বিবিধ

চাঁদাবাজির আরেকনাম বকশিস-প্রসঙ্গ মোবাইলে টাকা রিচার্জ

চাঁদাবাজির আরেকনাম বকশিস-প্রসঙ্গ মোবাইলে টাকা রিচার্জ
পুলিশ কিংবা সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি সহজে বুঝা যায়, এমনকি দেখাও মেলে। তবে আজকাল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও ঈদ বকশিসের নামে ভালোই চাঁদাবাজি শুরু করলেন! মোবাইলে ১০০ টাকা ভরতে চাইলে ৯৫ টাকা দিয়ে বলবে- “৫ টাকা ঈদের বকশিস”। শুধু তাই না- মুখ দিয়ে যাতে এই কথাও উচ্চারণ করতে না হয়, তাই দোকানের বাইরে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়েছে- “রিচার্জে ৫ টাকা বেশি দিতে হবে” কিংবা লেখা- “২ টাকা বেশি দিতে হবে”। তাছাড়া কোনো কোনো দোকানে বিভিন্ন অঙ্কের টাকার পিছনে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদাবাজি চলছেই। মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো এসব জানে কিন্তু “আমাদের কি?”- এমন মনোভাবে কিছু বলে না। এদিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দোকানের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সাধারণ গ্রাহকের ভোগান্তি হচ্ছে। অনেকের হয়ত মনে থাকার কথা, বেশ কয়েকমাস আগে গণহারে সব দোকানীরা প্রত্যেক রিচার্জ বাবদ নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা কেটে নেয়ার রীতি চালু করেছিলো। যেটা আগে কখনো দেখা যায় নি। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী এসোসিয়েশনের (গভঃ রেজিঃ টিও নং ৮১৮/১২ এবং লাইসেন্স নং ৩৯/২০১২) যুক্তি ছিলো-“বর্তমান বাজার দর হিসাবে অপারেটরগুলো রিচার্জ বাবদ তাদের নায্য কমিশন দেয় না। প্রতি হাজার টাকা রিচার্জে তাদের ২৭ টাকা কমিশন দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের দাবি- হাজার টাকায় ১০০ টাকা কমিশন দিতে হবে”( সেই হিসাবে ১০০টাকায় ১০ টাকা কমিশন)। এ ব্যাপারে বাংলালিংক কোম্পানীর এক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাস করায় তিনি বলেন-“তাদের যত দেয়ার ঠিকই দেয়া হয়, শুধু তাই না- আমরা যখন বিভিন্ন অফার ছাড়ি- সেই বাবদও তারা টাকা পায়, তাহলে তাদের এতো অভিযোগ কিসের”? সুতরাং সবাই সবার বক্তব্য অটল, বিপদে সাধারণ গ্রাহক। এক্ষেত্রে আমার যুক্তি হলো- অপারেটরের সাথে রিচার্জ এসোসিয়েশনের দ্বন্দ থাকলে সেটা তারা পারষ্পারিক আলোচনায় সমাধান করবে কিংবা একটা সমঝোতায় আসবে, কিন্তু তাই বলে-সাধারণ গ্রাহকদের হয়রানি করা হবে কেনো? দ্বিতীয়ত, একটা মানুষ যখন ২০/৩০/৫০ কিংবা ১০০টাকা মোবাইলে ভরার জন্য দোকানীকে বলে, তখন সে মানুষটি এটাই কামনা করে যে পুরো ২০/৩০/৫০ বা ১০০ টাকা তার মোবাইলে আসবে। সে ১৯/২৯/৪৮ বা ৯৫ টাকা পাওয়ার কামনা করে না। সুতরাং গ্রাহকদের কাছ থেকে এক অঙ্কের টাকা নিয়ে তার মোবাইলে আরেক অঙ্কের টাকা রিচার্জ করে ব্যবসায়ী কি ধোঁকা দিচ্ছে না? তাও ঘোষণার মাধ্যমে! মানুষের প্রয়োজনকে পুঁজি করে! হঠাৎ করে রিচার্জ দোকানীদের এমন অপতৎপরতা সহ্য করতে না পেরে স্বেচ্ছায় রিপোর্টিং করতে এলাকার কিছু