উইমেন (সামাজিক,মানসিক,সুবিধা বঞ্চিত নারী)
নারী নির্যাতন রোধে পুরুষের ভূমিকা

পরিবার ও রাষ্ট্রীয় বাস্তবায়নে নারীর ভূমিকা নতুনভাবে মূল্যায়িত হওয়ায় নারীর মর্যাদার প্রশ্নে ভিন্ন চিন্তাচেতনা সূচিত হয়েছে। পরিবার গঠনে নারীর ভূমিকা সন্তানের আচরণ ও চেতনার বিকাশে স্ত্রীর ভূমিকা শিক্ষিত পুরুষকে স্ত্রী তথা নারীর মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আগ্রহী করে তোলে। এর মাধ্যমে নারী নির্যাতন ও এর কারণগুলো সকলের সামনের উচ্চকিত হয় এবং নির্যাতন প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ পরিচালিত হয়। তবে সামগ্রিকভাবে নারী নির্যাতনে মৌলিক পরিবর্তন আসেনি। কাজেই নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং নারী নির্যাতন রোধে আমাদের পুরুষদের এগিয়ে আসতে হবে।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন_
'বিশ্বে যা কিছু আছে মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।'
আমাদের পুরুষদের মধ্যে একটা বদ্ধমূল ধারণা আছে যে, নারীরা অবলা। পুরুষ ছাড়া নারী চলতে পারবে না। এ ধারণা থেকেই মূলত নারী নির্যাতনের উৎপত্তি। বর্তমান সময়ে এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে এখন নারীদের জয়জয়কার। এখন নারীরা প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট এমনকি বিমান চালনাসহ অনেক চ্যালেঞ্জিং পেশায় কর্তব্য পালন করছে। আমাদের পুরুষদের উচিত চোখ-কান খোলা রেখে নারীদের অবদান স্বীকার করে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ফেলা। এক্ষেত্রে প্রথম জানা উচিত বাংলাদেশের সংবিধানে নারীদের কি কি অধিকারের কথা উল্লেখ আছে।
বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কতিপয় বিধান সনি্নবেশ করা হয়। নিম্নে এ সংক্রান্ত কতিপয় অনুচ্ছেদ ও ধারার উল্লেখ করা হল :
সংবিধানের ১০নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে_ 'জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সংবিধানের ২৭নং ধারায় উল্লেখ আছে_ 'সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান ও আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।'
২৮ (১) ধারায় বলা হয়েছে_ 'কোন ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না।' ২৮ (২) ধারায় উল্লেখ আছে 'রাষ্ট্র ও গণজীবনের সবস্তর নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করবেন।' ২৮ (৩) এ রয়েছে_ কেবল ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, নারী-পুরুষভেদে বা বিশ্রামের কারণে জনসাধারণের কোনো বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোনো নাগরিককে কোনোরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাবে না। ২৮ (৪)-এ বলা হয়েছে, 'নারী' বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের কোনো অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির বিশেষ বিধান প্রণয়ন হতে এই অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করবে না। ২৯ (১)-এ রয়েছে_ 'প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে।' ২৯ (২) উল্লেখ রয়েছে_ 'কেবল ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, নারী পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মের নিয়োগ আ পদ লাভের অযোগ্য হবে না কিংবা সে ক্ষেত্রে তার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না।' ৬৫ (৩) ধারায় নারীর জন্য জাতীয় সংসদে আসন সংরক্ষিত করা হয়েছে এবং ৩ ধারার অধীনে স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। নারী নির্যাতন রোধে নিম্নোক্ত বিষয়ে পুরুষদের ভূমিকা থাকা উচিত-
কর্মক্ষেত্রে নারীদের সমান চোখে দেখা : নারীরা আজ পুরুষের পাশাপাশি বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। পুরুষের পাশাপাশি কাজ করার সময় পুরুষরা তাদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখায়। নারীদের উত্ত্যক্ত করে এমন কি যৌন হয়রানিও করে। এর ফলে নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়। কর্মক্ষেত্রে যদি নারীরা পুরুষদের সহযোগী বা সহকারী হিসেবে দেখি তাহলে নারী নির্যাতন বন্ধ হয়ে যাবে। পারিবারিক কাজ-স্ত্রী পুরুষ সমানভাবে ভাগ করে নেওয়া : স্বামী-স্ত্রী দুজনের সমন্বয়ে গঠিত হয় একটি সুখী সংসার। এ সংসারে স্ত্রী-পুরুষ দুজনার কাজ সমানভাবে ভাগ করে নেওয়া হয় তাহলে নারীর প্রতি সংসারের কাজ বোঝায় পরিণত হবে না। তাহলে খুব সুন্দরভাবে সংসার এগিয়ে যাবে। বন্ধ হবে নারী নির্যাতন।
বিয়েতে যৌতুক না নেওয়া : যৌতুক প্রথা বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের আর একটি বিশেষ কারণ। বাংলাদেশে আইন অনুযায়ী যৌতুক প্রথা নিষিদ্ধ হলেও এর পরোক্ষ বহুল প্রচলন রয়েছে। যৌতুক দেওয়া-নেওয়ার কারণে বিবাহের পূর্বে এবং পরে নারীরা নানা রকম নির্যাতনের শিকার হয়। এজন্য আজ থেকে আমাদের পুরুষদের শপথ নিতে হবে বিয়েতে কোনো প্রকার উপঢৌকন বা যৌতুক নেব না।
মোবাইল ফোনে, ইন্টারনেটে, ফেসবুকে মেয়েদের বিরক্ত না করা : বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে মোবাইল ফোন ইন্টারনেটে, ফেসবুকে এক শ্রেণীর তথাকথিত পুরুষরা মেয়েদের নানাভাবে হয়রানি করছে। মেয়েদের ফোনে অপ্রয়োজন কল দেয়। অশ্লীল কথাবার্তা বলা, ইন্টারনেট ফেসবুকে মেয়েদের সঙ্গে প্রেম করার সময়ের একান্ত মুহূর্তের চবি পুরুষরা প্রকাশ করছে। এর ফলে নারীরা মানসিকভাবে এবং সামাজিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। আমাদের পুরুষদের উচিত এই কাজটি আজই বন্ধ করে দেওয়া।
ইভটিজিং আর করব না : আমরা পুরুষরাই ভালো করে জানি ইভটিজিং কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? আমরা কী একটিবারও নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করতে পারি না। আমাদের মজা করার নামে ইভটিজিংয়ের কারণে কত নারীর স্বপ্নের ভবিষৎ ভেঙে চুরমার হচ্ছে। আসুন আমরা পুরুষরা এ পথ থেকে সরে আসি। নারী নির্যাতন বন্ধ করি।
পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের নারী সমাজ পুরুষের দ্বারা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আইন করে কোনোভাবেই নারী নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব নয়। আমাদের পুরুষ সমাজ বদলে গেলেই একমাত্র সম্ভব নারী নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব। আসুন আমরা নারী নির্যাতন রোদে এগিয়ে আসি। নারী নির্যাতন মুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়ি।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)