বিবিধ

রেখে যেতে চাই এক ফুলেল কর্মক্ষেত্র

রেখে যেতে চাই এক ফুলেল কর্মক্ষেত্র
ঈদ মানে খুশী, ঈদ মানে সুন্দরের মিলনমেলা যা কিনা বার বার ফিরে আসে। মুসলিম জাতির জন্য ঈদ সত্যি এক মহা আনন্দ উৎসবের দিন। আর এই ঈদকে কেন্দ্র করে আমরা কত রংবেরঙের আয়োজন করে থাকি। চাই এই আনন্দ সবার মাঝে ভাগাভাগি করে নিতে। এদিন ধনী-গরীব, উঁচু-নিচু কোন ভেদাভেদ থাকতে নেই। সবাই সবার সাথে  বুকে বুক মিলিয়ে যেন এক খুশীর জয়গান গাইতে শিখি। এক মাস রোযা পালন আমাদের সেই ঐক্যের বানী-ই শিখায়। কারন হাজার ত্যাগ-তিতীক্ষা আর সংযমের মাধ্যমেই আমরা রমযানকে বরন করে নেই। মাস ব্যাপী চারদিকে এক পবিত্র আর রহমতের হাওয়া বইতে শুরু করে । যেন সারা মাস ব্যাপী সারাদিন উৎসব আর সন্ধ্যার পর তা উদযাপন! সকাল-সন্ধ্যায় এমনকি রাত জেগে আল্লাহ্‌র বান্দারা নিমগ্ন চিত্তে তার মহান রবের রহমতের ফল্গুধারা সিঞ্চন করতে চায় । রোযা মুসলমানদের চরিত্রে নিয়ে আসে অনেক চমৎকার কিছু গুনের সন্নিবেশ। কিন্তু সত্যিকার অর্থে রোযার শিক্ষা শুধু একমাসের জন্য নয়। আবার ঈদের আনন্দের সাথে স-ব ভুলে যাওয়াও নয়। এ শিক্ষা নিজের জীবনে সর্বদা বদ্ধমূল করে নিতে হয়। সারা বছর মাফিক আমরা যদি সেই আদর্শে নিজেদের জীবন গড়ে নিতে পারি তবেই আমাদের রোযা সার্থক হয়েছে বলে মানতে হবে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি ঈদের পরে নয় বরং রোযা শেষের দিকে আসতেই আমরা যেন স-ব ভুলে যেতে চাই। মহীয়ান মাসের গুরুত্ব শিকেয় তুলে দিতে চাই। অথচ রাসুলের (সাঃ) এর জীবন থেকে শিখেছি রমযানের শেষ দশদিন তিনি কোমরে কাপড় শক্ত করে বেঁধে  মহান আল্লাহ্‌র উপাসনায় নেমে পড়তেন, যা তিনি সারা বছরেও এতটা করতেন না। কারন এই দশদিনে আছে ক্ষমার ভান্ডার, হাজার মাসের মহিমান্বিত রাত, ইতিকাফ,যাকাত-ফিতরের দান  সহ আরো কত কি! কার্যত আমরা মুসলিম সমাজ এই শিক্ষা থেকে অনেক পিছিয়ে আছি এখনও। কারন ঈদের আসল প্রস্তুতি চলে রোযার এই শেষ দশদিন ব্যাপী। ঈদের কেনা-কাটা, বাড়ি যাওয়ার টিকিট কেনার ধুম, বিউটিফিকেশন, ঘর-দোর সাজান-গোছান, ঈদ বাজার, দাওয়াত আরো অনেক কিছু। ক্রমে ম্লান হয়ে আসে আমাদের রমজানের মহান শিক্ষা। তবে এসব কাজ মোটেও নাজায়েজ নয় যদি আল্লাহ্‌র হক সঠিক ভাবে আমরা চিন্তা করে বাস্তবায়ন করতে শিখি। কিন্তু এতসব আয়োজনের ভিড়ে অনেকেই ফরজ রোযা ছেড়ে দিচ্ছি, নামাজ বাদ দিয়ে দিচ্ছি, ইবাদত থেকে বের হয়ে আসছি। প্রতিযোগীতায় নেমে পড়ছি কার ঈদ স্পেশাল কতটা আকর্ষণীয় করতে পারি। নিজের জন্য ঈদের বাজেট বিশাল অংশ রাখলেও ভুখা-নাঙাদের জন্য বরাদ্ধ রাখি যৎসামান্য কিছু অর্থ। এতে কি আমার অন্যায় হচ্ছে না? আমার কারনে কি সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে না? আবার অনেকেই গর্বের সাথে  বলে থাকেন ইসলামের রেওয়াজ অনুযায়ী  ঈদে নতুন পোশাক পড়তে হয়। তার মানে এটা নয় আপনার পাঁচটা ড্রেস থাকা সত্ত্বেও আপনি নতুন একটা ড্রেস কিনে নিয়ে আসবেন। আর এটা অবশ্যই অপচয়ের মধ্যে পরে যায়। কারন  আমরা জানি রাসুল (সাঃ) ঈদে উত্তম পোশাকই পরতে বলেছেন।