
ধর্ম ও গবেষনা
দ্বীন-শরীয়াত আর মুসলিম জাতির ঐক্য

দ্বীনঃ
ধর্ম সম্বন্ধে কথাবার্তা বলার সময় আমরা এ দু’টি শব্দ প্রায়ই শুনে থাকি – দ্বীন ও শরীয়াত। কিন্তু অনেক কম লোকই এ দু’টি শব্দের অর্থ ও তাৎপর্য ভালো করে জানে। যার দরুন প্রায়ই দ্বীনকে শরীয়াতের সাথে এবং শরীয়াতকে দ্বীনের সাথে মিলিয়ে মিশিয়ে একাকার করে দেয়া হয় যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
দ্বীন (دين ) শব্দের কয়েকটি অর্থ। প্রথমতঃ শক্তি, কর্তৃত্ব, হুকুমাত, রাজত্ব, আধিপত্য এবং শাসন-ক্ষমতা। দ্বিতীয়তঃ এর সম্পূর্ণ বিপরীত যথাঃ নীচতা, আনুগত্য, অধীনতা, গোলামি এবং দাসত্ব। তৃতীয়তঃ হিসেব করা, ফয়সালা দেয়া এবং যাবতীয় কাজের প্রতিফল দেয়া। পবিত্র কুরআনে “দ্বীন” শব্দটি এ তিন প্রকার অর্থেই ব্যবহার করা হয়েছে।
অর্থাৎ আল্লাহর কাছে তা-ই হলো একমাত্র দ্বীন যাতে মানুষ শুধু আল্লাহ তাআলাকেই শক্তিমান মনে করা হয় এবং তাঁকে ছাড়া আর কারো সামনে নিজেকে নত মনে করা হয় না। কেবল আল্লাহকেই মনিব, মালিক, বাদশাহ এবং রাজাধিরাজ বলে মানবে এবং তিনি ছাড়া আর কারো কাছে হিসেব দেওয়ার পরোয়া করবে না; অন্য কারো কাছে প্রতিফল পাবার আশা করবে না এবং আর কারো শাস্তির ভয় করবে না। এ দ্বীনের নামই ‘ইসলাম’। নিখিল পৃথিবীতে আসল শক্তিমান ও সম্মানিত সত্তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই। আল্লাহ ছাড়া আর কারো আধিপত্য নেই, বাদশাহী নেই।
সূরা আল-ইমরানের ৬৪-৬৫ নং আয়াতঃ
“বলো, “হে আহলে কিতাব! এসো এমন একটি কথার দিকে যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে এক। তা হচ্ছেঃ আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো বন্দেগী ও দাসত্ব করবো না। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবো না। আর আমাদের মধ্যে কেউ আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও নিজের রব হিএসেবে গ্রহণ করবে না।” যদি তারা এ দাওয়াত গ্রহণ করতে প্রস্তুত না হয় তাহলে পরিস্কার বলে দাও,”তোমরা সাক্ষী থাকো, আমরা অবশ্যই মুসলিম (একমাত্র আল্লাহর বন্দেগী ও আনুগত্যকারী)””
অর্থাৎ আল্লাহর আধিপত্য ও প্রভূত্ব ছেড়ে যে ব্যক্তি অন্য কাউকে নিজের মালিক এবং আইন রচয়িতা বলে স্বীকার করে, তার গোলামী কবুল করে এবং তাকে কাজের প্রতিফলদাতা মনে করে, তার এ দ্বীনকে আল্লাহ তাআলা কখনোই কবুল করবেন না। কারণঃ
“মানুষকে আল্লাহ তাঁর নিজের বান্দাহ করে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কারো বন্দেগী করার আদেশ মানুষকে দেয়া হয় নি। তাদের একমাত্র অবশ্য কর্তব্য এই যে, সকল দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে শুধু আল্লাহর জন্যই নিজের দ্বীন- অর্থাৎ আনুগত্য ও গোলামিকে নিযুক্ত করবে, একমুখী হয়ে তাঁরই বন্দেগী করবে এবং শুধু তাঁরই হিসেব করার ক্ষমতাকে ভয় করবে।” –আল-বাইয়্যেনাঃ৫
“মানুষ কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো গোলামি ও হুকুম পালন করতে চায়? অথচ প্রকৃতপক্ষে আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত জিনিসই কেবলমাত্র আল্লাহর একান্ত গোলাম ও হুকুম পালনকারী এবং এসব জিনিসকে তাদের নিজেদের হিসাব-কিতাবের জন্য আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে যেতে হবে না। তবুও মানুষ কি আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত জিনিসের বিরুদ্ধে আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া আর কোন পথ অবলম্বন করতে চায়?” - সূরা আল-ইমরানঃ৮৩
“আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে ইসলামী জীবনব্যবস্থা ও সত্যের আনুগত্যের ব্যবস্থা সহকারে এজন্য পাঠিয়েছেন যে, তিনি সকল ‘মিথ্যা খোদা’র খোদায়ী ও প্রভুত্ব ধ্বংস করে দিবেন এবং মানুষকে এমনভাবে মুক্ত করবেন যে, তারা আল্লাহ ছাড়া আর কারো বান্দা হবে না, কাফের আর মুশরিকগণ নিজেদের মূর্খতার দরুণ যতই চিৎকার করুক না কেন এবং একে ঘৃণা করুক না কেন” –সূরা আস-সফঃ৯
“তোমরা সংগ্রাম কর যেন দুনিয়া হতে গায়রুল্লাহর প্রভুত্ব চিরতরে দূর হয় এবং দুনিয়ায় যেন শুধু আল্লাহরই আইন প্রতিষ্ঠিত হয়। আল্লাহর বাদশাহী যেন সকলেই স্বীকার করে এবং মানুষ যেন শুধু আল্লাহরই বন্দেগী করে।” -সূরা আল-আনফালঃ৩৯
সুতরাং, দ্বীন = আল্লাহকে মালিক, মুনিব ও আইন রচনাকারী স্বীকার করা, আল্লাহরই গোলামী, বন্দেগী ও তাঁবেদারি করা, আল্লাহর হিসাব গ্রহণের ও তাঁর শাস্তি বিধানের ভয় করা এবং একমাত্র তাঁরই কাছে প্রতিফল লাভের আশা করা।
যেহেতু আল্লাহর হুকুম তাঁর কিতাব ও রাসূলের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে থাকা হয়, এজন্য রাসূলকে আল্লাহর রাসূল এবং কিতাবকে আল্লাহর কিতাব হিসেবে মেনে নেওয়াও “দ্বীন”এর মধ্যে গন্য। যেমন আল্লাহ বলেছেনঃ
“হে আদম সন্তান! আমার নবী যখন তোমাদের কাছে বিধান নিয়ে আসবে তখন যারা সেই বিধানকে মেনে আদর্শবাদী জীবন যাপন করবে এবং সে অনুসারে নিজেদের কাজ-কারবার সমাপন করবে, তাদের কোন ভয়ের কারণ নেই।” –সূরা আল আরাফঃ৩৫
এর দ্বারা জানা গেল আল্লাহ সোজাসুজি প্রত্যেক মানুষের কাছে তাঁর বিধান পাঠান না, বরং তাঁর নবী-রাসূলদের মাধ্যমে পাঠান। কাজেই যে ব্যক্তি আল্লাহকে আইন রচনাকারী বলে স্বীকার করবে সে ব্যক্তি কেবল নবীদের আনুগত্য করে এবং তাঁদের প্রচারিত বিধানের আনুগত্য করেই আল্লাহর হুকুম পালন করে; একে বলা হয় ‘দ্বীন’।
শরীয়াতঃ
শরীয়াত অর্থ পথ ও নিয়ম। একজন মানুষ যখন আল্লাহকে আইন রচনাকারী বলে তাঁর দাসত্ব স্বীকার করে, তখন একথাও স্বীকার করে নেয় যে, রাসূল আল্লাহর তরফ থেকেই অনুমতিপ্রাপ্ত পথ প্রদর্শক হিসেবে এসেছেন এবং কিতাব তাঁর তরফ থেকেই নাযিলকৃত; ঠিক তখনই সে দ্বীনের মধ্যে দাখিল হয়। এরপর যে নিয়ম অনুযায়ী তাকে আল্লাহর দাসত্ব করতে হয় সে পথের নামই শরীয়াত। এ পথ ও কর্মপদ্ধতি আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল মারফত পাঠিয়েছেন। মালিকের ইবাদত কোন নিয়মে করতে হবে; পাক-পবিত্র হওয়ার নিয়ম কী, নেকী ও তাকওয়ার পথ কোনটি, অন্য মানুষের হক কীভাবে আদায় করতে হবে, জীবন কীভাবে যাপন করতে হবে, এ সব কথা নবীই বলেছেন।
দ্বীন ও শরীয়াতের পার্থক্যঃ
দ্বীন চিরকালই এক ছিল – এক আছে এবং চিরকাল একই থাকে। কিন্তু শরীয়াত দুনিয়ায় বহু এসেছে, বহু বদলে গিয়েছে। হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর দ্বীন যা ছিল, হযরত নূহ (আঃ) এর দ্বীনও তা-ই ছিল, হযরত মূসা (আঃ) এরও দ্বীন তা ছিল এবং শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দ্বীনও ঠিক তা-ই। কিন্তু এ নবীদের প্রত্যেকেরই শরীয়াতের কিছু না কিছু পার্থক্য বর্তমান ছিল। নামাজ এবং রোজার নিয়ম এক এক শরীয়াতে এক এক রকম ছিল। হালাল ও হারামের হুকুম, পাক-পবিত্রতার নিয়ম, বিয়ে ও তালাক এবং সম্পত্তি বন্টনের আইন এক এক শরীয়াতের এক এক রকম ছিল। কিন্তু তা সত্তেও তারা সকলেই মুসলমান ছিলেন। হযরত নূহ (আঃ), হযরত ইবরাহীম (আঃ) ও হযরত মূসা (আঃ) এর উম্মতগণও মুসলমান ছিলেন এবং আমরাও মুসলমান কেননা সকলের দ্বীন এক। সুতরাং, শরীয়াতের হুকুম বিভিন্ন হলেও দ্বীন এক, দ্বীন অনুসারে কাজ করার নিয়ম-পন্থা যতই বিভিন্ন হোক না কেন।
এ পার্থক্য বুঝাবার জন্য উদাহরণ দেয়া যেতে পারে একজন মনিবের যার বহু সংখ্যক চাকর আছে। যে ব্যক্তি সেই মনিবকে মনিব বলে স্বীকার করে না, তার হুকুম মান্য করার দরকার বলে মনেই করে না, সে তো পরিস্কার নাফরমান এবং সে চাকরের মধ্যে গণ্যই হবার নয়। আর যারা তাকে মনিব বলে স্বীকার করে, তার হুকুম পালন করা কর্তব্য বলে স্বীকার করে, তার হুকুমের অবাধ্য হতে ভয় করে, তারা সকলেই চাকরের মধ্যে গণ্য। চাকুরি করা এবং খেদমত করার ক্ষেত্র বিভিন্ন হতে পারে, কিন্তু মূলতঃ তারা সকলেই সমানভাবে সেই একই মনিবের চাকর। কেউ একথা বলতে পারে না যে আমি মনিবের চাকর, কিন্তু ঐ ব্যক্তি চাকর নয়। এভাবে মনিবের হুকুমের অর্থ ও উদ্দেশ্য যদি এক একজন চাকর এক এক রকম বুঝে থাকে এবং যে যার নিজ নিজ বুদ্ধিমত সে হুকুম পালন করে, তবে চাকুরীর বেলায় তারা সমান। অবশ্য এমন হতে পারে যে, একজন চাকর মনিবের হুকুমের অর্থ ভুল বুঝেছে, আর অন্যজনের অর্থ ঠিকমতো বুঝেছে। কিন্তু হুকুম মতো কাজ উভয়েই যখন করছে, তখন একজন অপরজনকে নাফরমান অথবা চাকুরী হতে বিচ্যুত বলে অভিযুক্ত করার অধিকার রাখে না।
নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর পূর্বে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন নবীর মারফতে বিভিন্ন শরীয়াত পাঠিয়েছিলেন। এদের এক একজনকে চাকুরীর এক এক রকম নিয়ম বলেছেন, আর অন্যজনকে বলেছেন অন্যবিধ নিয়ম। এ সমস্ত নিয়ম অনুসরণ করে আল্লাহর হুকুম মতো যারা কাজ করেছে, তাঁরা সকলেই মুসলমান ছিলেন – যদিও তাদের চাকুরীর নিয়ম ছিল ভিন্ন ভিন্ন রকমের। তারপর যখন নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) দুনিয়ায় তাশরীফ আনলেন, তখন সকলের মনিব আল্লাহ তাআলা হুকুম করলেন যে, এখন পূর্বের সমস্ত নিয়ম আমি বাতিল করে দিলাম। ভবিষ্যতে যে আমার চাকুরি করতে চায় তাকে ঠিক সেই নিয়ম অনুসারেই কাজ করতে হবে যে নিয়ম আমার শেষ নবীর মাধ্যমে আমি প্রবর্তন করবো। এরপরে কাউকে যদি দেখা যায় যে সে পূর্বের নিয়মই মানছে তখন বলা যায় সে আসলে মনিবের হুকুম মানছে না, সে নিজের মনের কথাই মানছে। কাজেই এখন সে চাকুরি থেকে বরখাস্ত হয়েছে। প্রাচীন নবীগণকে যারা এখনও মানতে চায় তাদের ক্ষেত্রে এ কথাই খাটে।
কিন্তু হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর অনুগামী যারা তাদের ক্ষেত্রে মনিব-চাকরের উদাহরণের দ্বিতীয় অংশটা বেশ খেটে যায়। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা যে শরীয়াত আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন, তাকে যারা আল্লাহ প্রদত্ত শরীয়াত বলে স্বীকার করে এবং তা পালন করা কর্তব্য মনে করে তারা সকলেই মুসলমান। এখন এই শরীয়াতকে একজন যদি একভাবে বুঝে থাকে আর অন্য একজন অন্যভাবে এবং উভয়েই যদি নিজ নিজ বুদ্ধিমত সে অনুসারে কাজ করে তাদের কাউকেই চাকুরি হতে বিচ্যুত বলা যাবে না। কারণ এই যে, তাদের প্রত্যেকেই যে নিয়মে কাজ করছে সে একান্তভাবে মনে করে যে, তা আল্লাহরই দেয়া নিয়ম। কাজেই একজন চাকর কখনোই বলতে পারে না যে, আমিই খাঁটি চাকর আর অমুক খাঁটি চাকর নয়। সে বড়জোর এটা বলতে পারে, আমি মনিবের হুকুমের ঠিক অর্থ বুঝেছি আর অমুক লোক ঠিক অর্থ বুঝতে পারে নি। কিন্তু তাই বলে অন্যজনকে চাকরি হতে খারিজ মনে করার কোন অধিকার তার নেই; তবুও যদি কেউ এতখানি দুঃসাহস করে তবে আসলে সে বিনা অধিকারে মনিবের পদটাকে দখল করে নিল। তার কথার অর্থ এই হল যে, “তুমি তোমার মনিবের হুকুম মানতে যেরূপ বাধ্য, আমার হুকুম মানতেও সেরূপ বাধ্য। আমার হুকুম যদি তুমি না মান তবে আমি আমর ক্ষমতা দ্বারা মনিবের চাকুরি হতে তোমাকে খারিজ করে দিব।” এটা কত বড় স্পর্ধার কথা! এ কারণেই শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে অকারণে কাফের বলবে, তার কথা স্বয়ং তার নিজের উপরই বর্তাবে”।
সুতরাং আল্লাহর দাসত্বে বাহ্যিকভাবে নিয়মের পার্থক্য হলেও আসলে দ্বীনের পার্থক্য হয় না; শর্ত এই যে, আল্লাহর বান্দা যে নিয়মেই কাজ করুক না কেন নেক নিয়তের সাথে করা কর্তব্য এবং একথা মনে রেখে করতে হবে যে, সে যে নিয়মে কাজ করছে তা তার ব্যখ্যা অনুযায়ী আল্লাহ ও তাঁর রাসূলেরই নিয়ম।
দ্বীন ও শরীয়াতের এ পার্থক্য বুঝতে না পেরে আজকে মুসলিম একতার কতই না অনিষ্ট হচ্ছে। একটা ছোট্ট উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মুসলমানদের মধ্যে নামাজ পড়ার নানানরকম নিয়ম আছে, একদল বুকের উপর হাত বাঁধে, অন্যদল নাভির উপর হাত বাঁধে। একদল ইমামের পিছনে মোকতাদী হয়ে আলহামদু সূরা পড়ে, আরেকদল তা পড়ে না; একদল শব্দ করে ‘আমীন’ বলে, আরেকদল তা অপ্রয়োজন মনে করে। এদের প্রত্যেকেই যে নিয়মে চলছে একথা মনে করেই চলছে যে, এটা নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এরই নিয়ম। কাজেই নামাজের বাহ্যিক নিয়ম বিভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও এরা প্রত্যেকেই সমভাবে নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর অনুগামী।
কিন্তু যেসব লোক শরীয়াতের বিভিন্ন মাসআলার ভিন্নতাকে দ্বীনের ভিন্নতা মনে করে নিয়ে এ উসিলায় নবী (সাঃ) এর উম্মাতকে বিভক্ত করে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে তারা আসলে যালেম। এরা আসলে মুসলিম উম্মাতকে বিভক্ত করে কেবল শয়তানেরই দিল ঠান্ডা করে যাচ্ছে। এরা ছোট ও সামান্য ব্যপারে একে অপরকে কাফের, ফাসেক, গোমরাহ ইত্যাদি বলে আখ্যা দিতে থাকে।
এক ব্যক্তি কোরআন ও হাদীস ঘেটে, নিজ বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে আল্লাহর হুকুম ও তা তামিল করার নিয়ম বের করে। এখন সে যা বুঝেছে সে অনুসারে নিজের কাজ করারকেই যথেষ্ট মনে করে না; বরং সে অন্যের উপরও জবরদস্তি করে নিজের মত চাপিয়ে দিতে চায়! আর অন্য লোক যদি তা মানতে রাজি না হয় তবে তাকে তাচ্ছিল্য করতে থাকে, কাফের ও আল্লাহর দ্বীন হতে খারিজ বলে মনে করতে থাকে! এরা যে শরীয়াতেরই অনুসারী হোক না কেন, এরাই যালেম।
নিজ নিজ বিবেক অনুসারে শরীয়াত অনুসরণ করাই মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ কাজ করতে গিয়ে যদি দেখা যায় দশজন মুসলমান দশটি ভিন্ন নিয়মে কাজ করছে, তবুও তারা যতক্ষণ শরীয়াত মানছে ততক্ষণ তারা সকলেই মুসলমান। একই উম্মাতের মধ্যে গণ্য; তাদের ভিন্ন ভিন্ন দল-গোষ্ঠী গঠন করার কোন কারণই নেই। কারণ আল্লাহ তাআলার দল একটিই, সেটি হল যারা মুসলমান, যারা দ্বীনে দাখিল হয়েছে। এই মুসলমানদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন শত্রুভাবাপন্ন দল গঠন হওয়াটা হল আল্লাহর আযাবের একটি রূপ।
“...আল্লাহর এমন আযাবও আসতে পারে, যার ফলে তোমাদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দেয়া হবে, তোমরা পরস্পর কাটাকাটি করে মরবে।” -সূরা আল-আনআমঃ৬৫
আল্লাহর কাছে আল্লাহর দলের সদস্যগুলোর মধ্যে একতা অত্যন্ত মূল্যবান একটি বিষয়। যখন বিভিন্ন মতাদর্শী মুসলমানগণ ভাই ভাই রূপে আল্লাহর দুনিয়ায় আল্লাহর দ্বীন পালনের সুমহান দায়িত্ব পালন করবে, একে অপরের সহায়তায় এগিয়ে আসবে, কেবল সেসময়ই তারা আল্লাহর সাহায্য ও রহমতের আশা করতে পারে।
আল্লাহ খুব শীঘ্রই আমাদেরকে সেই আকাঙ্খিত সোনালি দিন দেখার তাওফিক দিন। আমীন।।
[সংকলিত]

আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)