ধর্ম ও গবেষনা

একজন নওমুসলিমের জুতো পায়ে...

একজন নওমুসলিমের জুতো পায়ে...
মুসলিম পরিবারে জন্ম হলেও আমার জীবনের বড় একটা অংশ কেটে গিয়েছিল অবহেলায়। ‘সেকুলার’ মানসিকতার না হলেও কালেভদ্রে নামায পড়া ছাড়া ইসলাম চর্চা একেবারেই ছিলনা। আলহামদুলিল্লাহ, এখনো কতটা প্র্যাকটিসিং হয়েছি জানিনা, তবে চেষ্টা করছি। আল্লাহপাক আমার খুব প্রিয় একজন বন্ধুকে আমার জীবনে পাঠিয়েছিলেন হিদায়াতের আলোকবর্তিকা হাতে। তার সাথে আমার প্রথম পরিচয় ২০১২র শুরুর দিকে। ইউনিভারসিটি থেকে বাসে করে বাসায় ফিরছিলাম। আমার পাশের সিটে এসে বসেছিল। এই বিদেশে বাদামী চামড়ার কাউকে দেখলে এম্নিতেই আপন মনে হয়। দুইজন প্রচুর বকবক করলাম। ওই বছর সামারে আমি এপার্টমেন্ট শেয়ারের জন্য কাউকে খুজছিলাম। আরেক বোনের মাধ্যমে জানতে পারি বাসে পরিচিত হওয়া ওই বোনটি বাসা খুজছে। তার সাথে যোগাযোগ করি। এরপর সে আমার বাসায় এসে ওঠে। ৪ মাস সে আমার সাথে ছিল, এই ৪ টা মাস আল্লাহপাকের বিশেষ রহমত ছিল আমার জন্য। তার ইসলামে আসা খুব বেশিদিনের নয়। যে ধর্ম ও মুল্যবোধে তার বেড়ে ওঠা, তা নিয়ে ছোট্টবেলা থেকেই অনেক প্রশ্ন ছিল তার মনে। সেই থেকেই কম্পারেটিভ রিলিজিয়ন নিয়ে পড়াশুনা শুরু। এরপর একটু একটু করে ইসলামকে ভালোলাগা, ভালোবাসা। সত্য পথের দেখা পেয়ে তাকে আরেকটু বেশি করে আকড়ে ধরার চেষ্টা। তবে এই সবকিছুই চলছিল গোপনে, বলাই বাহুল্য। কারন পৃথিবীর কোন বাবা মাই সম্ভবত তাদের সন্তানকে বিধর্মী হয়ে যেতে দেখলে, তা মেনে নেবেনা। তবু সে সবাইকে লুকিয়ে নামায পড়ার চেষ্টা করত। রোজার দিনগুলিতে মাকে বলত অ্যাসিডিটি হচ্ছে, দিনের বেলাতে কিছু খাবনা। তবু এভাবে বেশিদিন লুকিয়ে থাকা যায়না। একসময় তার বাবা মা কিছুটা টের পেতে শুরু করে। তাই মেয়েটি স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডা চলে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। এখানে তার আপনজন বলতে কেউ নেই। প্রতিমাসে গাদাগাদা ডলার পাঠানোর মত সামর্থ্য নেই তার বাবার। দুইটা পার্টটাইম জব করে, অতিকষ্টে তার টুইশন ফীটা যোগাড় করত। পার্টটাইম জবের সামান্য আয়ে মাস চলতে খুব কষ্ট হত তার। বাজার করতে গেলে দেখতাম, কোন কোন জিনিস কার্টে নিয়েও আবার রেখে দিচ্ছে। পড়াশুনা আর কাজের চাপে রান্নার সময় না পেয়ে প্রায়ই নফল রোজা রাখত। তবুতো এখানে নামায পড়তে, হিজাব করতে, রোজা রাখতে কোন বাধা নেই। এতেই সে খুশি। অবসর সময়ে ইউটিউব দেখে সুরা শিখতে চেষ্টা করত। আমাকে প্রায়ই বলত, তুমি কত লাকী, কত্তগুলি সুরা জানো, ইচ্ছা হলেই নামায পড়তে পার। কথাগুলো শুনে লজ্জা পেতাম, মুখে প্রকাশ করতে পারতাম না। এত ব্যাস্ততার মাঝেও সে টুকটাক দাওয়াতী কাজও করত। আমাকেও উৎসাহিত করত। ওকে দেখে মাঝে মাঝে ভাবতাম, জীবনে ভালো যেকোনো কিছু পাওয়ার জন্যেই ত্যাগস্বীকার করতে হয়। মাষ্টারস/পিএইচডি বলি, বা একটা ভালো চাকুরী বলি, বা সন্তান, যাই হোক, সহজ পথে কিছুই আসে না। কিন্তু আমরা বর্ণ মুসলিমরা খুব সহজে ইসলামকে পেয়ে গেছি বলেই হয়ত এর সঠিক মর্যাদা উপলব্ধি করতে পারিনা। কতটুকু ইসলাম বুঝি জানিনা, কিন্তু আমার মনে হয় এই মেয়ে খুব সহজে বেশেস্তে চলে যাবে। কারন একটা মেয়ের পক্ষে এক জীবনে যতটা ত্যাগস্বীকার করা সম্ভব, সে তা করেছে। আল্লাহপাক আমাদের সকলকে হিদায়াতের পথে রাখু...। আমীন।

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন