ইতিহাসের পাতা থেকে

জলকণা

জলকণা
কখনো সময়ের ফাঁকে জেনে রেখো এই ব্যস্ত শহরে এতোটুকু অবসরের জন্যে হন্যে হয়ে থাকা বিকেল গুলোয় তুমি আমার ছিলে না ... জলকনার আজ মন খারাপ । মন খারাপের দিন গুলো খুব একা কাটে বলেই হয়তো জলকনার বিছানায় রাখা স্পাইরাল বাইন্ডিং করা খাতার পাতায় পাতায় ভরা অদ্ভূত সব পংক্তি । হয়তো তা কখনোই কবিতা নয় , জলকনা কবিতার অত হিসেব জানে না , মাত্রা , চরণ নির্মানেও হয়তো ভুল থাকে , তবু জল লিখে লিখে খাতা ভরিয়ে ফেলে ... অনেক আগের কোন এক সোনা ঝরা সন্ধ্যায় সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দিয়েছিলো এক কাঁচের শিশিতে ভালো লাগার মানুষকে উদ্দেশ্য করে মনের নিংড়ানো আবেগ , জলকনা সবসময় চাইতো ওর জীবনে কোন মিরাকল ঘটুক , ওর চাওয়া নিখাঁদ ছিলো ঠিকই কিন্তু সময় আজকাল বড় পানশে , ডিজিটাল এর যুগে নাটকীয়তা হয়তো ঘটে কিন্তু রূপকথার মতো তো নয়ই ! জলকনার অতশত ভাববার প্রয়োজন ছিলো না , সে শুধু অপেক্ষায় থাকতো উত্তরের , প্রাণপনে বুকের মাঝে একটা স্বপ্নকে বেঁধে রেখেছিলো .. উত্তর আসবে নিশ্চয়ই ! যেদিন গুলোতে পরম সত্যিটা মনের আশেপাশে গুনগুনিয়ে যেতো সেদিন গুলোতে জলকনার ভারী থমথমে থাকতো মুখ আর ভারী হতে থাকতো সেই খাতা ! জলকনার প্রিয় বন্ধুটির নাম সমুদ্র , দুজনের পরিচয় অন্তর্জালের কোন এক বকর বকর বাক্সে , আজ পর্যন্ত দেখা হয়নি তাদের , জলের তাতে খুব দুঃখ যদিও সমুদ্র গা করে না , জলকনা যখনি সাক্ষাত প্রসঙ্গ তুলে সমুদ্র কীবোর্ডে ঝড় তুলে না দেখা হবার সুফল লিখে লিখে জলকনার ল্যাপটপের স্ক্রীণ ভরে ফেলে ! সমুদ্র খুব বাউন্ডুলে , মাঝে মাঝেই কই কই যেন ডুব দেয় , একমাত্র বন্ধুটির এরকম আচরণে জলকনার বিরক্তি লাগে খুব ... অভিমানে মন ভারী হয়ে যায় .. হবেই বা না কেন ? ওর কি দশটা পাঁচটা বন্ধু আছে আর ? সমুদ্রের খুব ভাব বেড়েছে , জলকনার মেজাজ খিঁচে , বিগড়ে যায় , ডুবন্ত সমুদ্রের পাত্তা নেই ! তার ও কদিন বাদে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে আসে জল । একবিকেলে ওর রুমের গরাদ ছাড়া জানালায় দাঁড়িয়ে কাকচক্ষুর মত জলে টুপটুপ পুকুরের পাড়টা দেখে বসার লোভ হয় খুব ! গ্রামে জলকনাদের খুব নাম ডাক , এখনো আগে পিছে মানুষের লাইন পড়ে যায় ওরা গেলে ! এই বিকেলটা কেমন করে ফাঁকা হলো কে জানে ? জল পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে থাকে ! সমুদ্রের জন্য মনের ভেতর ঝড় উঠে খুব , ছেলেটা খুব খারাপতো ! সব বোঝে তবু কিছু বলে না কেন ? হঠাত্ বাঁধ ভাঙ্গে চোখের নদী ! হাঁটুতে মুখ গুঁজে মনটাকে শান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টায় ক্লান্ত জল পুকুরের পানি দেখে চমকে ওঠে ! ওতে শুধু ওর ছায়া নয় , ওখানে আরো কেউ আছে !! ছায়া হাত বাড়িয়ে দেয় , জল ও কী ভেবে হাত বাড়ায় ...তারপর ... জলকনার বাড়িতে শোকের মাতম ওঠে ! জলকনা যে অন্যরকম মানুষ তা কি আর সবাই জানতো ? জলকনা যে জলের মেয়ে সেকথা ভুলেছিলো সবাই একমুহুর্তের জন্য আর তখনি মেয়ে মিশে গেলো জলে ! গভীর রাতে জলকনা স্থলের পৃথিবী দেখে আর সারাবেলা জলের ! ওদিকে সমুদ্র জলের সাথে কথা বলতে আকুল হয়ে আছে , সৈকতে পেয়েছে এক কাঁচের শিশি ,সাথে ছোট চিরকুট- ‘‘হয়তোবা বারবার ছুটে আসি বলা হয়না মরমে নিখুঁত আচড় কেটে করো তুমি হৃদয়ে ক্ষত নির্মাণ জলের সায়রে ভেসে তবু কাছাকাছি আসি হয়তোবা ভালবাসি…!’’ সমুদ্র জলকে অনেক ভালবাসে , কিন্তু যেদিন শুনেছিলো জলের ছেলেমানুষী ভাবনা গুলোকে নিজেকে শামুকের মত খোলকে আটকে রেখেছিলো ! সত্যি কথা বলতে দোষ নেই , নিষ্পাপ জলের একটু খানি ভালবাসা পাবার আকাঙ্খা গুলো বেশ উপভোগ করত সমুদ্র ! কাকতালীয় হোক আর যাই হোক , জলের ভাসানো কাঁচের শিশি যখন সমুদ্র হাতে পেলো বুঝতে আর বাকি থাকেনা সমুদ্রের হয়তো ওদের মাঝে কিছু সত্যিই আছে ! জলকে ছোট ছোট বার্তা পাঠায় সমুদ্র THERE IS SOMETHING CALLED MIRACLE , YOU CANT IGNORE OR EXPLAIN IT..... জলের দেখা নেই ! সমুদ্র কষ্ট পায় , রাতের পর রাত পিসির স্ক্রীণে তাকিয়ে থাকে এই বুঝি জল এলো ! কিন্তু অভিমানী জলকন্যার দেখা মেলে না ! সমুদ্রের ইচ্ছে করে ছুটে বেড়িয়ে যেতে , কোথায় তুমি জলকনা ? কোথায় ?? হতচ্ছাড়া চোখের জলে সমুদ্রের বালিশ ভিজে যায় , ঝাপসা হয়ে যায় বইয়ের পাতা ! জলজোছনার রাতে জলকণা স্থলে ফিরে আসে । জোছনার আগের রাতে জলপৃথিবীটা কেমন অসহ্য ঠেকতে থাকে জলকণার কাছে , সব ওলট পালট লাগে , জলের ভেতরে ঝড় ওঠে , ঝড়ের কারণটা অবশ্যিই সমুদ্র । কোথাকার কোন অপরিচিত একজনের জন্যে অপেক্ষা করতে করতে অতি আপন সমুদ্রকে কাছে টেনেও টানে নি , সমুদ্র ও ঠেলেছে দূরে কিন্তু সে রাতে জলকনা বুঝতে পারে যার জন্য এতো আয়োজন সে সমুদ্রই , সমুদ্র ছাড়া আর কেউ নয় । জলের গ্রামের বাড়ীর সেই পুকুরের শান বাঁধানো ঘাটে জলজোছনার গভীর রাতে এক সুপুরুষ বসে ছিলো , তার চোখেও জলের খেলা ! জল তখনো ভাবেনি তার অতি ভালবাসার সমুদ্র তার সামনেই বসে আছে ! সমুদ্র চোখে জল নিয়ে আবেগে দু হাত বাড়ায় , জলকণা আমার ঘাট হয়েছে , কানে ধরছি আর ডুব দেবো না ! সেকি ! আমায় চিনতে পারো নি ? আমি সমুদ্র ! জল ছাড়া কি সমুদ্র বাঁচে ? জলকণা একবার হাসে , একবার কাঁদে ! আনন্দ অশ্ম্রু জোছনার নীল আলোয় চিক চিক করতে থাকে ! *** নীরা এই সমস্ত আবোল তাবোল শুধু তোমার পক্ষেই লেখা সম্ভব ! এটা কি হলো , রূপকথা না কি ?ধ্যুত্ টাইম নষ্ট !! ছোট্ট করে মেইল পাঠালো সায়ন । নীরার চোখের জলে তখন ল্যাপটপের স্ক্রীনে থাকা ছোট ছোট লেখা গুলো অস্পষ্ট হয় ! নীরা চোখ মুছতেই তা আবার জলে ভরে যায় , পৃথিবীতে একমাত্র সায়নই হয়তো আছে যে তাকে এতো কাঁদানোর অধিকার রাখে ! পাল্টা মেইলের উত্তর পাঠায় নীরা .. কোন একদিন এক সোনা ঝরা বিকেলে সমুদ্রের পাড়ে বসে একটু কি তোমার দৃষ্টি খুঁজবে আমায় ? একটু কি ঝরাবে জল ? একটু কি ভাববে , কেউ চেয়েছিল একসাথে থাকতে এই বিকেলে ... ভালবেসেছিল বলে ... মেইল পেয়ে খানিক্ষণ হাসে সায়ন ! নাহ্ মেয়েটা পাগল আছে , এই পাগল মেয়েটাকে ও কতোটা ভালবাসে তা কি করে বলবে ও ? ওর তো এতো কাব্য আসে না ! ধুর সব ভালবাসায় কাব্য লাগে না ! হাসতে হাসতে নীরার মেইলের উত্তর দেয় সায়ন দেখো , আমার অতো কাব্য আসে না , রুপকথার নায়কের মতো রোমান্টিকতাও নাই আমার , তবে বলি কি সমুদ্র ধারে একা থাকার চেয়ে জলকণার সাথে বিকেলে আমার ছোট ফ্ল্যাটের বারান্দায় ট্রাফিক জ্যাম দেখা মনে হয় খুব পছন্দ হবে আমার ! বাকিটা জলকণার ইচ্ছে ! নীরা রিপ্লাই পেয়ে হাসে ... কিন্তু ওর চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র জল ... হয়তো বা এতো সুন্দর কোনো দৃশ্যের জন্যেই পৃথিবী থেকে এখনো ভালবাসা মুছে যায় নি !-

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন