উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)

নারীবাদীদের ইসলাম বিরোধিতার কারণ হলো পৃথিবীর ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতা

নারীবাদীদের ইসলাম বিরোধিতার কারণ হলো পৃথিবীর ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতা

এক

সরোজিনী নাইডু। তিনি একজন বাঙালী হিন্দু নারী। একজন কবি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আমাদের দেশের বর্তমান সেক্যুলার বাঙালী নারীদের মত তিনি এতোটা উগ্রবাদী ও অকর্মণ্য ছিলেন না। একজন নারী হয়েও তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে তার খুবই উচ্চ ধারণা ছিলো। আমাদের দেশের নারীবাদীদের মতো তিনি কখনোই ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলতেন না। বরং তিনি বলতেন, ইসলাম ভারতবর্ষের জন্যে একটি আশীর্বাদ স্বরূপ।

তিনি বলেন –

“The loveliest thing that Islam brought to India is the saying of Prophet that "Paradise lies under the feet of the mother".

“ইসলাম ধর্ম সবচেয়ে প্রিয় যে জিনিসটি ভারতবর্ষে নিয়ে এসেছে, তা হলো রাসূল (স) এর এই কথাটি – “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত”।

সরোজিনী নাইডু এর মতো আমাদের দেশের নারীবাদীরা যদি ইসলামকে বোঝার চেষ্টা করতেন, তাহলে নারীদের অধিকার আন্দোলনে তারা আরো অনেক বেশি প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে পারতেন।

 

দুই

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম নারীদের অধিকার নিয়ে প্রচুর কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি কখনো ইসলামকে দোষারোপ করেননি, বরং আমাদের দেশের সমাজ ব্যবস্থাকে দোষারোপ করেছেন।

তিনি তাঁর কবিতা লিখেছেন –

এদেশের নারী বেজায় আনাড়ি,
পুরুষের হাতে তবলা,
তবলাতে চাঁটি মারিলে সে কাঁদে,
ইহারা কাঁদে না, অবলা!

জরিশাড়ি-মোড়া চকলেট ওরা
বন্দী হেরেম-বাক্সে,
বাহির করিলে খেয়ে নেবে কেউ,
কাজেই বাক্সে থাক সে॥

[চন্দ্রবিন্দু, নজরুল রচনাবলী ২য় খণ্ড, পৃ ১৪৪]

কাজী নজরুল ইসলাম নারীদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমাদের দেশের সামাজিক সমস্যাকে ইসলামের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেননি। ফলে তিনি জাতীয় কবি হতে পেরেছেন। কিন্তু, আমাদের নারীবাদীরা তাদের অজ্ঞতা ও উগ্রতার কারণে সাধারণ নারীদের কাছেও কোনো ধরণের গ্রহণযোগ্যতা পায় না।

 

 তিন

অ্যানি বেসান্ত ছিলেন উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত নারীনেত্রী। নারীদের অধিকার আদায়ের জন্যে তিনি ইসলামকে রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করতেন।

তিনি বলেন –

“I often think that woman is more free in Islam than in Christianity. Woman is more protected by Islam than by the faith which preaches monogamy. In AI Quran the law about woman is juster and more liberal. It is only in the last twenty years that Christian England has recognised the right of woman to property, while Islam has allowed this right from all times.” [Annie Besant, The Life and Teachings of Mohammed, 1932]

“আমি মনে করি, খ্রিষ্টান ধর্মের চেয়ে ইসলাম ধর্মে নারীদের স্বাধীনতা অনেক বেশি। যারা ‘একবিবাহ’ কথাটি প্রচার করেন, তাদের চেয়েও ইসলাম নারীদেরকে বেশি রক্ষা করে। নারীদের জন্যে আল কোর’আনে যে সকল আইন রয়েছে, তা অনেক বেশি ন্যায়সঙ্গত এবং উদার। এই তো মাত্র বিশ বছর হলো, নারীদের সম্পত্তির অধিকারের কথা স্বীকার করে নিয়েছে খ্রিষ্টান ইংল্যান্ড। অথচ ইসলাম ধর্মে সবসময় নারীদের সম্পত্তির অধিকার ছিলো”।

অন্যস্থানে তিনি বলেন –

“It must be remembered that the law of Islam in relation to women was until lately, when parts of it have been imitated in England, the most just law, as far as women are concerned, to be found in the world. Dealing with property, dealing with rights of succession and so on, dealing with cases of divorce, it was far beyond the law of the West in the respect which was paid to the rights of women. Those things are forgotten while people are hypnotized by the words monogamy and polygamy and do not look at what lies behind it in the West – the frightful degradation of women who are thrown into the street when their first protectors, weary of them, no longer give them any assistance” [Annie Besant, The Life and Teachings of Mohammed]

“এই বিষয়টি আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, ইসলাম নারীদেরকে যে অধিকার দিয়েছে, তা থেকে কিছু অংশ সম্প্রতি ইংল্যান্ড নিজেদের আইন হিসাবে মেনে নিয়েছে। কিন্তু, যতদিন পর্যন্ত নারীরা সচেতন হয়নি, এবং ইংল্যান্ড নারীদের এই অধিকার স্বীকার করে নেয়নি, ততদিন পর্যন্ত পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে ন্যায়সঙ্গত আইন ছিলো ইসলামে। নারীদের সম্পদ, উত্তরাধিকার, বিবাহ বিচ্ছেদ মামলা, ইত্যাদি বিষয়ে পশ্চিমারা অনেক পিছিয়ে ছিলো, এমনকি যখন তারা নারীদেরকে অধিকার দিয়েছিলো তখনো। ইসলামের এসব অধিকারের কথা মানুষ একেবারেই ভুলে যায়, যখন তারা ‘একবিবাহ’ এবং ‘বহুবিবাহ’ শব্দগুলো শুনে; অথচ, নারী অধিকারের বিষয়ে পশ্চিমারা আগে কেমন ছিলো, তা তারা লক্ষ করে না। নারীদের জন্যে খুবই ভয়ংকর একটি অবস্থার সৃষ্টি হয়, যখন তাদের প্রথম স্বামী তাদেরকে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে। অথবা, যখন নারীদের প্রথম স্বামী তাদেরকে কোনো ধরণের সহযোগিতা করে না, তখন ‘একবিবাহ’ নারীদের জন্যে খুবই কষ্টকর হয়ে যায়।”

অ্যানি বেসান্ত ভারতীয় নারী হলেও তিনি বিশ্বের ইতিহাস জানতেন। তাই তিনি বুঝতেন, ইসলাম কিভাবে নারীদেরকে অধিকার দেয় এবং রক্ষা করে। কিন্তু আমাদের দেশীয় যেসব নারীবাদী ইসলামের বহুবিবাহের সমালোচনা করেন, তারা নারী অধিকার আন্দোলনের কোনো ইতিহাস-ই জানেন না।

 