দোকানীকে এমন প্রশ্ন করি- আমার প্রশ্নে তাদের পাল্টা কিছু বলার ছিলো না। মুখে তালা লেগে গিয়েছিলো। অবশ্য আমার এই পদক্ষেপের কথা আব্বুর কানেও পৌঁছে যায়-এক দোকানী বলে- হুম… আপনার মেয়ে এসে তো ব্যবসায়িক সততা শিখিয়ে দিয়ে গেলো, তা…. খারাপ বলে নাই, ভালোই বলছে। এখন তো তাহলে আপনার কাছ থেকে  আর টাকা কেটে রাখা যাবে না”। এই ঘটনাটা নিজের ঢোল নিজেই পিটানোর জন্য বলিনি। বলেছি- কারণ অনেক সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে আমাদের মধ্যে অহেতুক ভয় কাজ করে, এমনকি নিজেও সেই অন্যায়কে মেনে নেই। যদিও একটু সাহস করে বললেই হয়। অপরপক্ষের টনক নাড়ানো দরকার। জানি, অনেকে হয়ত বলতে পারেন- “মাত্র ২ টাকা/ ৫ টাকার জন্য এতো কাহিনী করার কি দরকার? সামান্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা একটু টাকা নিলো তো কি হয়েছে”?  আসলে আমাদের এমন মানসিকতা মানুষকে ছোট থেকে বড় দূর্নীতির দিকে ঠেলে দেয়। উদারতা কিংবা দানশীলতা যদি দেখাতেই হয় তবে উপযুক্ত খাতে দেখানো উচিত। এ ক্ষেত্রে বিখ্যাত সাহাবী হযরত আ’ব্দুল্লাহ ইবনে ঊ’মার রাঃ এর ঘটনাটা বললে বোধ হয় যথার্থ হবে। তিরমিজি ও ইবনে মাজা হাদিস গ্রন্থে বর্ণিত, বাজারে গিয়ে আ’ব্দুল্লাহ ইবনে ঊ’মর রাঃকে মাত্র চল্লিশ পয়সার জন্য দরকষাকষি করতে দেখে জনৈক সাহাবী ওনার এমন কৃপণতা মেনে নিতে পারলেন না। পরে তিনি ঊনার পিছু নিয়ে বাসা পর্যন্ত গিয়ে দেখলেন- ইবনে ঊ’মর দুই জন দরিদ্র ব্যক্তিকে একটি করে স্বর্ণমুদ্রা দান করলেন। ঊনার বাজার নীতি আর বাড়িতে এসে এরূপ দান করার নীতি জনৈক সাহাবীকে ভাবিয়ে তোলায় তিনি ইবনে ঊ’মারকে এরূপ আচরণের কথা জিজ্ঞেস করেন। এবং ইবনে ঊ’মর  বেশ চমৎকার জবাব দেন।  তিনি বলেনঃ “বাজারের ঐ আচরণের কারণ ছিলো ব্যবসা-বাণিজ্যের মৌলিক ভিত্তি তথা আস্থা ও সততার সংরক্ষণ, মিতব্যয়িতা সাধন ও বিচক্ষণতার বাস্তবায়ন। এটা কৃপণতা বা নীচুতা ছিলো না। আর বাড়িতে যা ঘটেছে তা ছিলো অন্তরের মমত্ববোধ, রূহের পরিপূর্ণতার প্রতিফলন। ওটা যেমন কৃপণতা নয় এটাও তেমন অপচয় নয়”। সুতরাং, দান করতে হলেও উপযুক্ত খাতে দিতে হবে। পরোক্ষভাবে কারো হাত কেটে ফেলা দানশীলতা নয়। এদিকে অর্থনীতির বইতে কিংবা পত্রিকার অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে আমরা প্রায় পড়ে থাকি- চলমান বাজারের নীতি হচ্ছে- পণ্যের ঘাটতি স্বত্ত্বেও যখন চাহিদা প্রচুর থাকে তখন জিনিসের দাম বেড়ে যায়। তথা ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া জাতীয় কিংবা ধর্মীয় কোনো অনুষ্ঠান হলে তো কথাই নাই। যদিও এটা কোনো সৎ ব্যবসায়িক নীতি নয়, বরং বলবো- এটা মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে পকেট পূর্ণ করা- যেটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। সুতরাং, অনৈতিক কাজে আমরা যাতে অভ্যস্ত না হয়ে পড়ি- সেই লক্ষ্যে নিজেকে পরিবর্তনের পাশাপাশি চাঁদাবাজির নামে বকশিসের নীতিও প্রতিবাদ করে নির্মূল করতে হবে।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন