উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)
আমি মসজিদে যাবো না কেনো?

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন-“মসজিদে মহিলারা নামাজ পড়তে চাইলে তাদের বাঁধা দিও না” (বুখারী) আর ঈদের জামাতে শামীল হওয়ার জন্য তো রাসূলুল্লাহ সাঃ জোর তাগিদ দিয়েছেন। তাই আমি মনে করি- ঈদের নামাজে তো অবশ্যই বরং সেই সাথে প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুই দিন যাওয়া জরুরী। জুমআ’র দিন (খুতবা শুনা + জামাতে নামাজ আদায়) আর আরেকদিন যেকোনো বিষয়ের ওপর লেকচারে অংশগ্রহণ।
এদিকে দেখা যাচ্ছে সমাজের অনেকেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি, অনিরাপত্তার জের ধরে মসজিদে মহিলাদের গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চান। তাই, প্রশ্ন উঠতে পারে- “আমি কেনো মসজিদে গমনের পক্ষে? হাদিসে যেখানে ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে, তো সেটাকে এতো গুরুত্ব দিচ্ছি কেনো”? শুরুতেই বলবো- নারীদের নিয়ে কাজ করতে, তাদের আত্মাকে জাগিয়ে তুলতে, সর্বোপরি নারী সমাজকে একটা সুষ্ঠ দিকে পরিচালনার জন্য এটা একটা উত্তম পথ। আমরা যদি সমাজের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো ভালো কাজে ছেলেদের সংগঠন যেভাবে এগিয়ে গিয়েছে, তাদের মধ্যে যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে, মেয়েদের সংগঠন তেমন আগায় নি। বরং অনেক পিছিয়ে। আজ নিরাপত্তা, ফিতনার ভয়ে অনেক ভাই-বোনেরা এ মতে পৌঁছেন যে, ঘরেই নামাজ নিরাপদ। হ্যা, ঘরে নিরাপদ-আমি জোর করে কাউকে পাঁচ ওয়াক্তের জন্য মসজিদে আসতে বলছি না। তবে আজ যারা মেয়েদের নিরাপত্তার কথা তুলে শুধু মাত্র মসজিদে যাওয়ায় মানা করছেন (আমি আবারও বলছি- আমি পাচ ওয়াক্ত বাধ্যতামূলক করছি না, আমরা না হয় অন্তত জুমাআ’র দিন, যেদিন খুতবাও শুনতে পারবো আর জামাতে নামাজও হবে-আর একদিন সবার সুবিধা মতো করে লেকচারের আয়োজন করা হবে- যেকোন বিষয়ে ) সেরকম পরিবারকেই দেখা যায়- ঘরের মেয়েদেরকে বিভিন্ন কাজে বাইরে যেতে কিছু বলা হয় না। অথচ দ্বীণের কাজে বাধা? আচ্ছা, আমরা তো প্রায়ই বলি- মেয়েরা পর্দা করে যেকোনো জায়গায় যেতে পারবে তাহলে প্রশ্ন আমরা মেয়েরা মসজিদে যেতে পারবে না কেনো? বরং আমার কাছে মনে হয় নিরাপত্তার সাথে মেয়েদের একটা শক্তিশালী সংগঠন গঠনের জন্য মসজিদকে বেছে নেয়া যুক্তিযুক্ত। প্রশ্ন আসতে পারে- তা কিভাবে?
উত্তরঃ ১/ আমাদের সমাজে মসজিদ একটি অরাজনৈতিক স্থান বলে পরিচিত। কে কোন দলের সমর্থক সেটা বড় নয়- বরং সবাই নামাজ পড়তে আসে- সবাই মুসলমান এটাই এখানে বড়। তাছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে কিছু অপপ্রচার, ভীতি ইসলামকে কারো কারো কাছে এককেন্দ্রিক করে দিয়েছে।তো, সেই হিসাবে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় “মসজিদে নামাজ পড়তে যাই”-এটা বলাটা পরিবারে যেমন নিরাপদ তেমনি কোনো সংগঠনে যাই- এটা বলা নিরাপদ নয়। কারণ মেয়েদের ঊপর দিয়ে মা-বাবার দুঃশ্চিন্তা। কে জানে, কি হলো! তো সেই হিসাবে আল্লাহর ঘরে আছে, সেটা ভেবে পরিবারও নিশ্চিত থাকবে। তাই একেবারে সাধারণ পর্যায়ে যদি এলাকাভিত্তিতে প্রত্যেক মসজিদে মেয়েরা জোড়ো হয়- তাতে খুব সহজে একটা জোট গঠনের আশা থাকে।
২/ অনেকেরই ধারণা “যারা ধর্মের কথা বলে তারা শুধু মেয়েদের পর্দার পিছনে পরে থাকে। এদের আর খেয়ে দেয়ে কাজ নাই”। হ্যা, এটার জন্য কিছু ইসলামি মাইন্ডেড ভাই-বোন দায়ী, যারা আর সব ব্যাপক বিষয় বাদ দিয়ে নারীদের দেখা মাত্র শুরুতেই পর্দার কথা বলেন।এটা সঠিক পদ্ধতি নয়। প্রথমে একটা মানুষকে তার নিজের ব্যাপারে, তার প্রকৃত অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। আল্লাহর নির্দেশ ও নিজের জীবন সম্পর্কে সচেতন হতে হবে- তবে এই জিনিসটা হুট করে কারো জীবনে হয়ে যায় না। অপর মানুষটিকে সময় দিন। তাকে সেইরকম পরিবেশ দিন যাতে সে সেই হিসাবে বুঝতে শিখে। ইদানিং কিছু পরিবার মেয়েদের স্কুল পর্যায় থেকে পর্দার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন- জিনিসটা বেশ ভালো। সম্প্রতি এক কলামিষ্ট চমৎকার কথাই উল্লেখ করেছেন-একটা মেয়ে যে এখনো পর্দার গুরুত্ব বুঝে নি, তাকে কি আমরা ধরে নিবো- সে ইসলাম সম্পর্কে কিছুই জানে না, বা তাকে নিজেদের থেকে আমরা আলাদা করে দেখবো? না,কখনো না। হতে পারে সে ইসলামের একটা ফরজ বিধান এখনো মানতে পারছে না, কিন্তু তাই বলে সে ইসলামের আর কোনো বিষয়ে বলতে পারবে না-সেটা তো নয়। বলতেই পারে”। সুতরাং, আমাদেরকে তাকেও জায়গা করে দিতে হবে। এই ভোগবাদী সমাজের নোংরা দৃষ্টি যে শুধু নারীদের শরীরের প্রতি, আর এটা নিয়েই যে রমরমা ব্যবসা চলছে- সেটা সেই মেয়েটা যখন বুঝবে- তখন সে নিজেই আল্লাহর বিধান মেনে নিবে। নিজেকে রক্ষা করার জন্য। সুতরাং, সবার জন্য দুয়ার খোলা। এসো আলোচনায় বসি। এদিকে পর্দা করা কারো উপর চাপিয়ে দিলে, সেই মেয়েটি হয়ত আপনার সামনে পর্দা করে চলবে- কিন্তু সুযোগ পেলেই খুলে ফেলবে। কারণ সে আল্লাহর বিধান মনে করে, আল্লাহর ভয়ে পর্দা করে নি, করেছে আপনার ভয়ে। তাহলে কি হলো? যাই হোক, জানি, সমাজের অনেকেই আছেন পর্দার ব্যাপারে সচেতন, এবং কাউকে জোর করেন না। তবে মসলমানদের ওপর দিয়ে অনেকে কুটসা রটনা করে বলে বেড়ায় যে তারা-মানুষদের জোর করে পর্দা করায়-এমন অপবাদ দূর করতেও মসজিদ পারফেক্ট। দেখু..., একটা মুসলিম মেয়ে বেপর্দা চললেও নামাজের সময় কিন্তু ঠিকই আহকাম মানার প্রতি আগ্রহী হয়। কারণ সবাই চায় তার নামাজ কবুল হোক। সুতরাং মসজিদে আসা যাওয়ার মাধ্যমেও একটা মেয়ে পর্দার ট্রেনিং এমনিতেই পেয়ে যাবে। তাছাড়া আজকাল অনেক হিজাবী মেয়েদের দেখি যাদের নামাজের ঠিক নাই। তাই হিজাবী + নামাজী করার জন্য আমার কাছে মসজিদটাই উত্তম মনে হলো। তাছাড়া নামাজে আসার মাধ্যমে এক জনের সাথে আরেকজনের কথা হবে, সম্পর্ক বাড়বে, এতে একটা কমিউনিটি গঠিত হবে।
৩/এদিকে শুধু একটা মসজিদ নিয়ে বসে থাকলে হবে না, অন্যান্য এলাকার মসজিদেও এমন ব্যবস্থাপনা করতে হবে। প্রয়োজনে মসজিদ কমিটির সাথে কথা বলতে হবে, এ কাজে আমাদের ভাইরা এগিয়ে আসতে পারেন। এলাকা থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ে মসজিদের মেয়েদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং বাড়াতে হবে?
৪/ অনেক মেয়েদের দেখি তাফসির-হাদিস জানা নেই (এই জিনিসটা শুধু মসজিদের মেয়েদের মধ্যেই দেখি নি, বাইরেও দেখেছি), হাদিস জানে না, এর-ওর মুখ থেকে শুনে আমল। আর বিষয়টা শুধু আমি ধর্মীয় বই পড়ার ক্ষেত্রে নয়- বরং দৈনন্দিক বিভিন্ন বিষয়ে দেখেছি-তাদের জ্ঞানের সীমা সেই পর্যায়ে নেই, তাই মনে হচ্ছে এরা যেকোনো সমস্যায় যার-তার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে যাবে। তাছাড়া শুধু ধর্মীয় বই নয়- বরং জ্ঞান-বিজ্ঞানের যেকোন শাখায়, নিজের জীবনের ক্যারিয়ারকে সুষ্ঠ রূপে গড়তেও একটা কমিটির দরকার- যে তাকে সুবুদ্ধি দেবে- তো সেটা মসজিদ ভিত্তিক করা যেতে পারে।
৫/কিছু দিন আগে নিউজ দেখলাম- ব্রিটেনে মসজিদ থেকে মুসলিম মহিলাদের পরিবার বিষয়ক সমাধান দেয়া হচ্ছে। খুব সম্ভব সেখানে মসজিদে এমন সেকশনই আছে, তো আমরা কি এমন কিছু করতে পারি? কিন্তু কিভাবে? একটা বিষয় একটু তুলে ধরি-আজকাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে মেয়েদের তালাক নেয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এই জিনিসটাকে শুধু একতরফাভাবে দেখলে হবে না, আমরা যদি বলি- ছেলেদের নির্যাতনে তারা তালাক নিচ্ছে- এটাও হতে পারে আবার যারা নারীদের উসকানি দেয় তাদের জন্যও হতে পারে। জিনিসটা হয়ত বুঝতে পেরেছেন। কিছু সংস্থা আছে- ওদের কাছে স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে মনোমালিন্য হওয়া মানেই আলাদা হয়ে যাও। ‘তুমি কি কারো ওপর নির্ভরশীল নাকি, তুমি শিক্ষিত, স্বাবলম্বী’। কিন্তু কথা হচ্ছে- মনোমালিন্য হলেই যে আলাদা করে দিতে হবে, তা কেনো? আলোচনায় সমাধান কি হয় না? আল্লাহ তো বিয়ে সহজ আর তালাক কঠিন করেছেন, তাহলে? বিষয়টা ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্যই বলা। তাছাড়া শিক্ষিত হওয়া, স্বাবলম্বি হওয়া মানে কি আমাদের কারো প্রয়োজন নেই? দোষ উভয়েরই থাকতে পারে কিংবা একজনের। আলোচনা করে সুষ্ঠ সমাধান প্রয়োজন। সুতরাং –মসজিদে এমন একটা সংগঠন গড়তে হবে- যাদের হাতে কিছু lawyer থাকবেন- যারা তথাকথিত না বরং প্রকৃত মানব দরদী হবেন, যাদের কাছে ছেলে মেয়েরা তাদের সামাজিক সমস্যার একটা সুষ্ঠ সমাধান খুঁজে পাবে।
৬/ আমরা মেয়েরা অনেক সময় নিজেদেরকেই বুঝতে ভুল করি। হয়ত কোনো বিষয়ে আমরা আগ্রহী, কিন্তু সেটা কিভাবে করবো তা জানি না। জীবনের ক্যারিয়ার মানেই শুধু জব করা-সেটা যেমন না, তেমনই শুধু ঘরে থাকলাম অথচ নিজ থেকে যে জিনিসটা সমাজে দেয়া যেতো সেই দিকে নিজের বাড়তি সময়টাকে কাজে লাগালাম না-তাও তো নয়। এই পৃথিবীতে অনেকের দেখি প্রতিভা আছে- তবে পারে না, সেটা ফুটিয়ে তুলতে। আমাদের মধ্যে যেটা কাজ করে তাহল- কোনটা করলে দাম পাওয়া যাবে, কোনটা করলে স্ট্যাটাস বাড়বে- এসব নিয়ে চিন্তা করা। যদিও পৃথিবীতে করার কমতি নেই, আগে চিন্তা করা উচিত- আমার ভালো লাগে কোনটা। বিভিন্ন মানুষের ভালোলাগার সেক্টর ভিন্ন। মসজিদে যেমন একটা মেয়ের সাথে পরিচয়- পড়াশুনা শেষ এখন বাসায়, পরিবার ভালো পাত্র খুজছে। বেশ ভালো মেয়েটা। জিজ্ঞাস করলাম- বাড়তি সময় কি করো? সে হাসে।জিজ্ঞাস করি- ‘টিভি দেখো? বলেঃ ‘হ্যা, এই তো’…. আসলে ব্যাপারটা সেরকমই। বেশ আগে হান্নান স্যারের একটা লেখা পড়েছিলাম- বেশ চমৎকার একটা লাইন ছিলো এমন-‘মেয়েরা টিভি দেখে সময় নষ্ট করে, অথচ সেই সময়ে তো পাশের বাড়িতে গিয়ে সামাজিক সম্পর্কও বাড়ানো যায়’। যে জিনিসটা দিন দিন আমাদের মধ্যে কমে যাচ্ছে। যাই হোক, অধিকাংশ গৃহিনীরা কাজ শেষ হলেই (ঘরে থাকা মানেই শুধু রান্না করা নয়, বাড়তি সময় আসেই, যেটাকে অনেকে কাজে লাগাতে পারে না) টিভি দেখা শুরু। তাও হিন্দি সিরিয়াল! তাহলে লাভ কি হলো? যাই হোক- আমি গৃহিণীদের ছোট করে দেখি না, কারণ অনেক মেয়েরা এমন কি ছেলেরাও পরিবারিক দায়িত্ব পালনে উদাসীন। যদিও সমাজ গঠনে এটাও একটা গরুত্বপূর্ণ স্থান। তবে হ্যা, জীবন কখন কোথায় মোড় নেয়, বলা যায় না। জবের প্রয়োজন হলে করো, বিশেষ করে যে দিকে তোমার ইন্টারেস্ট সেটা করো। কে কি করে সেটা না দেখে নিজের আলাদা স্থান তৈরি করো, যাতে লোকে তোমার জীবন কাহিনী পর্যবেক্ষণ করে। তাই অনেক মেয়েরা যারা নিজেদের সময়কে কিভাবে কাজে লাগাবে, কোনটাতে তাদের যাওয়া ঠিক, তাদের আগ্রহের ভিত্তিতে- এমন কিছু পরামর্শক দাতা হিসাবে আমরা কি কমিটি থেকে কাজ করতে পারি না?
সবশেষে, আশেপাশে অনেক সময় অনেক সমস্যা দেখি- যেগুলোতে একটা টিমের উপস্থিতি প্রয়োজন হয়। সমস্যা যেখানে- সেখানেই আমাদের টিম হাজিড়- এমন কিছু করতে হবে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)