ধর্ম ও গবেষনা

শবে ক্বদরের রাতগুলো ডাক দিচ্ছে নাজাতের

শবে ক্বদরের রাতগুলো ডাক দিচ্ছে নাজাতের
প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। পবিত্র রমজানের প্রাণ বা হৃদয় হলো শবে কদর। আরবিতে 'কাদর' শব্দটির অর্থ হচ্ছে পরিমাপ। এই রাতে কি পরিমাপ করা হয়? এর উত্তর হল: কতটা সৌভাগ্য বা বরকত বণ্টন করা হবে সারা বছরের জন্য- তাই পরিমাপ করা হয় সৌভাগ্যের এই রাতে। কতটা সৌভাগ্য বা বরকত বরাদ্দ করা হয়? এর উত্তর হল: আপনি যতটা চান ততটাই বরাদ্দ করা হয়। কারণ, এই রাতে যিনি দান করেন তিনি হলেন অফুরন্ত কল্যাণ ও বরকতের অধিকারী অসীম দয়ালু ও দাতা মহান আল্লাহ। কেউ যদি কম চায় তাহলে তো কেউই তাকে বেশি দেয় না। মহান আল্লাহর কাছে কেউ যদি কম চায় তাহলে তা আল্লাহর জন্য এক ধরণের অবমাননাকর বিষয়। ধরুন একজন মহারাজা এক বিশেষ দিনে বলছেন, আজ যে যা চাইবে তাকে তা-ই দেয়া হবে। শত শত বা হাজার হাজার স্বর্ণমুদ্রা ও হীরা-জহরত দেয়া হবে চাওয়া মাত্রই। এ অবস্থায় কেউ যদি বলেন আমাকে কয়টা রূপার মুদ্রা দেন। রাজা তাকে অপমান করা হচ্ছে ভেবে তাড়িয়ে দিতে পারেন প্রাসাদ থেকে অনেক দূরে। শবে কদরের রাতে কেউ যদি প্রতিজ্ঞা করে, হে আল্লাহ আমি আর মিথ্যা কথা বলবো না, আমি আর গিবত করবো না। তাহলে মহান আল্লাহ তার এই সৎ সিদ্ধান্তের আলোকে তাকে সারা বছর ধরে সম্মান ও মর্যাদা দানের ব্যবস্থা করবেন এবং তার রুটি-রুজিতেও দেবেন বরকত। কেউ যদি এ রাতে সিদ্ধান্ত নেয় যে আমি যথাসম্ভব দরিদ্র ও ইয়াতিমদের সহায়তা করবো এবং দূরে সরে যাওয়া আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেব, তাহলে আল্লাহও তাকে এই সৎ সিদ্ধান্তের আলোকে সারা বছর ধরে নানা পুরস্কার দেবেন। মোট কথা এই রাতে যে যত বেশি ভাল কাজ করার ও পাপাচার বা বদ-অভ্যাস বর্জনের সিদ্ধান্ত নেবে আল্লাহ তাকে ততই বরকত দেবেন গোটা এক বছর ধরে। তবে এ রাতে বড় বড় সৎকর্মের বা মহত কাজের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও যদি কেউ হাত গুটিয়ে বসে থাকে এবং এইসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বাস্তব কোনো পদক্ষেপ না নেয় তাহলে কাঙ্ক্ষিত পুরস্কার বা উন্নতি তার ভাগ্যে জুটবে না। শবে কদরের রাতে কেউ অতীতের পাপের জন্য ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তা ক্ষমা করেন। কিন্তু এরপর আবার পরের দিন থেকে একই বা নতুন নতুন নানা পাপে জড়িয়ে পড়লে বাস্তবে শবে কদর থেকে সে কিছুই অর্জন করতে সক্ষম হল না। আল্লাহ সব সময়ই দয়ালু। কিন্তু তাই বলে তাঁর দয়াকে পাপ করার অবাধ লাইসেন্স হিসেব গ্রহণ করা ধৃষ্টতা ও বোকামি ছাড়া আর কিছুই হবে না। একবার এক যুবক আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ.)'র কাছে এসে জানান যে, পাপ বর্জন করা আমার জন্য খুবই কঠিন; এখন এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী? আলী (আ.) তাকে তিরস্কার করে বলেন: ৫ টি শর্ত পূরণ করতে পারলে যত খুশি পাপ করো। এই ৫ টি শর্ত হলো: প্রথমত আল্লাহর দেয়া রিজিক ভোগ করবে না, দ্বিতীয়ত আল্লাহর রাজ্য থেকে বেরিয়ে যাও, তৃতীয়ত এমন এক জায়গা খুঁজে নাও যেখানে আল্লাহ তোমাকে দেখবেন না, চতুর্থত এমন ক্ষমতা অর্জন করো যাতে করে মৃত্যুর ফেরেশতাকে তোমার জান কবজে বাধা দিতে পার এবং পঞ্চমত এমন শক্তি অর্জন করো যাতে দোযখের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা 'মালিক' তোমাকে দোযখে ছুঁড়তে চাইলে তুমি তা প্রতিরোধ করতে পারো। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে-এই ৫ শর্ত পূরণ করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন: যারা ঈমান আনে ও নেক কাজ করে, আল্লাহ তাদের পাপ পরিবর্তন করে দেবেন পুণ্যের মাধ্যমে। (২৫:৭০) মানুষের বোঝা উচিত তার মূল্য কত বেশি। দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী কিছু সম্পদ ও চাকচিক্যের মোহে পরকালের অসীম জীবনকে বরবাদ করা হবে চরম বোকামি। অথচ আমরা সামান্য মূল্যে আমাদের ঈমান ও ধর্মকে বিকিয়ে দিচ্ছি। মহান আল্লাহ আমাদেরকে বেহেশত ও চরম সৌভাগ্য দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন অথচ আমরা সেদিকে ভ্রুক্ষেপও করছি না। এমনকি শবে কদরের মত সৌভাগ্যের সুবর্ণ সুযোগগুলোকেও হাতছাড়া করছি উদাসীনতার কারণে। মানুষ হচ্ছে এমন এক সত্তা যার প্রাণ ও ঈমানের মূল্য একমাত্র আল্লাহই দিতে পারেন। তাই বেহেশতের চেয়ে কম মূল্যে তা বিক্রি করা উচিত নয়। কবি নজরুল বলেছেন: আল্লাহর কাছে আমরা যেন কখনও ক্ষুদ্র কিছু না চাই এবং আমাদের উচিত চাপরাশির তকমার চেয়ে তলোয়ারকে বড় মনে করা । আইআরআইবি.কম থেকে।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)