ফিল্ম ও মিডিয়া

শ্রেষ্ঠ হ্যান্ডসাম পুরুষ!

শ্রেষ্ঠ হ্যান্ডসাম পুরুষ!
মনে হচ্ছে সমাজের অর্ধাংশ তথা পুরুষ জাতি- নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়- যে কারণে বাকি অর্ধাংশ তথা নারী জাতি বিপথে যাচ্ছে। লক্ষ্যণীয়,  প্রতিবছর আমাদের দেশে সুন্দরী প্রতিযোগিতা যখন আয়োজিত হয়- তখন কার্যত কারণেই সচেতন নর-নারী এর বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, কিন্তু গতমাসে শ্রেষ্ঠ পুরুষের খোঁজে চ্যানেল আই ইমামী হ্যান্ডসাম প্রতিযোগিতা হয়ে গেলো, অথচ কেউ এর প্রতিবাদ করলো না। যদিও পুরুষদের মধ্যে থেকেই আওয়াজ উঠার প্রয়োজন ছিলো। আচ্ছা, ছেলেরা স্যুট-টাই লাগানো ছিলো বলেই কি এসবের আড়ালে পুজিতান্ত্রিক সমাজের মন্ত্রটা কেউ বুঝলো না? প্রথমেই বলবোঃ শ্রেষ্ঠ পুরুষের সংজ্ঞা কি? যে দেখতে ফর্সা? ব্র্যান্ডের শার্ট, পারফিউম, ওয়ালেট, কাফলিং, ঘড়ি, দামী মোবাইল ব্যবহার করে? আমার তো মনে হয়- এসব কখনোই একটা মানুষের  শ্রেষ্ঠত্বের মানদিন্ড যাচাই করে না। “তোমাদের মধ্যে সেই শ্রেষ্ঠ- যার তাকওয়া (আল্লাহভিরুতা বা পরহেজগারিতা) সবচেয়ে উত্তম (সূরা হুজুরাত-আয়াতঃ ১৩)”। তা, এই  তাকওয়া অর্জনের প্রতিযোগিতা ছেলেরা করছে কি? হ্যা, অনেকেই আছেন ধর্মের নাম শুনলে- বিরক্ত হোন, তাদের উদ্দশ্যে বলি- তাকওয়া মানে এই নয় যে সারাদিন নামাজ আর তজবিহ নিয়ে থাকতে হবে। বরং শ্রেষ্ঠ সেই ব্যক্তি, যে তার স্রষ্ঠাকে ভয় করে,  সেটা থেকে বিরত থাকে যেটা থেকে আল্লাহ বিরত থাকতে বলেন, যে তার জীবনের প্রতিটি কাজে আল্লাহ’র সন্তুষ্টি চায়, সেই পথে পরিচালিত হওয়ার চেষ্টা করে এবং সময়মত নির্ধারিত ইবাদত করে। আরেকটা প্রশ্নঃ হ্যান্ডসাম কাকে বলে? মূলত  ব্র্যান্ডের জিনিস ব্যবহার থেকে শুরু করে ছেলেদেরকে অতিরিক্ত প্রসাধনীর প্রতি আকৃষ্টপূর্বক   হ্যান্ডসামের সংজ্ঞায় এমনটাই শেখানো হয় যে-‘যখন তোমাকে পাওয়ার জন্য কয়েকটা মেয়ে পাগল হয়ে যাবে , মনে রেখো-তারা যাতে পাগল হয় তুমি তেমনভাবে নিজেকে প্রকাশ করবে, তবে প্রকৃতপক্ষে এদের কাউকেই তুমি পাত্তা দিবে না। তখনই তুমি হ্যান্ডসাম’। বাহ কি চমৎকার সংজ্ঞা! (আমার বিশ্লেষণ যাচাই করতে ছেলেদের প্রসাধনীর বিজ্ঞাপনগুলো দেখতে পারেন)। অপরদিকে সাহাবীরা নিজেদের স্ত্রীকে দেখানোর জন্য সাজতেন (ছেলেদের সাজসজ্জা মানে অলংকৃত  হওয়া নয়, বরং পরিপাটি, ক্লান্তি মুক্ত ও ফুরফুরে মেজাজে থাকা)। আর এখনকার পুরুষরা গার্লফ্রেন্ডকে দেখানোর জন্য সাজে, কিভাবে পটানো যায়!  সমাজে পরকিয়া বাড়বে না তো কি হবে? পুরুষদের এটা বুঝা উচিত- স্টেজে পারফর্ম করাটাই কিংবা পরমহিলার সাথে ঢং করে কথা বলাটা স্মার্টনেস নয় বরং নৈতিক আদর্শের মানদন্ডে কথা ও কাজে মিল রেখে সময়টাকে মূল্য দিয়ে উঠাবসা- চালচলন থেকে শুরু করে যেকোনো কাজে অতিরিক্ততা, দৃষ্টিকটু অঙ্গভঙ্গি ও অশ্লীল কথাবার্তা-বর্জন করাই স্মার্টনেস। তবে আফসোস! কি হলো পুরুষজাতির? যাদের জন্য জন্য ‘সাহস’, ‘কর্মঠ’ শব্দটি বেশি ব্যবহৃত হতো- আজ তারা সময় ও শ্রম নষ্টের কুরুচিপূর্ণ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। যেখানে তারা নিজেদের ব্যক্তিত্ব ভু-লুন্ঠিত করে ভোগবাদীদের পুতুলে পরিণত হচ্ছে।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন