ধর্ম ও গবেষনা

রমজানঃ নাজাতের বার্তা নিয়ে ঐশী অতিথী

রমজানঃ নাজাতের বার্তা নিয়ে ঐশী অতিথী
পবিত্র রমজানের রাত্রি জাগরণের সময় জ্ঞান-সাধনা ও আল্লাহর গুণগুলো নিয়ে ভাবনা-চিন্তার কথা আমরা বলেছিলাম। আমরা জেনেছি যে আল্লাহ নিজেকে আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডলীর নূর বলে উল্লেখ করেছেন যার একটি অর্থ হতে পারে জ্ঞান ও প্রজ্ঞাময়তা। ইসলাম জ্ঞান অর্জনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। মহানবী (সা.) বলেছেন, জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে চীনে যাও। মহান আল্লাহর নানা নাম থেকেই স্পষ্ট যে তিনি দয়াশীল রাহিম, জাওয়াদ বা দানশীল, ক্ষমাশীল বা গাফুর, মহানুভব বা আজিম, রিজিকদাতা বা রাজ্জাক, প্রজ্ঞাময় বা হাকিম, দোষ-ত্রুটি গোপনকারী বা সাত্তার, বিজয়ী বা কাহহার, ধৈর্যশীল বা সাবুর, ন্যায়বিচারক বা আদিল, জ্ঞানী বা আলিম ইত্যাদি। তাই মহাপুরুষদের আচার-আচরণ বা চরিত্রেও এইসব নাম ও গুণের প্রভাব দেখা যায়। তবে আল্লাহর এইসব গুণের যে মাত্রা তা হল অসীম ও অকল্পনীয়। কিন্তু মানুষের মধ্যে এইসব গুণ সসীম। কুরআন ও হাদিস অধ্যয়ন ছাড়া মহাপুরুষদের জীবনী অধ্যয়নও মহান আল্লাহকে চেনার এবং তাঁর নৈকট্য অর্জনের পন্থাগুলো জানার অন্যতম মাধ্যম। রমজানে পাপ বর্জন ও গুনাহগুলো মাফ করিয়ে নেয়া ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য অর্জন সম্ভব নয়। তার আগে জানতে হবে গুনাহগুলোর ধ্বংসাত্মক পরিণতি ও গুনাহর নানা কারণ এবং প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে। আর এ জন্যও মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে আকুলভাবে। দোয়া-ই কুমাইলে বলা হয়েছে: হে আল্লাহ ! আমার ঐসব পাপ ক্ষমা করে দাও যা’ সংযমের বাঁধ ভেঙ্গে দেয় । সংযমবিধ্বংসী পাপগুলো হল: মদ ও নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন, জুয়া খেলা, তামাশা ও বিদ্রূপপূর্ণ খেলায় অংশ নেয়া, অন্য মানুষের দোষ-ত্রুটি নিয়ে গল্প করা এবং সন্দেহবাদী ও নাস্তিকদের সাথে ওঠাবসা করা ইত্যাদি। (আনিসুল লাইল,ইমাম জাফর সাদিক) একই দোয়ায় বলা হয়েছে: হে আল্লাহ ! আমার ঐ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দাও যা’ দুর্যোগ ডেকে আনে। দুর্যোগ-ডেকে-আনা পাপগুলো হল চুক্তি ভঙ্গ করা, লজ্জাজনক কাজ প্রকাশ করা, আল্লাহর স্পষ্ট নির্দেশের বিপরীত রায় দেয়া, জাকাত দিতে অস্বীকার করা বা বাধা দেয়া, মাপে কম দেয়া ইত্যাদি। (মালবুবি) দোয়া-ই কুমাইলে আরো বলা হয়েছে: হে আল্লাহ! আমার ঐ সব পাপ ক্ষমা করে দাও যা’ তোমার নিয়ামতগুলোকে গজবে পরিবর্তিত করে দেয় । এ জাতীয় পাপের কিছু দৃষ্টান্ত হচ্ছে: মানুষের সাথে অন্যায় আচরণ করা, একজন আলেমকে চুপ করিয়ে দেয়া বা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করা, আল্লাহর রহমতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হওয়া এবং আল্লাহর সাথে শরীক করা, নিজের দারিদ্র প্রচার করা, আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হওয়া ও আল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা ইত্যাদি। (ইমাম জাফর সাদিক,আনিসুল লাইল) একই দোয়ায় বলা হয়েছে: হে আল্লাহ ! আমার ঐসব পাপ ক্ষমা করে দাও যা’ দোয়া কবুল হবার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এ জাতীয় কিছু পাপ হল: বিকৃত ঈমান পোষণ, দোয়া কবুল হবার ব্যাপারে অবিশ্বাস, ভাইয়ের প্রতি মুনাফেকি, সময়মত নামাজ না পড়া, বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন না করা ইত্যাদি। ( প্রাগুক্ত। ) দোয়া-ই কুমাইলে আরো বলা হয়েছে: হে আল্লাহ! আমার ঐ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দাও যা’ দুর্ভাগ্য বা কষ্ট ডেকে আনে । এ জাতীয় কিছু পাপ হল: যারা কষ্টে আছে তাদের সাহায্য না করা, নির্যাতিত ব্যক্তি- যারা সাহায্য প্রার্থনা করছে- তাদের রক্ষার জন্যে অগ্রসর না হওয়া এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের প্রতিরোধের বিরোধিতা করা ইত্যাদি। (ইমাম যেইনুল আবেদীন, আনিসুল লাইল। ) পুনরায় বলা হয়েছে: হে আল্লাহ আমার ঐ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দাও যা আশাকে বিনষ্ট করে দেয়। এ জাতীয় কিছু পাপ হল: আল্লাহর অনুগ্রহের ব্যাপারে নিরাশ হওয়া, আল্লাহর ক্ষমাশীলতায় আস্থা না রাখা, আল্লাহর পাশাপাশি অন্য কারো ওপর ভরসা করা এবং আল্লাহর প্রতিশ্রুতিতে অবিশ্বাস করা। (ইমাম জাফর সাদিক) একই দোয়ায় বলা হয়েছে: হে আল্লাহ আমার কৃত সমস্ত পাপ ও ত্রটি ক্ষমা করে দাও।   আইআরআইবি.কম থেকে।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)