
"নন্দর ভাই কলেরায় মরে দেখিবে তাহারে কে বা সকলে বলিল যাও না নন্দ কর না ভায়ের সেবা . . . . " কবিতার নন্দলাল কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাইয়ের সেবায় মন দেয়নি আর সে ভাই শেষ পর্যন্ত কলেরায়ই মরে।
ভার্চুয়াল আর বাস্তবে কিছু চিন্তাবিদদের দেখে কেনই যেন নন্দলালের কথা মনে হয়। নিজে পুরুষ হলেও তাদের ধ্যানজ্ঞান জীবন মরণ উত্সর্গিকৃত পতিত নারী উদ্ধারে। সে ভালো , কিন্তু এই করতে গিয়ে নারীদের সাথে তাঁদের মেলামেশা আর কৌতুহল মেটানোর কাজটি একটু খটকা জাগায় বৈকি।
এক বড় আপুর কাছে শোনা। উনার শিক্ষক উনাকে বলেছিলেন, একটা মেয়েকে দেখামাত্রই একজন পুরুষের মাথায় তত্ক্ষণাৎ যেসব চিন্তা আসে , সেসব জানলে মেয়েটা কোনদিন রাস্তায় বের হত না। এজন্যই আল্লাহ পুরুষদের এই 'দেখা' বিষয়টিতে অনেক বেশী কড়াকড়ি করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক তরুণ সাহাবীর মুখ বারবার একজন মহিলার দিক থেকে ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন , হাতে ধরে এবং সে হাদীসে মহিলাটির পোশাক আশাকের কোন বর্ণনা নেই।
মেয়েরা কেন হাসে, কেন কাশে এবং কেন কখন কি অবস্থায় কাঁদে; কি পরে, কি পরে না, কি পরতে পারা উচিত না; কি ভাবে, কি ভাবে না আর কি ভাবতে পারে না... এইরকম শত বিষয়ে আপনার মাথা এতো ঘামানো কোনক্রমেই উচিত নয়। যে মেয়েটি বিধিনিষেধ মানতে চায়, সে কখনও বিধানের জন্য আপনার কাছে আসবে না, কারণ তার আস্থাবান জ্ঞানী লোক না পেলে সে কোরআন হাদীসের কাছে যেতে পারে, সোশ্যাল মিডিয়া বা ভুঁইফোঁড় জ্ঞানীর কাছে কষ্মিনকালেও আসবে না। আর যে মেয়েটি কথা শুনবে না, সে আপনার বাড়ানো নাকে বেঁধে আরও দূরে সরে যাবার সমূহ সম্ভাবনা আছে। এবং, সবচয়ে বড় কথা হল, পতিত উদ্ধারে গিয়ে আপনি ব্যক্তিগত আমলের যে বারোটাখানা বাজাচ্ছেন, তার জবাব আল্লাহর কাছে কি দেবেন?
মুসলিম হিসেবে আপনার দায়িত্ব অনেক। বিশেষ করে , সমাজ বা পরিবার পরিচালনার আনুষ্ঠানিক কাজগুলো আপনারই করতে হয়। এটা আপনার কুরআনিক দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে মেয়েদের মনোদৈহিক সমস্যার সমাধান আপনার বাকি দায়িত্বের কত পার্সেন্ট? শতকরা এক ভাগ? টেনেটুনে হয়ত তাই হবে। এর জন্য প্রাণপাত করা আপনাকে মানায় না জনাব।
প্রশ্ন হচ্ছে , সে এক শতাংশ কাজই বা আপনি কিভাবে করবেন?
এক . আপনার পরিবার এবং কর্মক্ষেত্রের মহিলাদের সম্মান করুন। মাহরামদের প্রয়োজনীয় অধিকার দিন। নন মাহরামদের সম্মান করুন এবং আপনার চোখ দিয়ে তাদের প্রশান্তি দিন। মানে হল, আপনার চোখের দৃষ্টি দিয়ে তাঁদের প্রাইভেসীতে হস্তক্ষেপ করবেন না।
দুই. আপনার স্ত্রীকে আপনার উন্নয়ন পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিন। তাঁর গন্ডীর মহিলাদের নিয়ে নারীর পাওনা এবং করণীয় নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির সুযোগ করে দিন। এই কাজে সময় দিতে গিয়ে আপনার হাতের সাহায্য বা পরামর্শ কোনটা থেকেই তাকেঁ বঞ্চিত করবেন না।
তিন . আপনি বিবাহিত নন? "আগে বিয়ে করুন". জি , আপনাকেই বলছি। অবিবাহিত হলে এক নং এর পর তিন নং ই আপনার কাজ। দুই নম্বরের দিকে ভুলেও যাবেন না!! এক্ষেত্রে নাবালকেরা আবার ব্যকুল হয়ে যাবেন না যেন। আমি শীঘ্রই বিয়ে করতে বলিনি। আপনার বয়স , যথাযথ পরিপক্কতা আর পরিবারের অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নিন।
আপনাকে আশ্বস্ত করছি , এই পরামর্শ ভেবে দেখলে আপনি ঠকবেন না। বরং অপ্রয়োজনীয় অপ্রত্যাশিত জায়গায় অনাহুত পরামর্শ দিবেন না। ভার্চুয়াল বা বাস্তব , দুইভাবেই আহত হবার সম্ভাবনা আছে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)