ধর্ম ও গবেষনা

আল কুরআনঃ সুখ অনুভূতির খোরাক জোগায়(১ম পর্ব)

আল কুরআনঃ সুখ অনুভূতির খোরাক জোগায়(১ম পর্ব)
ভূমিকাঃ বিশ্বজাহানে পালণকর্তা মহামহিম আল্লাহ রব্বুল আলামীন এক চিরন্তন বানী পাঠিয়েছেন এই বসুন্ধরায়। সত্যিই এক অভূতপূর্ব ভাষার মিশ্রণ এ বাণীর প্রতিটি লাইনে। আল কুরআন সূদীর্ঘ ২৩ বছর ধরে নাজিল হয়েছে, কী সাবলীল উপস্থাপনা ভঙ্গী। রাসুল (সঃ) যখন তিলাওয়াত করতেন মক্কার কাফেররাও তখন মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করতো। হযরত উমর ফারুক (রাঃ), যার তরবারী রাসুল (সঃ) এর মাথা কাটার জন্য উথিত হয়েছিলো, গর্জে উঠেছিলো রাসুল (সঃ) এর রক্তে ভূমি লাল করার বাসনায়, সেই উমর কুরআনের বাণী পাঠ করে অশ্রুবানে দুচোখ ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। ভগ্ণিপতি ইমরাণকে বলেছিলেন আমাকে নবীজির কাছে নিয়ে চলো, আর তারপর তিনি মনে প্রাণে কুরআনের বিধানকে মেনে নিয়েছিলেন। রাসুল (সঃ) এর পায়ের কাছে তরবারী রেখে বলেছিলেন, যে তরবারী ইসলামের বিরুদ্ধে উদ্দত হয়েছিলো, আজ থেকে সে তরবারী ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়বে। এরপর রাসুল (সঃ) অন্তরে একটা বিশালজায়গা জুড়ে উমর ফারুক ছিলেন, আর কী চাই? এইতো সবচেয়ে বড় পাওয়া। কুরআন এমন একটি গ্রন্থ যা তিলাওয়াত করলে অন্তর পবিত্র হয়ে যায়। কুরআনকে যে ভালোবাসেনা সে সবচেয়ে বড় ভূল করে। কুরআনের হাফেজদের মূল্য আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কাছে অনেক বেশী। মহান রব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জানাতে চান, তাইতো তিনি তাঁর প্রিয় হাবীবের মাধ্যমে এ কুরআন নাজিল করেছেন। যেন মানুষ ঈমান আনে, আল্লাহর নেয়ামত থেকে গাফেল হয়ে না যায়। সুরা আল ক্বামারে বলা হয়েছেঃ "আমরা এ কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের উৎস বানিয়ে দিয়েছি অতঃপর উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছো কী?" কতো সুন্দর আহবান! মানবজাতির জন্য চরম সৌভাগ্য! অসীম নেয়ামতের আচ্ছাদন চারেদিকে বেষ্টন করে রেখেছে। গফুর ও গাফ্ফার নাম ধারণ করে বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন মানবজাতিকে ভালোমন্দ বেছে নেয়ার স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন। অপরাধ করলেও সাথে সাথে শাস্তি দিচ্ছেননা, সুযোগ দেন যেন বান্দা তওবা করে ফিরে আসে। সুরা আল বাকারায় তাই বলেছেনঃ "আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হইওনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ গুণাহ মাফ করে দেবেন।" কুরআন জ্ঞান অর্জণকে গুরুত্ব দেয়ঃ ইকরা বিসমি রব্বিকাল্লাযি খালাক। খালাকাল ইনসানা মিন আলাক। ইকরা ওয়া রব্বুকাল আকরাম। আল্লাযি আল্লামা বিল কালাম। অর্থঃ পড়ো তোমার প্রভূর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। পড়ো তোমার প্রভুর নামে যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ। যিনি কলম দিয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। (সুরা আলাকঃ ১-৪) সর্বপ্রথম নাযিল কৃত আয়াত। প্রথম নির্দেশ পড়ো। জিবরাইল (আঃ) এসে রাসুল (সঃ) কে বলেছিলেন পড়ুন। রসুল (সঃ) বলেছিলেন আমিতো পড়তে জানিনা। জিবরাইল (আঃ) তখন শক্ত করে নবীজি কে জড়িয়ে ধরেছিলেন। এর পর মানতার মুক্তির দূত জ্ঞানের ভান্ডার হয়ে গেলেন। এ জগতে তাঁর মতো জ্ঞানী আর কেউ হবেনা। "ইকরা" শব্দ দিয়ে আল কুরআন জ্ঞান অর্জণের গুরুত্ব তুলে ধরেছে। জ্ঞান অর্জণের জন্য পড়ার কোন বিকল্প নেই। তবে তা পড়তে হবে মহান প্রভূর নামে, যার কাছে জ্ঞানভান্ডার রয়েছে। তিনি যে আলিমুল গায়েব। তাঁর নির্দেশণার পরিপন্থি জ্ঞানের কোনই মূল্য নেই। সে জ্ঞান পৃথিবীতে অনেক বড় মর্যাদা এনে দিতে পারে, কিন্তু আখেরাতের মূল জীবনে কোনই কাজে আসবেনা। "জ্ঞান অর্জণের গুরুত্ব বুঝাতে হজরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেনঃ "জ্ঞান অর্জণের জন্য সূদুর চীন দেশে হলেও যাও" মুলত আল্লাহ রব্বুল আলামীন মানবজাতির জন্য জ্ঞান অর্জণকে ফরজ করে দিয়েছেন। জ্ঞান অর্জনকারীর জানার কোন শেষ নেই। আর এ জন্যই বলা হয়েছেঃ দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অর্জণ করো। কারণ আল্লাহ রব্বুল আলামীন পৃথিবীতে এতা এতো নেয়ামত দিয়েছেন সেসবের পুরোটা জানতে একজন মানুষের কতো বেশী সময় লাগতে পারে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। এই পৃথিবীর জ্ঞান বিজ্ঞান, মনোহর দৃশ্য এসবের প্রতি মানুষের আগ্রহ আর অনুসন্ধানের শেষ নেই। গভীর থেকে অতল গহবরে পৌঁছে যেতে চায়, চাঁদে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে, মঙ্গল গ্রহে বসতি গড়তে চায়। সৌরজগত, পৃথিবী অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহ সবকিছুর গবেষণা চলছে। সফলতাও এসেছে। কিন্তু মানুষ যেসব নিয়ে গবেষণা করছে, জ্ঞান অর্জণের মাধ্যম বানাচ্ছে, সেসবের স্রষ্টাকে কেন জানার আগ্রহবোধ করেনা? কেন এখানেই সেই মহান স্বত্তার ক্ষেত্রেই তাদের হীনমন্যতার প্রকাশ লক্ষ্যিত হয়? আর একারণেই তারা বিরাট ভূলের মধ্যে পড়ে থাকছে দিনের পরে দিন, স্বাধীন ইচ্ছায় যে জ্ঞান অর্জণ করলো সে জ্ঞানের এক কণাও কী তবে কাজে লাগবে? এভাবেই ভূলের মধ্যে পড়ে থাকছে বছরের পরে বছর, এমনকী এই ভুলের মধ্যে পড়ে থাকা অবস্থাতেই মত্যু তাদের মুখোমুখি হয়! আফসোস! এ মৃত্যু তাদের জন্য সফলতার বদলে ব্যর্থতা এনে দেয়। আর এব্যাপারে আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেনঃ বলো অন্ধ আর চক্ষুষ্মান কী সমান হতে পারে? আলো ও অন্ধকার কী অভিন্ন হতে পারে? (সুরা রাদ-১৬) সত্যিইতো আল্লাহর অস্তিত্ব, তাঁর ক্ষমতা, তাঁ নেয়ামত সম্পর্কে যার জ্ঞান নেই সেতো অন্ধের সমুতূল্যই!

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)