উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)
মেয়েদের অব্যাক্ত কান্না

সকালের মিষ্টি বাতাসে ছুটে চলছে শহরের জনজীবন।আটটা বাজতে প্রায় আট মিনিট বাকি।ঘড়িটার দিকে এক পলক তাকিয়ে দ্রুত ছুটতে শুরু করল।ঠিক সময়ের মধ্যে গার্মেন্টসে না পৌঁছাতে পারলে এ মাসের হাজিরা বোনাস দুইটাই হারাতে হবে।তাই পা নামক চাকা দ্রুত বেগে চালাতেই হঠাৎ একটা মিষ্টি হাসির শব্দে পিছু ফিরে তাকাল পারুল।
নীল রঙ্গের স্কুল পোশাক পড়া , চুলগুলো বেণী করা ,কাঁধে স্কুল ব্যাগ। সুন্দর একটি মেয়ে মায়ের হাত ধরে এই কঠিন পৃথিবীর মসৃণ পথগুলো মাড়িয়ে চলছে। ভীষণ ভালো লাগছিল দেখতে ওদের। মা মেয়ের নানা জানা-অজানা গল্পের কথাগুলো ভেসে আসছিল পারুলের কানে। পারুলের বুকে একটু হাল্কা কষ্টের চাপ অনুভব করে। মা!!! অদ্ভুত এক মধুর শব্দ ,নিজের মাকে কখনো দেখেনি পারুল। সে তিন বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছে ।তাই বাবার মুখটাও পারুলের কাছে ঝাপসা। বড় হয়েছে সৎ মায়ের কাছে। সকালে এক বাটি ভাতের মাড় আর রাতে ভাতের সাথে দুটো কাঁচামরিচ পারুলের কপালে জোটে ।সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম আর পেটের যন্ত্রণায় পারুলের দিন কাটতো। শীতের রাতে কাঁথা বলতে এক টুকরো পুরাতন কাপড় পেঁচিয়ে ঘুমাত ।
নয় বছর বয়সে পারুলকে ঢাকার আজিমপুরে এক বাসায় কাজে দেয়া হয় । সাংসারিক কাজের পাশাপাশি পারুলের কাজ ছিল সেই বাসার মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া। সেখানে তিন বেলা তাকে ভালো খেতে দিত। মোটামুটি ভালোভাবেই দিনগুলি কাটছিল।কিন্তু বিধাতার দুনিয়ার কেউ যেন বেশি ভালো থাকতে পারে না।মাঝরাতে ভয় আর আতংক জড়ানো কণ্ঠে পারুলের চিৎকার করে উঠলো। খালুজান আমারে ছাইরা দেন!!! আমারে ছাইরা দেন!!! কিন্তু বুঝে উঠার আগেই পারুলকে কুকুর বেড়ালের মতো রাস্তায় ফেলে দেয়া হয়। বাড়ির গিন্নিদের আচরনে মনে হয় তাদের পশু স্বামীরা যেন বরাবরই নিরীহ । যা কিছু দোষ তা সব যেন পারুলের মত নয় দশ বয়সী শিশুদের। এ কেমন অবিচার???? যদি শাস্তি দিতে হয় তবে সমাজ থেকে ঐ নরপশুদের ছুঁড়ে ফেল।যারা পারুলের মত একটা শিশুকে ক্ষমা করে না নিজের হিংস্র ক্ষুধা মেটাতে ।
সেই অন্ধকার রাতে পারুল কোন পথ খুঁজে পেল না। পৃথিবীর এমন কোন মানুষ নেয় সে তার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিবে। অশ্রুভরা চোখে আর ভীরু ভীরু পায় আশ্রয় খুজে পায় ডাস্টবিনের পিছনে কুকুরের পাশে । যেখানে পারুল একটু নিরাপদ বোধ করছিল। কখন ভোর হয়েছে পারুল বুঝতেই পারেনি। পেটের ক্ষুধা নিয়ে হেঁটে হেটে এক বৃদ্ধ ভিক্ষুক মহিলার কাছে আশ্রয় পায়।এই নয় দশ বছরের মিষ্টি চেহারার শান্ত মেয়েটা যেন পৃথিবীর অনেক কঠিন পথ মাড়িয়েছে জীবনের এই অল্প সময়ে । তারপরেও পারুলের মনে একটি স্বপ্ন আর বিশ্বাস সে হয়ত একদিন দেশের জন্য এমন কিছু করবে যাতে দেশের মানুষ তাকে চিরদিন মনে রাখবে।
একটি বিকট শব্দে ভাবনার রেখা কেটে যায়।চমকিত চোখে চেয়ে চারদিকের মানুষগুলো ছুটে পালিয়ে যাচ্ছে। দুটি সন্ত্রাসী ফাঁকাগুলি করতে করতে ছুটে আসছে আর তাদের পিছনে র্যাব ধাওয়া করছে ।
পারুল পালানোর চেষ্টা না করে সাহসের সাথে একজনকে ধরে ফেলল এবং সন্ত্রাসীদের হাতের কয়েকটা গুলি পারুলের শরীরে প্রবেশ করল। র্যাব সন্ত্রাসীদের ধরে ফেলল আর পারুল মাটিতে লুটিয়ে পরে।আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন, বাতাস স্তব্ধ। মানুষগুলো আতঙ্কিত আর নীরব চাহনিতে দাঁড়িয়ে আছে।
পারুলের দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। দুটি ঠোঁটে অস্পষ্টই উচ্চারিত হল মা, মা, কেউ যেন বুঝতেই পারল না।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)