বিবিধ

নিম্নমধ্যবিত্তের আবার শখ!

নিম্নমধ্যবিত্তের আবার শখ!

,

প্রিয় স্বজনদের সাথে ঈদের ছুটি কাটাতে, চিরচেনা প্রাণস্পন্দনের টানে ছুটে চলেন যে যার সাধ্যানুযায়ী সাধ পুরনের নিমিত্তে! পরিবার প্রিয়জনের দীর্ঘ অপেক্ষা আর একচিলতে হাঁসি হয়ত ভুলিয়ে দেয় কঠিন শহরের জীবনযুদ্ধে কাটানো সমস্ত ব্যাথা ক্লিষ্টের কথা!
কাছের মানুষদের সাথে কাটানো সপ্তাহ খানেক মুহূর্তের জন্য জমানো খুশিটুকু সংগ্রহের পিছনে থেকে যায় দিনের পর দিন ত্যাগ,সহ্য করতে হয় আপনজনদের ছেড়ে থাকার যন্ত্রনা!
এরপর ছুটি কাটানোর সময় কারোর মালিকের,বসের টালবাহানা, বকা কতরকমের হিসেব!
গ্রামে থাকা মানুষ গুলো প্রিয়জনদের জন্য বছর অব্দি জমিয়ে রাখেন প্রিয় খাবার,ভালোবাসা!বাড়িতে রওয়ানার কথা শুনতেই খুশির বান ছড়িয়ে পড়তে থাকে পাড়া জুড়ে!কিন্তু মধ্যবিত্তের যাত্রা পথের ভোগান্তির কথা কে জানে কে বোঝে!
নদীপথে যারা আসা যাওয়া করেন সেখানে দুইশ্রেণীর মানুষ থাকেন, মধ্যবিত্ত আর নিম্নমধ্যবিত্ত!
লঞ্চে যাত্রা অভিজ্ঞতা থেকে এপর্যন্ত যত মানুষের ভোগান্তি দেখেছি তার মধ্যে নারী ই একটু বেশি!তারা হয়ত কোন গৃহকর্মী অথবা গার্মেন্টস কর্মী!প্রিয় জনদের ভালো রাখতে কলিজা পুড়ে যারা টাকা কমাই করেন আর যাত্রাপথে মানবেতর রাত কাটিয়ে বাড়ি ফেরেন!আনন্দঘন মুহূর্ত শেষ না হতেই আবার একই ভোগান্তি পেরিয়ে প্রিয় কর্মস্থলে ফিরতে হয়!
মাঝে মাঝে অবাক হই সেইসব সুপুরুষদের কথা ভেবে যারা কর্মজীবী নারীদের বিপক্ষে বক্তব্য দিয়েই সাধু সাজতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন ,হিসেবে আছে সমাজে কতজন মহিলার আয়ে কত পরিবার টিকে থাকে?কতজনের মুখে হাঁসি ফুটে অর্ধাঙ্গীর বাড়তি আয়ে!

ঈদে বাড়ি ফিরছিলাম সুন্দরবন নয় এ আমাদের কেবিন নং ছিল তিনশো সাত !আমাদের পাশের কেবিনেই ছিলেন কোন উঁচু শ্রেণীর প্রাণীরা!সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর তুলসী গাছের কাহিনীর মত হয়ত চোখ নিচে পড়ার সময় নেই !
কেবিনের সামনের চেয়ারটিতে বসেছিলাম আর ভদ্রলোকদের চেয়ারে স্বস্তি পেতে বসেছিলেন মাঝবয়সী একজন মহিলা,কোলে দুইবছরের একটা বাচ্চা আর পাশে খাঁচায় চারটে কোয়েল!

একটু পরে পাশের কেবিনের যাত্রীরা এসে মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বলল :চেয়ারগুলো কেবিনের যাত্রীদের জন্য, উঠে বসুন!
মহিলা বাচ্চা কোলে , অসহায়ত্ব নিয়ে জায়গা খুঁজছে!আমি ইতোমধ্যে চেয়ার ছেড়ে মহিলা কে বললাম আপা এখানে বসতে পারেন!
আরেকজন এসে বলল নিজেদের জায়গা হয়না আবার পাখি!!