চার

ইসলামে নারীদের অনেক বেশি অবদান ছিলো। যেমন,
১। ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীরা সব সময় এগিয়ে ছিলো। যেমন, প্রথম মুসলিম ছিলেন খাদিজা (রা)। রসূল (স)-এর দাওয়াতি জীবনের শুরুতেই তাঁর সকল ফুফু ইসলাম গ্রহণ করেছেন, কিন্তু তাঁর সকল চাচা ইসলাম গ্রহণ করেন নি। আবু বকর (রা)-এর বাবার আগে তাঁর মা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ওমর (রা) এর আগে তাঁর বোন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ইসলামের প্রাথমিক যুগে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন, সবার মায়েরা ইসলাম গ্রহণ করলেও সবার বাবারা ইসলাম গ্রহণ করেনি।
২। ইসলামের প্রথম শহীদ ছিলেন সুমাইয়া (রা)।
৩। ইসলামের প্রথম মসজিদ অর্থাৎ মসজিদে নববী পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো একজন নারী সাহাবীকে।
৪। পবিত্র কোর’আনের মূল কপিটি সংরক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন একজন নারী, এবং তিনি হলেন উম্মুল মুমিনিন হজরত হাফসা (রা)।
৫। হুদাইবিয়ার সন্ধির পর রাসূল (স) সাহাবীদেরকে কোরবানি করার আদেশ করার পরেও সাহাবীগণ রাসূল (স)-এর কথা শুনছিলেন না। রাসূল খুবই চিন্তিত ও বিষণ্ণ হয়ে পড়লেন। তখন উম্মু সালামাহ (রা:) রাসূল (স)-কে সবার আগে নিজে কোরবানি করার পরামর্শ দেন। এরপর সকল সাহাবী কোরবানি করতে শুরু করেন।
৬। মুসলিমরা মারা গেলে সেই মৃত ব্যক্তিকে খাটিয়াতে বহন করার প্রথা চালু হয় একজন নারীর পরামর্শে, এবং তিনি হলেন হজরত আসমা বিনতে উমাইশা (রা)।
৭। মহানবী (স) এর ছেলে ও মেয়ে উভয় ছিলো। কিন্তু, ছেলেরা তাঁর বংশ রক্ষা করেননি, তাঁর বংশ রক্ষা করেছেন তাঁর মেয়ে ফাতিমা (রা)।

 

পাঁচ

যুদ্ধে ক্ষেত্রেও মুসলিম নারীদের অনেক অবদান ছিলো।

উহুদ যুদ্ধে মুসলিম যোদ্ধাদেরকে পান পান করাতে যে নারীরা গিয়েছিলেন, তাদের একজন হলেন হজরত নুসাইবা বিনতে কাব (উম্মু আম্মারা)। তিনি যখন দেখতে পেলেন, মুসলিমরা বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে, এবং রাসূল (স)-কে সকল পুরুষ সাহাবীরা ঘিরে ফেলেছেন, তখন তিনি নিজেই তরবারি হাতে নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

কেবল উহুদ যুদ্ধে নয়, অন্যান্য যুদ্ধেও তিনি অংশ গ্রহণ করেছেন। যেমন, তিনি খাইবারের যুদ্ধে, হুনায়েনের যুদ্ধে, মক্কা অভিযানে অংশ গ্রহণ করেছেন। এবং রাসূল (স)-এর মৃত্যুর পর ভণ্ড নবী মুসাইলামার বিরুদ্ধে ইয়ামামার যুদ্ধেও অংশ গ্রহণ করেন।

বর্তমানে ফিলিস্তিনে দখলদার ইহুদীদের বিরুদ্ধে মুসলিমরা যে জিহাদ করছে, তা সারাবিশ্বের মুসলিমদের নিকট একটি সত্যিকারের জিহাদ হিসাবে স্বীকৃত। এই জিহাদে মুসলিম নারীদের অংশ গ্রহণ এতো বেশি যে, মিডিয়ায় কেবল তাঁদের ছবিগুলোই বারবার ঘুরেফিরে আসে। একজন অস্ত্রধারী ইহুদী সেনাবাহিনীকে একজন মুসলিম মেয়ে শিশু যেভাবে ধমক দিয়েছেন, তা দেখেই মুসলিম নারীদের ক্ষমতা বুঝা যায়।

একজন ফিলিস্তিনি মেয়ে শিশুর চেয়েও আমাদের নারীবাদীরা অনেক বেশি অকর্মণ্য।

ইসলামে নারীদের অধিকারের ইতিহাস নিয়ে বাংলা ভাষায় চমৎকার একটি আলোচনা করেছেন স্যার আলী আশরাফ। সবার জন্যে সেই ভিডিওটি ইউটিউবে আপলোড করে দিলাম।

 


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন