
বিগত বেশ কিছু সময় ধরে তথ্য প্রযুক্তির কল্যানে নানা ধরনের মানুষের সাথে “ডিজিটাল” মেলামেশা হচ্ছে। এর উপকারী দিক হল বিভিন্ন মানুষের বিচিত্র মতামত সম্পর্কে জানতে পারছি। মতামত আদানপ্রদান হচ্ছে। ভালই।
তো এরই ধারাবাহিকতায় এমনও কিছু বিষয়ে অবগত হলাম যা অত্যন্ত ভয়ানক। যার মাঝে একটি হল – খোদ মুসলিমদের মনেই ইসলাম নিয়ে সন্দেহ। অনেক নাস্তিক দেখেছি, তর্কেও গেছি। তবে যখন একজন আস্তিক মুসলিম এর মনোভাব একজন জাহিলিয়াতের কাফির এর ন্যায় দেখি, তখন দুঃখের বাঁধ ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়। কিছু বিষয় তাই খোলাখুলি আলোচনার প্রয়োজন বলেই মনে হল।
CONFUSED মুসলিমদের যে প্রধান সমস্যা দেখা যায় তা হলঃ “আধা বিশ্বাস”। অর্থাৎ ইসলামকে সম্পূর্ণ রূপে বিশ্বাস করেতে না পারা। সেদিন একজন বললেন , “ইসলামে যেসব বিষয় বাস্তবসম্মত মনে হয়, সেগুলাই ফলো করি। যেগুলা মনে হয়না, তা করিনা।”
এখন কথা হল ইসলাম কি কোন পোকায় ধরা আপেল? যে যতটুকু ঠিক আছে খেলাম আর বাকিটা ফেলে দিলাম? ইসলাম এর স্রষ্টা আল্লাহ সুবহানাওয়াতা’লা কি আমাদের সে অনুমতি দিয়েছেন? ইসলাম তো কোন মাল্টিপল চয়েজের কোয়েশ্চান নয় যে তিনটা বাদ দিয়ে একটাতে টিক চিহ্ন দেব।
আল্লাহ বলেন,
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম'” (সূরা আল মায়েদা:৩)
স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে স্পষ্ট নির্দেশ এসেছে ইসলামের পরিপূর্ণতার ব্যাপারে। তবুও দুই দিনের পৃথিবীতে লম্ফ-ঝম্ফ করা মানুষ কি করে এর পরিপূর্ণতা নিয়ে মূর্খের মত প্রশ্ন তোলে? একজন মুসলিম যখন কালেমা পড়ে মুসলমান হয় তখন সে এক আল্লাহকেই ইলাহ মেনে নেয়। এরপর যখন এই ইলাহর কোন আদেশকে তাদের “অযৌক্তিক”(?) মনে হয়, তখন তার শপথটাই কি মিথ্যে হয়ে যায়না? যেই আল্লাহ মানুষকে অসাধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটা মগজ গিফট করেছেন, মানুষ নিজের ক্ষমতার ঔজ্জ্বল্যে সেই মগজকেই ইলাহ মেনে নেয়। সেই মগজ যা সঠিক বলে তা-ই সঠিক বলে চাউর করতে চায়। নিজেই তার মত করে যৌক্তিক (??) আইন রচনা করতে চায়।
আল্লাহ বলেন,
“আইন দানের ক্ষমতা একমাত্র আল্লারই” (সূরা ইউসুফ ৪০)
কিছু মানুষ এক কাঠি সরেস। তারা হারাম ও হালালের কারণ জানতে চান। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টা, যিনি “কুন” বললেই সৃষ্টি হয়ে যায়, যার এক মাইক্রো মুহূর্তের ইশারায় অসীম মহাবিশ্ব তুলার মত উড়তে পারে, আমাদের প্রতিটা কোষ, কোষের আণুবীক্ষণিক অংশ যার আদেশ ছাড়া এক মুহূর্ত কাজ করেনা – সেই স্রষ্টার দেয়া বিধানকে তারা করে চ্যালেঞ্জ! তারা প্রশ্ন করে - এটা কেন হারাম? এটা কেন হালাল?
