অনির্ধারিত

আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি

আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি
  -আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি - কতো ভালোবাসো? - অনেক বেশী ভালোবাসি! এই ভালোবাসি শব্দটা রায়হান ইতিকে দিনে ৫০ বার তো অন্তত বলেই।  বলবে না কেন? দুধে আলতা গায়ের রং ইতির , বড় লোক বাবার একমাত্র মেয়ে।  রায়হান বলতে গেলে বউয়ের অনুগত ব্যক্তি। ইতিকে বিয়ে করে রায়হান জিগাতলায় একটা ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছে। হয়েছে ইফতির মতো সুন্দর একটা শিশুর বাবা। এমন মেয়েকে মাথায় চড়িয়ে রাখতেও রায়হানের আপত্তি নেই। হ্যা। ফলশ্রুতিতে অবশ্য নিজের আত্মসম্মান কিছুটা বিকিয়ে দিতে হয়েছে তাকে। শ্বশুর বাড়িতে এক কথায় ঘর জামাই থাকে। নিজের বাবা মায়ের খোঁজ খবরও নিতে পারে না রায়হান। বিয়ের পর মা মাত্র একবার এসেছেন ২ দিনের জন্য। তাও বউয়ের সংসারে অপটুতা দেখে রায়হান কে বলেছিল- তোর বউ সুন্দর বটে, কিন্তু এতো আস্ত একটা টিউব লাইট বিয়ে করেছিস খোকা! রায়হান মা কে ধমকে বলেছিল- আহ! মা ! চুপ করো তো! আমারটা আমি ই বুঝবো। কিন্তু ইতি ইদানিং খুব বেশী শপিং প্রেমী হয়ে গেছে। ইফতি কে রায়হানের কাছে দিয়ে কই যে চলে যায়, সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে সে। রায়হান ও একটু তাতিয়ে আছে এসব কারনে। আর রায়হানের কাছে ইতির চেয়ে ইম্পরট্যান্ট তার ছেলে ইফতি। ইফতিকে সে অনেক বেশী ভালোবাসে। ওর জন্মের সময় বেশ জটিলতা দেখা দিয়েছিল। যেহেতু ইতি একটু ধূমপান করতো, আরও কিছু বদ অভ্যাস ছিল। ডাক্তার রায়হান কে জিজ্ঞেস করেছিলো- মা ছেলে যে কোন একজনকে বাঁচানো যাবে। রায়হান ডাক্তারকে চুপি চুপি বলেছিল - আমার ছেলে চাই ই চাই। অথচ, এই ইতিকেই দিনে শতবার আই লাভ ইউ বলতেও তার কিছু যায় আসেনা। মুখে বলতে কি ই বা লাগে! কয়দিন ধরে কাজের মেয়েটা আসছে না। রায়হানের খুব কষ্ট হচ্ছে সংসার সামলাতে। ইফতির ক্ষুধা লেগেছে দেখে ইতিকে বলল- তুমি ওর সুজি টা একটু গরম করে আনো। আমি ওকে রাখছি। প্রচণ্ড অনিচ্ছা নিয়ে ইতি গেলো পাকের ঘরে। ম্যাচ কোথায় আছে তাও ইতি জানে না। অনেক খন খোঁজার পর ম্যাচ পেলো। চুলায় আগুন ধরিয়ে জলন্ত ম্যাচ টা নীচে ফেলে দিলো। এতো কাছে ফেলল যে ইতির লিলেনের ম্যাক্সি তে দাউ দাউ করে আগুন ধরে গেলো। আর্ত চিৎকার করে রায়হান কে ডাকা শুরু করলো ইতি। রায়হান আগুন! আগুন! আমাকে বাচাও! রায়হান ইফতিকে কোলে নিয়ে ছুটে আসলো। ইতির গায়ে আগুন দেখে রায়হান ভয় পেয়ে গেলো। বাসায় আর কেউ নেই। ইফতিকেও রায়হান কোল থেকে নামাতে পারছেনা, ইতির ও আগুন থামাতে পারছেনা। ইফতিকে কোল থেকে ছাড়লে ইফতির যদি ক্ষতি হয়! রায়হান হাতের বাতাস দিয়ে ইতির আগুন নিভানোর নিস্ফল চেষ্টা করে। প্রায় ৩ মিনিট আগুনে জ্বলে ইতি নিজেই নিজের গায়ে রান্না ঘরের ড্রামের সমস্ত পানি ঢেলে দেয়। ততক্ষনে পুড়ে গেছে ইতির সুন্দর দেহের অর্ধেক অংশ। সাথে সাথে মেডিকেল এ নেওয়া হয় তাকে। এরপরের ঘটনা খুব সহজ। ইতি অনেকদিন বিছানায় শুয়ে থাকলো। বাবার বাড়ি থেকে অতিরিক্ত ২ টা চাকর বরাদ্দ করা হোল। শুধু মুখে আগুন ছুইতে পারেনি। কিন্তু পুড়ে গেছে সারা শরীর ই। সারাদিন বিশাল ফ্ল্যাটের এক কোনে রায়হান কি জানি কাজ করে। হয়তো ফেইসবুক চালায়। ইতির দিকে মুখ ফিরেও টাকায় না। আগের মতো ভালোবাসি ভালোবাসি ও বলেনা। ইফতিকে নিয়ে রায়হানের আলাদা দুনিয়া গড়ে উঠেছে। পোড়া হাত পা দেখে ইফতি ও মায়ের কাছে ঘেঁষে না। ঐদিন যদি রায়হান ইফতিকে রেখে ইতির গায়ে সাথে সাথে পানি ঢালত তাহলে হয়তো আজ এই অবস্থা হতো না ইতির। যে মা সন্তানকে পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখাল, তারচেয়েও বড় তার বংশের প্রদীপ রক্ষা। কতো স্বার্থপর হয় ভালোবাসা শব্দটা, ভাবতে ভাবতে ইতির ২ চোখ শুধুই ঝাপসা হয়ে আসে।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)