
এটা যেন প্রতিদিনের স্বাভাবিক ঘটনা যে মেয়েরা ইভ টিজিং এর শিকার হবে।ঘর থেকে বেড়োলেই কিছু না কিছু ঘটে।রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় পাশ দিয়ে এক লোক কানের কাছে এমন কিছু বলে গেল যা শুনে গা ঘিনঘিন করতে লাগলো।বাসের পিছনের সিটে বসা ছেলেগুলো সারাক্ষণ কি যেন বলছে।ডিপার্টমেন্টের ছেলে থেকে শুরু করে ক্যান্টিন বয়,কারো কাছেই রেহাই নেই।এমন উত্তক্ত কম বেশি সব মেয়েকেই করা হয়।এর থেকে বাঁচার উপায় কি?
ইসলাম একটা সমাধান দিয়েছে যদিও তা আমাদের মেয়েরা মানতে নারাজ;যেই সমাধানকে আলিঙ্গন করেছে অসংখ্য পাশ্চাত্যের বোনেরাও।এটাও ঠিক যে কিছু মানসিক বিকারগ্রস্থ ছেলে আছে যারা কোনো মেয়েকেই ছাড়ে না।তাই বলে কি কোনোই ব্যবস্থা নেয়া হবে না?নিজের দিক থেকে সর্বোচ্চটুকু চেষ্টা করে তারপর অন্যের উপর দোষারোপ করা যেতে পারে।চোরকে ঠেকাতে দরজা-জানালা বন্ধ তো করতেই হবে।আমার ঘর,আমি দরজা খোলা রাখি কি বন্ধ রাখি এটা আমার ব্যাপার-এমন কাজ করলে তো লাভ হবে চোরেরই।আপনি মাঝখান দিয়ে বেকায়দায় পরে যাবেন।আমি বলছি না সব দোষ মেয়েদের।আমি বলছি অধিকাংশক্ষেত্রেই দোষটা মেয়েদের মাঝেই পাওয়া যায়।
সেদিন অন্য ডিপার্টমেন্টের র্যাগ ডে তে একটা গান বাজছিল “ফেবিকল”।গানটাতে এমন একটা লাইন আছে যে, ‘আমি তান্দুরি চিকেন,আমাকে......।’গান বাজছে।ছেলে-মেয়েরা রাস্তায় পাগলের মত নাচছে।এর মধ্যে একটা মেয়ের দিকে চোখ পড়লো।সে গানের তালে তালে অভিনয় করে নাচছিল।তার অভিনয়টা ছিল এমন যে সে একটা চিকেন খাচ্ছে।তার সাথে একটা ছেলেও নাচছিল।আচ্ছা,এই মেয়েটার সাথে যদি আসলেই তান্দুরি চিকেন এর মত আচরণ করা হয় তাহলে কি মেয়েটা তা মেনে নিবে?অবশ্যই না।কিন্তু মেয়েটা নিজের অজান্তেই হোক,তার অঙ্গভঙ্গিতে বিপরীত লিঙ্গের কাউকে আহবান জানাচ্ছে।এমন আরো প্রচুর গান আছে যেগুলোতে মেয়েদের ভোগের সামগ্রী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।গান গুলোর অধিকাংশই হিন্দী গান।ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও এমন গানে ইনজয় করে নিজেকে ভোগের সামগ্রী হিসেবে তুলে ধরছে বার বার এবং আহবান জানাচ্ছে ছেলেদের।ক্যাম্পাসে এমন প্রচুর দেখা যায় যে কথা বলতে বলতে একটা মেয়ে একটা ছেলের কাধে হাত রাখছে।কিন্তু ছেলেটা হাত রাখতে গেলেই সমস্যা হয়ে যায়।তখনই মেয়েদের অসম্মান করা হয়,মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়!তবে সম্মান আর মর্যাদার সঙগা কি দাড়ালো?
শুনলাম সানি লিওন নাকি বাংলাদেশে আসছে।এর আগেও অনেক ইন্ডিয়ান নায়িকারা এসে নগ্ন ড্যান্স করে গেছে এ দেশের মাটিতে।এই অনুষ্ঠানগুলো কি ছেলেরা একাই ইনজয় করে?গ্যালারি তে তো কেবল ছেলেরাই থাকে না।হাত তালি তো কেবল ছেলেরাই দেয় না।মেয়েরাও থাকে।সুন্দরী প্রতিযোগীতার আধা গজ কাপড় পেঁচানো মেয়েদের দেহ রেংকিং কি শুধু ছেলেরা করে?মেয়েরাও তো এতে শামিল আছে।জিন্স-ফতুয়া পড়ে বের হলেন।পাশ থেকে কমেন্ট আসলো, ‘অস্থির’ কিংবা ‘পুরাই পাংখা’।আপনার খুবই খারাপ লাগলো।একই কমেন্ট আপনার ছেলে বন্ধুটি করলেই আপনার দারুণ লাগে।অথচ দুইটাই ইভ টিজিং।কোনটাতে নিজের মান বাড়ছে আর কোনটাতে অপমানিত হচ্ছি এই বোধটুকুও আজ আমাদের মাঝে অনুপস্থিত।নিজেরাই নিজেদের টিজ করলে কেন অন্যের উপর দোষ চাপাই?
শালীন হওয়ার জন্য খুব বেশি ধার্মিক হওয়ার প্রয়োজন পরে না।এটা নৈতিকতার ব্যাপার যা আমরা আমাদের পরিবার কিংবা সমাজ হতে শিক্ষা পাই।এগুলো কখনোই আমাদের সংস্কৃতির অংশ ছিল না।আমাদের মা বোনদের দিকে তাকালেই আমরা তা বুঝতে পারি।তারাও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়ে একসাথে পড়াশুনা করেছে।কিন্তু তাদের উভয়ের মধ্যে শালীনতা ছিল।কেউ তার সীমা অতিক্রম করেনি কিংবা সীমা অতিক্রম করার সুযোগ দেয় নি।আর আজ আমরা সুযোগ দিয়ে যাচ্ছি।আর যখনই কেউ সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে তখনই আমাদের সম্মানের দাগ লাগছে!বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে এমন বেহায়াপনা কখনোই ছিল না।এমন ইভ টিজিংও আগে ছিল না।যেই বিজাতীয় সংস্কৃতি নিয়ে আমরা এতই মত্ত হয়ে আছি,একবার তাকিয়ে দেখা দরকার সেখানে আসলে কি হচ্ছে।সেখানে প্রতি মিনিটে একজন বোনকে ধ... করা হচ্ছে।আর আমরা সেই পথেই হাঁটছি।ফলস্রুতিতে,আমাদের দেশেও ইভ টিজিং,আত্মহ...,এসিড নিক্ষেপ এবং ধ... চরম হারে বাড়ছে।এটা ঠেকাতে পারি আমরা মেয়েরা নিজেরাই।যদি নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে একটু সচেতন হই।আজ চরম নৈতিক অবক্ষয়ের পাশাপাশি আমাদের বোধশক্তিও লোপ পেয়েছে।কে মান দিচ্ছে আর কে অপমান করছে তাও ধরতে পারছি না।অধিকার চাই বলে স্লোগান দিলেই যে অধিকার মিলে না।সম্মান তো চাইবার বিষয় নয়,সম্মান যে অর্জন করতে হয়।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)