আমার প্রয়োজন না হলে সেই পাঁচটার মধ্যে যেটা উত্তম সেটাই পড়া বাঞ্ছনীয়।তবে যদি কেউ অন্যের হক যথাযথ আদায় করে নিজের জন্য কিছু নেয়ার সামর্থ্য রাখেন এতে দোষের কিছু নেই। আর ইসলামের এসব ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষ সমাজে সবার সমান হয়ে উঠার জন্য খুব সহজেই অনেক অন্যায়ের সাথে আপোষ করে নিচ্ছে । আর এই সমাজ মানুষকে কি  নানারকম অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে না? এরপর আসি আর এক জটিল ইস্যু নিয়ে। ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে শুরু হয়ে যায় ঈদ বোনাস অথবা বকশিশের নামে এক প্রকার অন্যায়। কিন্তু আমরা জানি বকশিশ মূলত তাই- যা কেউ যে কোন কারনে কারো উপর সন্তুষ্ট হয়ে বিনা চাপে প্রদান করে থাকে। যেটা মানুষের উপর  জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয় সেটা কখনো বকশিশ হতে পারেনা। কিন্তু এই রসমে গাড়ির টিকিটের দাম ডাবল, গাড়ি ভাড়া দ্বিগুণ, খাবারের দাম বাড়তি, পোশাক- কসমেটিকের ঈদ উপলক্ষে দাম সবসময়ই আকাশ চুম্বি হয়ে থাকে। এমনকি বিকাশে টাকা লেনদেন করতে গেলে ব্যাংক একটা নির্দিষ্ট চার্জ কেটে রাখার পরও এজেন্টরা আরো একটা অংশ বখশিশ হিসেবে রেখে দিচ্ছে। তবে যার সামর্থ্য আছে তার দারোয়ানের বোনাস, কাজের মানুষের বোনাস, মালীর বোনাস, পরিবারের সাথে  অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের খরচে হয়ত এই বাড়তি খরচে খুব বেশি বেগ পেতে হয় না। তাই বলে সবার পক্ষে এত মানুষের বকশিশের চাহিদা মিটানো অনেক সময় দুঃসাধ্য হয়ে উঠে। এজন্য নিম্নবিত্ত অথবা স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে এটা এক প্রকার জুলুম বৈ কিছুই মনে হয়না। কোথায় যেন পড়েছিলাম, কোন  কোন মুসলিম দেশে বেশি সওয়াব পাবার আশায় রমযান মাস আসলেই জিনিস পত্রের দাম কমিয়ে দেয়া হয়। যাতে রমযানের সাথে তারা একাত্মতা ঘোষণা করতে পারে। আহ্! কবে হবে আমাদের এমন শিক্ষা?   আসলে কি জানেন? ‘সমাজ কখনো খারাপ মানুষের দ্বারা বিনষ্ট হয়না, সমাজ ধবংস হয় ভাল মানুষের নিষ্ক্রিয়তার দরুন’। আমরাই তো সমাজ গড়ি তাই না? আসুন না কয়েকজন ভাল মানুষের দ্যুতি আর প্রচেষ্টায় সমাজের এসব বস্তাপঁচা নোংরাগুলা সব নর্দমায় ফেলে দেই। গড়ে তুলি সুন্দর আর আলো ঝলমলে এক অনির্বাণ সমাজ ব্যবস্থা। সেই সমাজের জন্য  বীজ বপনের কাজ করতে পারি আমরা-ই। আর অনাগত প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে চাই এক ফুলেল কর্মক্ষেত্র। যা কিনা আমাদের চোখের সাথে  সাথে অন্তরকেও শীতল করে দিতে পারে।।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন