ধর্ম ও গবেষনা

আপু যেই গরম পড়েছে! আমার দ্বারা বোরখা পড়ে বের হওয়া সম্ভব হচ্ছিল না!

আপু যেই গরম পড়েছে! আমার দ্বারা বোরখা পড়ে বের হওয়া সম্ভব হচ্ছিল না!
প্রথমবারের মত নিকাব পড়ে এই অসহ্য গরম অনুভব করছি। আমি কখনোই ভাবিনি নিকাব পড়বো। বোরখা পড়েই এত গরম লাগে নিকাব পড়লে মরেই যাবো-এমটাই ভাবতাম। এটা আমার জন্য মোটাও সহজ না। যদিও নিকাব ফরজ কি ফরজ না এটা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। কিছু বিতর্ক পড়েছি এবং নিকাবকেই বেছে নিয়েছি কারণ নিকাবের পক্ষে ওলামা-মাসায়েখদের যুক্তি আমাকে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে। আপনি নিকাব ফরয মনে করেন আর না করেন পর্দা করা ফরয এটা অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই। আমার অল্প-স্বপ্ল অভিজ্ঞতা থেকে যতটুকু জেনেছি মেয়েরা পর্দা করেনা বা পর্দাকে ফরয মনে করে না দুইটা কারণে- ১. তারা তাদের সৌন্দর্য ঢাকতে নারাজ, ২. গরম সহ্য করতে পারেন না এজন্যে। যারা প্রথম কারণটা অবলীলায় স্বীকার করেন তাদেরকে হিকমতের সাথে বুঝানো এবং অনেক অনেক দোয়া করা ছাড়া আর কিছু করার নাই। দ্বিতীয় ব্যক্তিদের মধ্যে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে যেটা দেখেছি তারা সবই বুঝে মাশাআল্লাহ কিন্তু গরমের সাথে কম্প্রোমাইজ করতে পারেন না। কালকে এক ছোট আপুকে রাস্তায় দেখলাম বোরখা ছাড়া। ডেকে জিজ্ঞাসা করলামঃ কি অবস্থা আপু? উনি লজ্জার হাসি হেসে বললেনঃ আপু যেই গরম পড়ছে! আমার দ্বারা বোরখা পড়ে বের হওয়া সম্ভব হচ্ছিল না! আসলেই কি তাই? আল্লাহ্‌ আমাদের জন্য যেসব বিধান প্রণয়ন করেছেন তা কি আমাদের ধারণ ক্ষমতার বাইরে? কক্ষনোই না। সূরা বাকারার শেষ রুকুতে আল্লাহ্‌ স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন-“আল্লাহ কারোর ওপর তার সামর্থের অতিরিক্ত দায়িত্বের বোঝা চাপান না।” হ্যাঁ, বলতে পারেন কষ্ট হচ্ছে কিন্তু অসম্ভব হয়নি। বোনের পিচ্চিকে স্কুলে দেয়া নেয়া করতে করতে এক আন্টির সাথে খাতির হয়ে গেল। কথায় কথায় একদিন নামাজের কথা জিজ্ঞাসা করলাম। আন্টি বললেনঃ অন্য ওয়াক্তের নামাজ মোটামুটি পড়ি কিন্তু ফজরের নামাজ? Oh no!... that’s impossible! আমি তো সকালের নাস্তা বানানোর জন্যও বুয়া রাখছি। এত সকালে ওঠা কি পসিবল!!?? বেশ কিছুদিন পর আন্টির সাথে আবার দেখা। আন্টিকে একটু শুকনা শুকনা লাগছে (আন্টির স্বাস্থ্য আবার বেশ ভালো ছিলো)। আন্টিকে বললামঃ আন্টি তো স্লিম হয়ে গেছেন!! আন্টিঃ হ্যা রে। ইয়োগাতে ভর্তি হইছি। তোমার আংকেলের আবার স্লিম ফিগার পছন্দ। অনেক কষ্ট হচ্ছে তাও মেইন্টেইন করছি। আমিঃ হুম। আপনি তো অনেক ব্যস্ত। তা ইয়োগাতে যাচ্ছেন কখন? আন্টিঃ একদম সকালে। ৬টায় বাসা থেকে বের হতে হয়। আমিঃ যাক তাহলে এখন ফজর পড়তে পারছেন? আন্টিঃ (একটু লজ্জা পেয়ে) আসলে হচ্ছে না। যেই আন্টির কাছে সকালে ঘুম থেকে উঠা কল্পনাতীত ছিল তিনি আজ আংকেলের মন রক্ষা করার জন্য সকালে ঠিকই ঘুম থেকে উঠছেন। আল্লাহ্‌ আসলে এমন কোনো বিধানই আমাদের উপর চাপিয়ে দেননি যা আমাদের জন্য ইম্পসিবল। দরকার শুধু ইসলামের প্রতি ভালোবাসা। ভালোবেসে মানুষ কত কিছুই না করে। প্রেমে পড়লেমেয়েরানাকি লাল জামা পড়ে। কারণ তাহাদের‘উনারা’ বলেছেন লাল জামা পড়লে নাকি তাহাদের দেখতে অনেক সুন্দর লাগে! আল্লাহ্‌কে ভালোবেসে আল্লাহ্‌র দেয়া পোশাকটা পড়া কি তাহলে খুব কঠিন হবে? এছাড়াও সাহায্য প্রার্থনার জন্যও আল্লাহ্‌ অসংখ্য দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। যেই সূরা বাকারার শেষ রুকুর উদ্ধৃতি দিলাম এই সূরারই শেষ দুই আয়াত যে প্রতি রাতে পড়বে তার জন্য আল্লাহ্‌ই যথেষ্ট। (বুখারী,মুসলিম) দানকারী নিজেই যখন বলে দিচ্ছেন কিভাবে চাইতে হবে তখন সাহায্য পাওয়ার ব্যাপারে ১০০% নিশ্চিত হওয়া যায়, কি বলেন? সেদিন একটা হাদিস পড়লাম। আবূ হূরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃযখন গরম বৃদ্ধি পায় তখন তোমরা তা কমে এলে (যুহরের)সালাত (নামাজ) আদায় করো। কেননা, গরমেরপ্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপের অংশ। (তারপর তিনি বলেন),জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে নালিশ করেছিল,হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচণ্ডতায়) আমারএক অংশআরেক অংশকে গ্রাস করে ফেলেছে।ফলে আল্লাহ্তা’আলা তাকে দু’টি শ্বাস ফেলার অনুমতি দিলেন,একটি শীতকালে আর একটি গ্রীষ্মকালে। আর সে দু’টি হল,তোমরা গ্রীষ্মকালে যে প্রচণ্ঠ উত্তাপএবং শীতকালে যে প্রচণ্ড ঠান্ডা অনুভব কর তাই।(বুখারি) জাহান্নামের নিঃশ্বাসেই যদি হয় এই অবস্থা তাহলে জাহান্নাম কেমন হবে তা কল্পনাও করা যাচ্ছে না। বোনেরা, be smart. দুই দিনের দুনিয়ায় সব বিলিয়ে না দিয়ে পরকালের জন্য কিছু সঞ্চয় করুন। Let’s hold the rope of Allah tightly. Come, let’s go to Jannah together.

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)