মেইক ইউরসেল্ফ (রুপচর্চা,পারসোনালিটি,ক্যারিয়ার,স্বাস্থ্য)

স্থুলতা ও ১২ টি প্রশ্নোত্তর

স্থুলতা ও ১২ টি প্রশ্নোত্তর

১. স্থুলতা বলতে কি বোঝায়?

উত্তর : যদি দেহ মধ্যস্থ ফ্যাটের পরিমাণ আদর্শ ওজনের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রে ১৫% ও পুরুষদের ক্ষেত্রে ১০% বেশি হয় তবে ওই অবস্থাকে বলা হয় স্থুলতা।

২. বি এম আই নির্ণয়ের সূত্রটি কি ও মান নির্দেশিকাটি কি?

উত্তর : আপনি স্থুল, স্বাভাবিক নাকি শীর্ণকায় তা নির্ণয় করতে পারবেন. BMI (বডি মাস ইনডেক্স) পদ্ধতির মাধ্যমে। বি এম আই নির্ণয়ের সূত্র: এখানে ওজন কেজিতে এবং উচ্চতা মিটারে মাপা হয়। তারপর ওজনকে উচ্চতার বর্গফল দিয়ে ভাগ করেই বি এম আই এর মান পাওয়া যাবে।

বিএমআই= ওজন (কেজি)/ উচ্চতা (মিটার ^২)।

বি এম আই এর মান নির্দেশিকা:

 

        “বি এম আই মান

              ফলাফল

      ১৮ এর নীচে

দেহের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম।

 

১৮.৫ থেকে ২৪.৯

সুস্বাস্থ্যের আদর্শ মান।

 

      ২৫ থেকে ২৯.৯

শরীরের অতিরিক্ত ওজন

 

      ৩০ থেকে ৩৪.৯

মোটা হওয়ার প্রথম স্তর।

      ৩৫ থেকে ৩৯.৯

মোটা হওয়ার দ্বিতীয় স্তর।

      ৪০ এর উপরে

মৃত্যু ঝুঁকি সম্ভাবনা। জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।

 

 

৩. স্থুলতার পেছনে কি কি কারণ থাকতে পারে?

 উত্তর: কারণসমূহ :

১. বংশগত

২. অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন -কায়িক পরিশ্রম না করা, অধিক ভোজন, নিয়মিত উচ্চ ক্যালোরি ও উচ্চ ফ্যাট গ্রহণ, অতিরিক্ত বা অপর্যাপ্ত ঘুম।

৩. মানসিক চাপ, বিষন্নতা, হতাশা।

৪. বিভিন্ন রোগ -হরমোন জনিত সমস্যা (থাইরয়েড, সুপ্রারেনাল, পিটুইটারি), কুশিং সিনড্রোম, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম।

৫. কিছু মেডিসিন সেবন :স্টেরয়েড, বার্থ কন্ট্রোল পিল।

৪.অতিরিক্ত ওজন থেকে কি কি রোগ হতে পারে?

উত্তর: রিস্ক ফ্যাক্টর: লিভারের রোগ (ফ্যাটি লিভার, সিরোসিস) , হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস, প্যানক্রিয়াটাইটিস, গলস্টোন, স্ত্রী রোগ -মাসিকের অস্বাভাবিকতা, বন্ধ্যাত্ব, উচ্চরক্তচাপ, আথ্রাইটিস, গাঁউট, ক্যান্সার (ব্রেস্ট, কোলন, জরায়ু, কিডনি, প্রোস্টেট) , ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস।

 ৫.ওজন নিয়ন্ত্রণের কার্যকর উপায়গুলো কি কি?

উত্তর : ওজন কমানোর কার্যকরী পদক্ষেপ সমূহ :

১. প্রথমেই আপনাকে ওজন কমানোর জন্য মনস্থির করতে হবে। তারপর প্রতি মাসে ২ -৩ কেজি ওজন কমানোর লক্ষ্য রাখু...। কেননা দ্রুততম সময়ে বেশি ওজন কমাতে গেলে আপনি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন।

২. অধিক ক্যালোরিযুক্ত ও অধিক চর্বিযুক্ত খাবারের পরিবর্তে খাদ্যতালিকায় রাখু... কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার।

৩. ভাত খাওয়া শুরু করার আগে অল্প পরিমাণ সালাদ খেয়ে নিন। প্লেটে ভাতের পরিমাণ থাকবে অল্প কিন্তু সবজি থাকবে বেশি।

৪. প্রতিদিন ৩০ - ৪০ মিনিট দ্রুতগতিতে হাঁটা /জগিং /ওজন কমানোর ব্যায়ামগুলো করুন।

৫. ব্যায়াম ও ডায়েটিং এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ৮ - ১০ গ্লাস পানি পান করুন।

৬. ওজন কমাতে গিয়ে কখনোই অনাহারে থাকবেন না। এতে লো ব্লাড সুগার, গ্যাসট্রিকের সমস্যা, শরীর দূর্বলতা সহ বিভিন্ন হতে পারে।

 ৬. কোন খাবারগুলো কম ক্যালোরিযুক্ত?

উত্তর : ওজন কমানোর জন্য কম ক্যালোরিযুক্ত খাদ্যসমূহ : শাকসবজি :পালংশাক, বথুয়া শাক, মেথিশাক, ধনে, পুদিনা, মুলা শাক, বাঁধাকপি, শসা, ফুলকপি, গাজর, টমেটো, পটল, লাউ, কুমড়া, ঢেড়স, করল্লা, ক্যাপসিকাম, ধুন্দুল, বরবটি।

স্যুপ :টমেটো স্যুপ, মটর স্যুপ।

 ফল :পেয়ারা, কমলা, লেবু, নাশপাতি, আনারস, বেদানা, ফুটি, তরমুজ, আলুবোখারা। ৭. ওজন কমানোর জন্য কোন ধরনের পরিশ্রম করা উচিত?

উত্তর : ওজন কমানোর জন্য যেসব পরিশ্রম করা যেতে পারে সেগুলো হলো - দ্রুত বেগে হাঁটা, জগিং, বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম, সাঁতার, স্কিপিং, খেলাধূলা, সাইকেল চালানো। দ্রুতগতিতে হাঁটলে প্রতি মিনিটে ছয় থেকে আট ক্যালোরি, জগিংয়ে সাত থেকে নয় ক্যালোরি খরচ হয়।

৮. ব্যায়ামের বিশেষ কোন নিয়মকানুন ও বিধিনিষেধ আছে কি?

উত্তর :

১. ভরা পেটে ব্যায়াম একদমই করবেন না। তবে খুব বেশি খিদে পেলে তো কষ্ট হবেই। তাই শুরুর আগে দুটি টোস্ট বা একটা আপেলের মতো হালকা কিছু খেতে পারেন।

২. খুব টাইট বা শক্ত পোশাক পরে ব্যায়াম করা ঠিক না। টাইট পোশাক পরলে আপনার করা ভঙ্গিমা কোথাও বাধা পেতে পারে। এর ফলে ব্যায়ামের পুরো সুফল পাবেন না।

৩. জোরে হাঁটা, জগিং বা পায়ের ওপর চাপ পড়বে এমন ভারী ব্যায়াম করার আগে অবশ্যই ভালো ট্রেনিং শু পরবেন। তা না হলে পায়ের সন্ধি বা কোষগুলোতে চাপ পড়ে তো ব্যাথা করবেই, সাথে সাথে পিঠেও ব্যাথা হতে পারে।

৪. ব্যায়াম করার সময় নিঃশ্বাস স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। কখনও খুব কষ্ট করে নিঃশ্বাস নেবেন না। ভালোভাবে নিঃশ্বাস যেন নিতে পারেন এমন করেই ব্যায়াম করবেন। তবে আসন বা যোগব্যায়ামের সময় নিঃশ্বাস নেওয়ার রীতি অবশ্যই আলাদা। এক্ষেত্রে পুরোপুরি আসনের নিয়ম মানতে হবে।

৫. শুরুতেই অনেক সময় ধরে অনেক ভারী ব্যায়াম করবেন না। প্রথমে হালকা ব্যায়াম কম সময় ধরে করুন। প্রতিদিন একটু একটু করে বাড়ান।

৬. ব্যায়াম করার সময় শারীরিক কষ্ট হওয়া মাত্র ব্যায়াম থামিয়ে দেবেন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ বা প্রশিকের পরামর্শ নিন।

৭. যদি এক ঘণ্টা ব্যায়াম করেন তাহলে প্রথম চার-পাঁচ মিনিট হালকা ও ধীর লয়ের ব্যায়াম করবেন। শেষের দু-তিন মিনিটও তাই।

৮. যে ব্যায়ামই করুন না কেন, শুরুতেই সামান্য স্ট্রেচিং ও ওয়ার্ম আপ অবশ্যই করবেন। না হলে পেশি ও লিগামেন্টে আঘাত লাগার সম্ভাবনা থাকে।

৯. বিভিন্ন রোগ ও গর্ভকালীন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ব্যায়াম করা উচিত নয়। এছাড়াও যেকোনো ধরনের ব্যায়াম বা ডায়েট পরিকল্পনার জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা উত্তম।

১০.অতিরিক্ত ব্যায়াম স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। গবেষকদের মতে এক ঘন্টার বেশি ব্যায়াম করা অনুচিত।

৯.হাঁটার আদর্শ নিয়ম কি?

উত্তর : হাঁটার আদর্শ নিয়ম হলো এ সময় শ্বাসপ্রশ্বাস হালকা বেড়ে যাবে, হালকা গরম অনুভূত হবে এবং অল্প অল্প ঘাম দেখা যাবে। কিন্তু কথা বলতে কোন প্রকার অসুবিধা হবে না।

১০.ডায়েটিং বা ব্যায়াম ছেড়ে দিলে আবার ওজন বেড়ে যেতে পারে কি?

উত্তর: হ্যাঁ ডায়েটিং ও ব্যায়াম ছেড়ে দিলে আবার ওজন বেড়ে যেতে পারে। তাই এই দুটিকেই আপনার ডেইলি রুটিনে নিয়ে আসতে হবে।

১১. ওজন মাপার আদর্শ সময় কোনটি?

উত্তর : ওজন মাপার সঠিক সময় হলো সকালে খালি পেটে। আর এক থেকে দুই সপ্তাহ পর পর ওজন মাপলেই যথেষ্ট।

১২. ওজন কমাতে বিভিন্ন মেডিসিন, ফুড সাপ্লিমেন্ট, ম্যাসাজ অয়েল বা ক্রিমের বিজ্ঞাপন প্রচার করতে দেখা যাচ্ছে। আমরা এসব গ্রহণ করতে পারি কি?

উত্তর : চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন প্রকার মেডিসিন বা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন । তাই চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট না হয়ে তা এড়িয়ে চলুন।

 


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)