
স্থানীয় ব্যক্তিরা তাদের দেখলেই নানা ভঙ্গি করেন। তারা বিব্রত অবস্থায় পড়ে। কয়েক দিনের মধ্যে জানা গেল সেখানকার সংস্কৃতিই এ রকম। অতিথিদের দেখলে স্থানীয় ব্যক্তিরা নানা ভঙ্গি করে। অতিথিদেরও ইশারার মাধ্যমে জবাব দিতে হয়। সেই পরামর্শ মতো কাজ করতেই দেখা গেল স্থানীয় ব্যক্তিরা এগিয়ে এসে তাদের সঙ্গে কথা বলছে। প্রয়োজনে সহযোগিতাও করছে। গৃহযুদ্ধবিধ্বস্ত হাইতিতে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে এমন তথ্যই জানালেন হাইতি মিশনে যাওয়া নারী পুলিশের এক সদস্য।
২০১০ সালের ১৬ মে বাংলাদেশ থেকে নারী পুলিশের ১১০ জনের একটি দল গিয়েছিল সেই মিশনে। মিশনে নারী ইউনিটের নেতৃত্ব দেন এআইজি রখফার সুলতানা। গতকাল মঙ্গলবার রখফার সুলতানা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হাইতিতে আমাদের রাত-দিন দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। নারী নয়, পুলিশ হিসেবেই সেখানে দায়িত্ব পালন করেছি। দেশের সুনামের কথা ভেবেছি।’ ১১০ জনের ওই দলটি বছরখানেক পর দেশে ফেরে। এরপর আরেকটি টিম যায় হাইতিতে।

১৯৭৪ সালে সাতজন এসআই ও সাতজন কনস্টেবল নিয়ে নারী পুলিশের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তা আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। হাইতিতে সফলভাবে দায়িত্ব পালনের পর বর্তমানে কঙ্গো মিশনে রয়েছে ১২৫ জন নারী পুলিশ। পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০০ সালে প্রথম পুলিশ কর্মকর্তা (বর্তমানে ডিআইজি) মিলি বিশ্বাস পূর্ব তিমুরে মিশনে গিয়েছিলেন। শুরুতে নারী পুলিশ সদস্যরা কাজ করতেন সাদা পোশাকে। ইউনিফর্মধারী নারী পুলিশের যাত্রা শুরু ১৯৭৬ সালে। আজ পুলিশ বাহিনীতে নারী পুলিশ সদস্য সাত হাজার ৬০৯ জন।
বর্তমানে নারী পুলিশ সদস্যরা তদন্ত থেকে শুরু করে সব ধরনের পুলিশি সেবা দিচ্ছেন। নারী পুলিশের পেশাগত মানোন্নয়ন ও দক্ষতা বৃৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৮ সালের ২১ নভেম্বর ‘বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন্স নেটওয়ার্ক (বিপিডাব্লিউএন) গঠিত হয়। এ সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ডিআইজি মিলি বিশ্বাস। আর নির্বাহী সচিবের দায়িত্বে আছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবিদা সুলতানা। এ সংগঠন থেকে ২০১২ সালে ঢাকায় এশিয়া অঞ্চলের নারী পুলিশের সম্মেলন করা হয়েছিল। গত বছর তারা প্রথম জাতীয় সম্মেলন করে। আজ বুধবার মিরপুরের পুলিশ স্টাফ কলেজে হতে যাচ্ছে তাদের দ্বিতীয় সম্মেলন। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
এ প্রসঙ্গে মিলি বিশ্বাস বলেন, ‘একসময় পুলিশে নারীদের খুব একটা আগ্রহ না থাকলেও বর্তমানে আগ্রহ বেড়েছে। কনস্টেবল থেকে শুরু করে এএসপি পর্যন্ত নিয়োগ পেতে নারীদের এখন প্রতিযোগিতা করে নিয়োগ পেতে হচ্ছে। নারী বলে পিছিয়ে নেই নারী পুলিশ। আশা করি জেন্ডার বৈষম্য একসময় শূন্যর কোঠায় নেমে আসবে।’
বর্তমানে নারী পুলিশের মধ্যে সর্বোচ্চ পদে রয়েছেন অতিরিক্ত আইজিপি ফাতেমা বেগম। মিলি বিশ্বাস ছাড়াও আরেকজন ডিআইজি রয়েছেন। তিনি রওশন আরা। অতিরিক্ত ডিআইজি পদে আছেন ইয়াসমিন গফুর ও রওশন আরা। এ ছাড়া পুলিশ সুপার ১২, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ৫৭, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ১৯, সহকারী পুলিশ সুপার ১১০, ইন্সপেক্টর ৫৮, সাব-ইন্সপেক্টর ৫০৫, সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর ৪১৮ এবং কনস্টেবল পদে রয়েছেন ৬৪২৫ নারী।
সুত্রঃ কালের কণ্ঠ।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)