’র, আর তাই ইচ্ছা করেই বাবার রাখা নামটাই বলতো সবাইকে, ‘আমার নাম জীবন’, বলতে কখনো কোন অস্বস্তি হয়নি এতে, কিন্তু অই ‘অরণ্য’! কেমন যেন বিষণ্ণ করে দেয়া নাম একটা! মামণি’কে কখনো জিজ্ঞেস করে বসলে, জবাবে একটা হাসি ছাড়া আর কিছুই বলতো না এই বিষয়ে, খানিকটা লজ্জা, খানিকটা অস্বস্তি আর খানিকটা মামণি’র উপর অর্থ না বলার অভিমান নিয়েই, ‘অরণ্য’ নামটা শুধু মামণি ছাড়া আর কারো কাছে শুনতে চাইতো না ‘জীবন’। তবে একদিন মামণি বলেছিলো বড় অদ্ভুদ একটা হাসি হেসে, ‘অরণ্য’ নাম রাখার পিছনে নাকি কারণ একটাই, তাঁর মনটা যেন অরণ্যের মতো গভীর হয়, জীবনের সব কষ্ট যেন তাতে ধরে যায়, সহ্য করা যায়, কখনো যেন কোন কষ্টে তাঁর মন ভেংগে না পড়ে...! . কথা কয়টার অর্থ আজ খুব ভালো করে বুঝেছে ‘জীবন’। আজ যখন মামণিকে চিরবিদায় জানাচ্ছিলো সে, তীব্র একটা অবিশ্বাস নিয়ে যখন সেই ছোট্ট সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরে মামণিকে শুইয়ে রেখে আসছিলো সে, ফিরবার পথে মাথার উপরের অই রাত্রির আঁধারে পরিপূর্ণ আকাশটা তাঁর সাথে সাথে পথ চলছিলো বিষণ্ণ মনে, বাতাসেরা তাঁর কানে কানে ফিসফিসিয়ে স্বান্তনা দিয়ে যাচ্ছিলো, তখন বুঝতে পারছিলো ‘জীবন’, সত্যিই, একটা অরণ্যের মতো মন থাকলে আজ হয়তো সে বিশ্বাস করতে পারতো, মামণি’টা তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে চিরদিনের জন্যই, যেখান থেকে কেউ ফিরে না, সেখানেই চলে গেছে তাঁকে ভীষণ নিঃসঙ্গ করে দিয়ে, অরণ্যের মতো একটা মন না থাকার জন্য আজ মনটা ভীষণ পুড়তে থাকে ‘জীবনে’র, আজ সত্যিই তাঁর বড় মন খারাপের দিন, এতোদিন কিছুই না থাকবার যন্ত্রণায় পুড়লেও আজ তাঁর সব হারাবার দিন...! . আচমকা কি শিহরণ খেলে যায় ‘জীবনে’র পা-দুটো’য়, জানে না সে, শুধু আবিস্কার করে অবাক নয়নে, পথ ঘুরে আবার সেই মামণি’র চির-নীড়ে’ই এসে দাঁড়িয়েছে ‘জীবন’! কতক্ষণ অবাক হয়ে চেয়ে থেকে অবশেষে হু হু করে কান্নায় ভেঙে পড়ে ‘জীবন’ মামণি’র উপর, মাটির ডেলাগুলো পিষে বুকটা চিড়ে বেরিয়ে আসতে থাকে, ‘মামণি, তুমি ভেবো না, আমি যতোই দূরে যাই, সারাক্ষন কেবল তোমার কথাই ভাববো। গভীর রাতে কেবল তোমার কথাই ভেবে ভেবে আমার ঘুম ভেঙে যাবে, জানালা দিয়ে স্বচ্ছ নীল আকাশের দিকে তাকালে শুধু তোমাকেই খুঁজে পাবো আমি মামণি, বাগানের গাছপালায় যখন হা হা করে বয়ে যাবে বাতাসে’রা, আমি কেবল তোমার কণ্ঠই শুনবো মামণি। জ্যোৎস্নায় যখন ভেসে যাবে চরাচর, আমি শুধু তোমার স্মৃতিতেই ভেসে যাবো, কোথাও যখন ঝুমঝুম করে বৃষ্টিরা ঝরবে আপন মনে, আমি বুঝে নেবো আমার জন্য মামণি’র ভালোবাসারা গলে গলে পড়ছে’...! . আজ অরণ্যের সব হারানোর দিন, হয়তোবা শুধু নিজেকে’ই হারিয়ে ফেলে অরণ্য, আর কিছু নাহ। তবু কেমন যেন একটা বিষণ্ণ সুর আপন মনে গেয়ে চলে দূর থেকে দূরান্তর, “এ জীবন বড় ভালোবেসে...!”

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)