এবার কোয়েলের খাঁচাটা এনে আমাদের সামনে রাখতেই আমি :সমস্যা নেই আপা থাকুক!আর ছোটভাইয়া আমাকে: এক কাজ করো ওনার বাচ্চাটাকে তোমার সাথে এনে রাখ!আমি হেসে বললাম ওনি দিতে চাইলে নিতে পারি!
ভাইয়া তখন আমাকে বোঝাতে চাইলেন তুমি এই একজন মহিলাকে সুবিধে দিলে বাস্তবতা হচ্ছে কেবিনের পাশের এই জায়গাটা ফাঁকা রাখতে পারেন কর্তৃপক্ষ কিন্তু টাকার লোভে তারা জায়গা করে দেন কোনমতে একটু বিছানা পেতে বসার!এর ভোগান্তি কেবিনের যাত্রীদের!একটু পরে দেখলাম বারোঘন্টা অবরুদ্ধ থেকেও ওযু করতে যাওয়ার জন্য পা ফেলার জায়গা নেই!


অপরদিকে হাঁটাচলার জন্য সামান্য জায়গা না রেখেই বিছানা পেতে বসা যাত্রীরা বিরক্তি প্রকাশ করছেন কেবিনের যাত্রীদের উপর !বিরক্তিটা এমন আমরাও কর্তৃপক্ষকে টাকা দিয়েই যাচ্ছি!
অথচ চলার জায়গা ফাঁকা থাকার কথা ছিল!
অনিয়ম ই যখন নিয়ম হয়ে যায় তখন মধ্যবিত্তেরা একটু হলেও দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন হয়ত,তবে নিম্নমধ্যবিত্তদের কথা কে ভাবে??

গতবার ফেরার সময় দোতলার সিঁড়িতে কোন মতে সিট করে গুটিয়ে শুয়ে থাকা আন্টিকে অতিক্রম করে সামনে যেতে থমকে গিয়েছিলাম !
এর পরের ঘাটে ই দেখলাম যাত্রীরা পা মাড়িয়ে ওঠার সময় ওনাকে ব্যাথা দিয়েছেন,ছড়িয়ে ছিটে ফেলেছেন ওনার ব্যাগে থাকা বাদাম,শুকনো মরিচ সহ খাবার দাবার!
আক্ষেপের সুরে বৃদ্ধার অভিব্যক্তি ছিল এমন :মেয়েটা আমার ঈদে আসতে পারেনি তাই দেশি বাদাম নিয়ে এসেছিলাম?,গরীবের আবার সাধ!!?

ঈদে বাড়ি আসা যাওয়ার পথে আমি যতটা প্রকৃতি অবলোকন করি তার চেয়ে বেশি চারপাশের অনিয়ম থেকে কষ্ট অনুভব করি!সারাপথে চোখে ভাসতে থাকে সেই কোয়েল পাখি ও মহিলার কথা!যিনি একটু জায়গা পেয়ে আবেগের সুরে বলছিলেন আপা বাড়িতে দুইটা মেয়ে থাকে ওদের পাখির খুব শখ তাই নিজের কষ্ট হলেও ওদের সাধ পুরন করতে চাচ্ছি!জায়গা না পেয়ে আপনাদের কষ্ট দিচ্ছি আমরাও মানুষ আপা!ভাগ্যের লিখন আমাদের হয়তো ভালোভাবে যাত্রার কপাল নেই!
মেয়েদের ফোন করে অপেক্ষায় রেখেছি পাখি নিয়ে আসব,কত কথা মানুষের শুনলাম আপা!
অবাক চোখে নিম্নমধ্যবিত্তের ভোগান্তি আর কষ্টের কথা শুনে অপরাধবোধ আর দুঃখ প্রকাশ ছাড়া কিছুই করার থাকেনা!কে জানে কবে আসবে এই বিশৃঙ্খল নিয়মনীতির পরিবর্তন!অপেক্ষা সুদিনের!

পৃথিবীতে বসবাসরত প্রাণীদের অবস্থানে কত তফাৎ!!আল্লাহ্ তায়ালা শখ পুরনের তাওফিক দিন উঁচু নিচু সবাইকে!ঈদ হোক সবার জন্য নিরাপদ ও আনন্দময়!


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন