ধর্ম ও গবেষনা

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে

আল্লাহকে যারা বিশ্বাস করতে চায় না, তাদের একটা কমন অভিমান আছে আল্লাহর ওপর। 'নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে'। সত্যি কথা বলতে, ব্যপারটা আসলেই গুরুতর। তবে ব্যপার হল, এজন্যই শব্দটা 'ঈমান' মানে 'বিশ্বাস'। দেখা জিনিসের তো বিশ্বাস লাগে না। আমার মাথার উপরে ফ্যান ঘুরছে, এটা আমি বিশ্বাস করি কি না, এটা কোন প্রশ্নই না, কারণ সেটা আমি দেখতেই পাচ্ছি।

তবে হ্যাঁ, চোখ দিয়ে না হলেও 'দেখা' যায়। কি দিয়ে? আমার বছর ছয়েকের পুত্র একটা কারণে গতকাল গভীর রাতে ছাদে যাবার অনুমতি পেয়ে মহাখুশী। হঠাত দৌড়ে এসে বলে,'আম্মু কি বাতাআআস, মেঘগুলা সরে সরে, সরে সরে যায়। কি আরাম লাগে দেখতে'!

আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম। আমার সন্তানকে যতটুকু না, তার চেয়ে বেশি আল্লাহকে। হ্যাঁ, আমার যখন আল্লাহকে খুব দেখতে ইচ্ছা করে,আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। এই চোখ খুব বিরক্ত করে, বিশ্বাসকে বড় বেশী বস্তুগত করে ফেলে। চোখ বন্ধ করে বাচ্চার শরীরের ঘ্রাণে, জানালার পাশের বেলীর পাপড়িতে, কানের পাশ দিয়ে প্রবাহমান শনশন বাতাসে, অচেনা অনাত্নীয় কারো মায়ার হাতের স্পর্শে, সিঁদুর মেঘের চঞ্চল ওড়াউড়িতে, বজ্রের গমগম কন্ঠে, তাঁকে দেখতে পাওয়া যায়, বুঝতে পারা যায়। তিনি আছেন, আমাকে ভালোবাসেন, আমাকে দেখে রাখছেন, আমাকে জানেন। কি চাইতে হত জানিনা, কি বলতে হত বুঝিনা, কি জন্য কাঁদছি জানিনা, উনি জানেন। জেনে সেই ক্ষতে হাত বুলান। আমি স্পর্শ পাই।

আমি মিশকালো গর্তে পড়ে গেলে উনার লাভ ক্ষতি নাই, তবু নিষেধ করেছেন, যেন আমিই অন্যায় করে আবার বিষন্নতায় না ভুগতে হয়। আমি সেই ভালোবাসা টের পাই। প্রতিবার গর্তের কিনারায় ঝুলে থেকে আবার দোল খেয়ে উঠতে সাহস পাই। আল্লাহ আছেন, আমার অপেক্ষায়; আমি ফিরবো, মাফ চাইবো।

আমার মাথায় অকাতর স্নেহের হাত। আমার পাওনা নয়, সেসব কারুর দান। আমার ভুলে যাওয়া রোগে, আমার বিরক্তিকর ব্যস্ততায়, অফিসে রাখা মস্ত চায়ের মগে কেউ মায়ার অজুহাত পান। মাথায় হাত দিয়ে, একটা দুইটা শব্দে আস্কারা দেন। আমি এই দেনাপাওনাহীন ভালোবাসায় তাঁকে পাই, আমার পাওয়ার খাতায় প্রত্যেকদিন টিক দিয়ে যাচ্ছেন। নাও, নাও, নাও।

'রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও' - দুনিয়ায় যা কিছু ভালো, আমাকে দেন প্রভু, চাইতে গেলে অজান্তেই আকাশমুখী হয়ে যায় চিবুক। কি ছোট, কি ক্ষুদ্র আমি প্রভু, আপনি না থাকলে কবে হারিয়ে যেতাম।

আমাদের সবগুলো কালো ভালো করে দেন, আমাদের মায়ায় জড়িয়ে নেন, যেন আপনাকে চিনতে পারি, আয়নায়, জিহ্বায়, অন্তরে।


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)