
মানবতার ডাকেই নরওয়ের ডাক্তার ম্যাড গিলবার্ট ছুটে গিয়েছেন গাজার আস- শিফা হাসপাতালে । দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন এই মানবতাবাদি চিকিৎসক । গত রাতে গাজায় জায়নবাদী ইসরাইলের বর্বর হ...যজ্ঞের পর তিনি এক খোলা চিঠিতে সেই হ...কাণ্ডের বর্ননা করেছেন। মিডল ইষ্ট মনিটর থেকে সেটি অনুবাদ করেছেন, নাজমী নাতিয়া।
প্রিয়তম বন্ধুগন,
গত রাতের তীব্রতা সমস্ত মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। গাজায় স্থল আক্রমণের পরিণতি শুধু যত্র তত্র কাটা ছেঁড়া শরীর, গাড়িভর্তি আহত, দ্বিখণ্ডিত, রক্তে ভেজা, মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে যাওয়া ফিলিস্তিনি মানুষগুলো। যারা সাধারণ, যারা নিষ্পাপ। যাদের বয়স কোন বাঁধা সৃষ্টি করতে পারেনি।
গাজার এম্বুলেন্সগুলোতে, সব কয়টি হাসপাতালে বীরসন্তানেরা ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার শিফটে একনাগাড়ে কাজ করে যাচ্ছে। অমানবিক পরিশ্রম আর নিঃশেষ হয়ে আসা মানুষিক শক্তির দরুন তারা বিবর্ণ হয়ে উঠছে। তারা প্রত্যেকে গত চার মাস ধরে বিনা পারিশ্রমিকে সেবা দিয়ে আসছে শিফা হাসপাতালে। তারা যত্ন নিচ্ছে, তটস্থ থাকছে এই ভেবে কার আগে কাকে চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। তারা বিশৃঙ্খলভাবে পরে থাকা দেহের, আঁকারের, অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বোধাতীত বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে নিস্তেজ, অক্ষম, রক্তাক্ত অথবা অসাড় মানুষগুলোকে জানতে। মানুষগুলোকে!
এ মুহূর্তে, আরো একবার "বিশ্বের সবচেয়ে নীতিবান সৈন্যবাহিনী" দ্বারা পশুর মত নিপীড়িত হচ্ছে মানুষগুলো ( এটাই হচ্ছে!)

আহতদের প্রতি আমার অপার সম্মান। কস্ট, অভিঘাত আর যন্ত্রণার মাঝেও তাদের এই অসাধারণ দৃঢ়চিত্তের প্রতি আমার সম্মান। কর্মচারী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য আমার তারিফ অবিরাম। ফিলিস্তিনি “সুমদের” (ধৈর্য) প্রতি আমার ঘনিষ্ঠতা আমাকে শক্তি দেয় যদিও মাঝে মাঝে এর এক একটি ঝলকে আমার চিৎকার করে উঠতে ইচ্ছে করে। কাউকে শক্ত করে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে করে। রক্তে জড়ানো ওই উষ্ণ কোমল শিশুর ত্বক ও চুলের গন্ধ নিতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে, অনন্তকালের জন্য শক্ত আলিঙ্গনের মাধ্যমে নিজেদের রক্ষা করতে কিন্তু আমাদের যেমন সে সামর্থ্য নেই, তাদেরও নেই।
ধূসর-বিবর্ণ চেহারাগুলো। আহ, আর না। আর দেখতে চাইনা শত রক্তাক্ত- বিকলাঙ্গ শরীরের বোঝা। আমাদের ই আর এর ফ্লোর অনেক আগে থেকেই রক্তে ভেসে যাচ্ছে। গাদা গাদা ভেজা গলা ব্যান্ডেজ এখনো পরিস্কার করা বাকি। ওহ। চারিদিকে শুধু ক্লিনাররা রক্ত সেচছে, ব্যবহৃত টিস্যু, চুল, ক্যানুলা আর মৃতদেহের উচ্ছিষ্ট সরিয়ে নিচ্ছে। সব সরিয়ে নেয়া হচ্ছে নতুন করে শুরু করবার জন্য। গত চব্বিশ ঘন্টায় একশোরও বেশি কেস এসেছে সিফাতে। একটা বড় ভালভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাসপাতালের জন্য যা যথেষ্ট। কিন্তু এখানে তো কিছুই নেই। ইলেক্ট্রিসিটি নেই, পানি নেই, ডিস্পোসেবোলস, ড্রাগ, ও আর টেবিল, যন্ত্রপাতি, মনিটর সব পুরনো মরিচা ধরা যেন অতীতের কোন হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। অথচ তারা কেউ অভিযোগ করছেনা। তারা সাহসী যোদ্ধার মত এগুলো দিয়েই চালিয়ে নিচ্ছে। মাথা উঁচু করে অতিশয় অটল চিত্তে।

আর আমি যখন তোমাদের কাছে এটি লিখছি, একা শূন্য বিছানায়, আমার চোখের বাঁধ মানছেনা। কিছু না করতে পারার যন্ত্রনা আর ক্ষোভ, রাগ আর ভয় উষ্ণ পানি হয়ে ঝরে পড়ছে। এটা হতে পারেনা।
এবং এখন, এইমাত্র, ইসরাইলি যুদ্ধযন্ত্রের বাদকদল আবার তাদের ভয়াবহ ঐকতান শুরু করে দিয়েছে। ঠিক কিছুক্ষণ আগে নৌবাহিনীর কামানের গোলা তীরে আঁচরে পরেছে। এফ১৬ এর গর্জন, ড্রোন ('Zennanis') আর বিশৃঙ্খল Apaches। যার বেশিরভাগই ইউ এস এ তৈরি এবং তাদেরই দেয়া।

মিস্টার ওবামা- আপনার হৃদয় বলে কি কিছু আছে?
আমি আপনাকে এক রাতের জন্য নিমন্ত্রন করছি, শুধু একটি রাত আমাদের সাথে সিফায় কাটিয়ে দেখু...। একজনের পরিছন্ন কর্মীর ছদ্মবেশেই নাহয়?
আমার ১০০ % বিশ্বাস এর মাধ্যমে ইতিহাস বদলে যাবে।
কোন হৃদয়বান এবং ক্ষমতাধর মানুষের পক্ষেই রাতের সিফা ছেড়ে আসা সম্ভব নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সে দৃঢ় সঙ্কল্প গ্রহন করছে ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্মম হ...যজ্ঞের উপসংহার টানতে।

কিন্তু এই নির্দয় আর নিষ্ঠুর ক্ষমতাধরেরা তাদের হিসাবনিকাশ চুকিয়ে ফেলেছে। তারা গাজায় আরেকটি “দাহিয়া” আক্রমণের পরিকল্পনা করেছে।
আগামী রাতগুলোতে রক্তের নদী বঅহমান থেকে যাবে। আমি শুনতে পাচ্ছি, তারা তাদের অস্ত্রে শাণ দিচ্ছে।
দয়া করে যা পারো কর। এটা, এই হ...যজ্ঞ, কিছুতেই চলতে পারেনা।
Mads Gilbert MD PhD
Professor and Clinical Head
Clinic of Emergency Medicine
University Hospital of North Norway
Source: BDToday.net
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)