ফ্রিল্যান্সিং এখন শুধু ছেলেদের কাজ নয়। সম্ভাবনাময় এ কাজের ক্ষেত্রে নারীরাও এগিয়ে এসেছে। নিজেদের যোগ্যতায় জায়াগা করে নিচ্ছে অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে। দেশের নারীরাও পিছিয়ে নেই। নিজেদের মতো করে কাজ শিখে আয় উপার্জন করছে তারা। আনছে বৈদেশিক মুদ্রা।
তবে দেরিতে হলেও বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকার এগিয়ে এসেছে নারী ফ্রিলান্সারদের সংখ্যা বাড়াতে। এজন্য বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ দেয়াসহ নানা রকম প্রণোদনা কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়।ফ্রিল্যান্সিংয়ে নারীদের উৎসাহিত করতে গত শনিবার হাই-টেক পার্ক ও ক্রিয়েটিভ আইটি যৌথভাবে দেশ সেরা ১০ নারী ফ্রিলান্সার নির্বাচিত করে।
তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তাদের হাতে স্বীকৃতি স্মারক তুলে দেন।

আমেনা আক্তার:
এসইও বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে গ্রাফিক ডিজাইন শিখছেন। নারীদের জন্য ধরাবাঁধা চাকরির চেয়ে ফ্রিল্যান্সিংকে এগিয়ে রাখেন তিনি। ২০১১ থেকে ফ্রিল্যান্সিং করে আসছেন।
বর্তমানে মেয়েদেরকে হাতে-কলমে ফ্রিল্যান্সিং শেখাতে গড়ে তুলেছেন টেরিস্টেরিয়াল আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। খুব শিগগিরই মেয়েদের নিয়ে ব্যাচ চালু করার কথা ভাবছেন বলে জানালেন তিনি।
তানিয়া তাহমিনা:
শুরুতে অনলাইন মার্কেট প্লেসে কাজ করার ব্যাপারে বন্ধুদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পান। কাজ শিখেছেন নিজের চেষ্টায়। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে এসইও এর প্রথম ক্লায়েন্ট পান। সেই শুরু, আর কখনো পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
বর্তমানে এইচটিএমএল কোডিংয়ের কাজে দক্ষতা অর্জন করেছেন। কম্পিউটার বিজ্ঞানের এই ছাত্রীর অনলাইন মার্কেটপ্ল্যাস নিয়ে আছে হাজারও স্বপ্ন। নিজেকে আরও শানিয়ে নিতে শিখছেন গ্রাফিক্স, জাভাস্ক্রিপ্ট, পিএইচপি। ভবিষ্যতে একজন উদ্যোক্তা হতে চান তানিয়া। তার মতো আরও অনেক মহিলার কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে নিজেই একটি ফার্মও দাঁড় করাতে চান।

নাইমা চৌধুরী:
চাকরি জীবনের নানান তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই ফ্রিল্যান্সিং বেছে নেন। অবশ্য বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত নারী ফ্রিল্যান্সার ইমরাজিনা খান এবং মারজান আহমেদের গল্প তাকে উদ্বুদ্ধ করে। সে সময় আউটসোর্সিং নিয়ে বিভিন্ন সেমিনার ও ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেন।
২০১৩ সালের ক্রিয়েটিভ আইটিতে কোর্স করে লেগে পড়েন কাজে। অনলাইন প্লাটফর্মে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরির পাশাপাশি নিজের একটা ছোট্ট টিম দাঁড় করানোর স্বপ্ন দেখেন নাইমা।
তানজিন আক্তার মুনমুন:
মার্চেন্ডাইজার হিসেবে শুরু করলেও মা হওয়ার পর ফ্রিল্যান্সিংকেই ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেন। অনলাইনে অধিকাংশ সময় সক্রিয় থাকায় মার্কেটপ্লেসেগুলোতে উপার্জনের রাস্তা খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়নি তার। অবশ্য এই নতুন যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালে।
বর্তমানে গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করেন মুনমুন। তবে ওয়েব ডিজাইন এবং এসইওতে রয়েছে তার সমান দক্ষতা। ফ্রীল্যান্সিং করে অর্থ উপার্জন করাকে নারীর জন্য অনেক ভাল সুযোগ বলে মনে করেন তিনি। এ পেশায় আগত নারীদের সাহায্য করতে চান মুনমুন।
জিনিয়া সওদাগর জ্যোতি:
মায়ের উৎসাহ পেয়েই ফ্রিল্যান্সিংয়ে পথ চলা শুরু তার। কাজ শিখেছেন নিজে নিজেই। ২০১৩ সাল থেকে ফ্রিলান্সিং করে আসছেন। বর্তমানে ওয়েবরিসার্চ, আর্টিকেল রাইটিং, এসইও বিষয়ক কাজ করছেন। ইন্টারনেট ও কম্পিউটারের ব্যবহার জানায় এবং ইংলিশ লিটারেচারের ছাত্রী হওয়ায় তার সফলতা এসেছে অন্যান্যদের চেয়েও দ্রুত।
জ্যোতি শুধু নিজেকে নিয়ে নয়, স্বপ্ন দেখছেন প্রতিবন্ধী এবং দরিদ্রদেরকে প্রশিক্ষিত করে অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়তে সহযোগিতা করতে।
আয়েশা সিদ্দিকা:
আর্টিকেল রাইটিং দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে কাজ করছেন গ্রাফিকস নিয়ে। কম্পিউটারে কাজ করার প্রবল ঝোঁক থেকেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন আয়েশা সিদ্দিকা। ব্লগিংয়ে তিনি সিদ্ধহস্ত। ২০১০ থেকে তার ব্লগে লেখালেখির শুরু, তবে ২০১১ সাল থেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আর্টিকেল রাইটিংয়ে আসেন।
সে সময় ক্রিয়েটিভ আইটির ১০০ নারী স্কলারশিপ ব্যাচে গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের উপর কাজ শেখার সুযোগ পান। সেই থেকেই গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে অনলাইন মার্কেটে কাজ করছেন। সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের কাজ শেখাতে চান আয়েশা সিদ্দিকা।
ফৌজিয়া ইয়াসমিন শ্রাবণী:
স্বাধীনভাবে কাজ করার ইচ্ছে থেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ে আসেন তিনি। কলেজ জীবনেই খুলেন একটি ফ্যাশন হাউজ। কিন্তু পড়াশোনার চাপে তা বন্ধ করে দিতে হয়। তার বোন ওডেক্সে এসইও’র কাজ করতেন। পড়াশোনা সমাপ্ত করে বোনের সহায়তায় তিনিও এই কাজ শুরু করেন। প্রথমে বিরক্তি লাগলেও পরে কাজে মন বসে যায়।
২০১১ সালে এসইও দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করে হয়ে উঠেন পুরাদস্তুর অনলাইন পেশাজীবি। এসইও’র কাজ করেই মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করছেন বর্তমানে।
ওয়েব ডিজাইন, ইমেইলমাকেটিং ও এসএমএম এর কাজেও বেশ পটু তিনি। বর্তমানে ক্রিয়েটিভ আইটিতে এসইও’র কাজ শেখান। শ্রাবনীর নিজের একটি টিম আছে। ভবিষ্যতে এই টিমকে আরও বড় করার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিংয়ে আগ্রহীদের গাইডলাইনও দিতে চান তিনি।
ফারজানা তিথি:
সংসারের কাজের ফাঁকে অনলাইনে আয় করেন তিনি। ২০১৪ সাল থেকে ফ্রিল্যান্সিং শুরু তার। বর্তমানে ক্রিয়েটিভ কিটেন্স নামে একটি গ্রুপের সদস্য হয়ে কাজ করছেন।
মূলত তিনি একজন আর্টিস্ট। শুরু থেকেই গ্রাফিকস নিয়ে কাজ করছেন। নারীদের কাজ শেখাবেন এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির পরিকল্পনা আছে তারও।
জুঁই সাহা:
চাকরিতে মেয়েদের নানা রকম প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। তাই আগে থেকেই সে পথে যাবেন না বলে ঠিক করে রেখেছিলেন জুই। নিজে কিছু করবেন এমন ভাবনা আর বন্ধুদের উৎসাহ পেয়ে ২০১১ সাল থেকেই ফ্রিলান্সিং শুরু করেন।
এসইও এবং ইমেইল মার্কেটিং নিয়ে রয়েছে তার বিশেষ দক্ষতা। মাসে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেছেন তিনি। তবে আরও ভালো ক্লায়েন্ট পেতে ওয়েব ডিজাইনের কাজ শিখছেন।
শবনম ইয়াসমিন:
মা হবার পর চাকুরী ছেড়ে দিয়ে পুরোদস্তুর ফ্রিল্যান্সার বনে যান। বাসার অন্যান্য কাজের পাশাপাশি দিনে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ফ্রিল্যান্সিংয়ে ব্যয় করেন। ২০১৩ সালে ক্রিয়েটিভ আইটি থেকে গ্রাফিক ডিজাইনে স্কলারশিপ পান।
কোর্স শেষ করে ২০১৪ সালের জুন থেকে কাজ করে আসছেন। বর্তমানে ওডেস্কে আর্টিকেল রাইটিং, এসইও এবং গ্রাফিকস নিয়ে কাজ করছেন। ভবিষ্যতে ওয়েবডিজাইন শিখতে চান তিনি।
Souce: techshohor
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)