আমাদের মগজটার CAPACITY অনেক। তবে সেই CAPACITY আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় কত, সেই প্রশ্নটা না হয় না-ই করলাম। যিনি এই সমগ্র মহাবিশ্ব তৈরী করেছেন, তাকে তারা বলতে চায়, “আচ্ছা ভালো কথা, আপনার বুচ্ছেন, অমুক আইনটায় প্রব্লেম আছে।” (!!!!!!!)
মূর্খতার একটা লিমিটেশান থাকা উচিৎ ছিল। আফসোস সেটা এই দুনিয়ায় লিমিট ছাড়াই এসেছে।
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“আল্লাহই হলেন আইনদাতা আর তার নিকট থেকেই আইন নিতে হবে” (আবু দাউদ হাদীস নং(৪৯৫৫), নাসায়ী, (৮/২২৬), বায়হাকী (১০/১৪৫) বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত।)
নবীজির শিক্ষক ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ। তিনি তাই বলতেন যা আল্লাহ তাকে বলতে বলতেন। হয়ত এখানেও “আধা বিশ্বাসীদের” CONFUSION রয়ে গেছে।
তারা বলে শারিয়াহ আইন ভুয়া। এইটা কোন কাজের না। গণতন্ত্র হল মুক্তি।
গণতন্ত্র কতটা মুক্তির বিষয় তা এখন ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, ইরাক, এমন কি খোদ যুক্তরাষ্ট্র আর আমাদের চোখের সামনে আমাদের বাংলাদেশের অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়। যদি কুকুরের মত বেঁচে থাকাকে তাদের ডিকশনারীতে “মুক্তি” বোঝানো হয়, তবে এখানে বেশি কিছু বলার নেই আমার।
শারিয়াহ আইন আল্লাহ প্রদত্ত। যিনি এই দুনিয়া বানিয়েছেন, সেটা কিভাবে চালাতে হবে তা কি তার চেয়ে বেশি আমরা “৬০ বছরের Average হায়াত অলা VULNERABLE CREATURE” গুলা বুঝবো??
আল্লাহ বলেন,
“আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ আইন অনুসারে বিচারকার্য সম্পাদন করেনা, তারা কাফের, ফাসেক, যালেম”। (আল মায়েদা - ৪৪, ৪৫, ৪৭)
“আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজেদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে” (সূরা আল আহযাব:৩৬)।
মানুষ তবুও এই ভ্রমে থাকে তাদের স্রষ্টার ভুল ছিল। কেন এই ধারনা?
এই ধারনার পিছে Materialistic worldview প্রধান। Materialistic worldview তে মানুষ সবকিছু পৃথিবীর Variables দিয়ে Compare করে। সবকিছুর পরিমাপ হবে দুনিয়াবি বাটখারায়। এই ধারণাটা এত বেশি আষ্টেপৃষ্ঠে তাদের জড়িয়ে ধরেছে, যে তারা স্বয়ং আল্লাহ্কেও মানুষের সাথেই COMPARE করে বসে। তারা ধরে নেয় - NO ONE IS PERFECT IN THIS WORLD. SO IS GOD. ফলে মানুষের যে ক্ষমতার SHORTAGE, সেটা আল্লাহ্র ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য মনে করে তারা। তাই স্রষ্টার আদেশ-নিষেধে গলদ খুঁজতে থাকে তারা।
আল্লাহ বলেন,
“অতঃপর তারা যদি তোমার আহ্বানে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রাখ, তারা তো নিজদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে। আর আল্লাহর দিকনির্দেশনা ছাড়া যে নিজের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে?” (সূরা আল কাসাস:৫০)।
অন্ধদের হাতি দর্শনের গল্পটা প্রায় সবাই জানেন। তেমনি যদি চোখে কাপড় বেঁধে আমরা ইসলাম দর্শনে যাই, তবে আমাদের যেটা মনে আসবে, সেটাকেই মনে হবে ইসলাম বলে। কিন্তু কোনদিনই আমরা সত্যিকারের ইসলাম কি, তা জানতে পারবোনা। যারা দুনিয়ার মোহে আটকে গিয়ে আল্লাহ্র আইনের বিরোধীতা করে, তাদের জন্যে আল্লাহ্ কি বলেন?
“আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে ওঠাবো অন্ধ অবস্থায়” (সূরা তাহা:১২৪)।
আল্লাহ সবাইকে হেদায়াত দান করুন।
আল্লাহ সর্বজ্ঞানী
মূল-লেখকঃ নাজমুস সাকিব।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)