বিবিধ

পরিমল থেকে জাফর ইকবাল - 'স্যার' তো নয় সে যে আগুনেরই গোলা

পরিমল থেকে জাফর ইকবাল - 'স্যার' তো নয় সে যে আগুনেরই গোলা
'পোলা তো নয় সে যে আগুনেরই গোলা' মমতাজের এই চটুল গানের তালে তালে সাদা চুলের জাফর স্যার তার কঁচি কঁচি ছাত্রীদের সাথে নেচেছেন। মহামান্য স্যারের সেই নাচটি যারা দেখেছেন তারা সহজেই নামকরনের উদ্দেশ্য টুকু ধরতে পেরেছেন। তবে ডিজিটাল জাফর স্যারের সাথে এনালগ পরিমল স্যারের তুলনাটি কেন টানলাম তার জন্যে পুরো আর্টিকেলটি একটু কষ্ট করে পড়তে হবে। এক সময় আমাদের সমাজে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক সম্বোধন ছিল 'তুই-আপনি ' । অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীকে ডাকতো তুই আর স্ত্রী স্বামীকে ডাকতো 'আপনি' বলে । সমাজ,ব্যক্তি বা পরিবারটি একটু ভদ্র বা পালিশ হওয়ার পর তা যথাক্রমে 'তুমি এবং আপনি' তে উন্নত হয়। খানদানী অনেক পরিবারে এই সম্বোধনটি ছিল 'আপনি -আপনি '। তারপর ধর্ম,সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও প্রগতির যুগপদ বোঝাপড়ায় সম্বোধনটি হয়ে পড়ে 'তুমি এবং তুমি' । এই ধরনের একটি বোঝাপড়ার কারনেই এটি এখন পর্যন্ত সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল চর্চ্চিত কনজুগাল সম্বোধন। অনেকেই মনে করলো প্রগতির এই ট্রেইনটি এখানে থামিয়ে দেয়া ঠিক হবে না। সম্বোধনটিকে কেউ কেউ 'তুই-তুই' তে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো। আমরা যখন ইয়ং কাপল, তখনকার একটি সত্য ঘটনা। এক পার্টিতে এক আধুনিকা (সারেং বউ ) তার স্বামীকে ডাকে, 'এই চিকনা, এদিকে আয়। ' তার এই সম্বোধন শুনে চিকনার মুখটি আরো চিকনা হয়ে গেলো। মোটা মোটা বন্ধু ও তাদের পত্নীদের মাংসল মুখগুলিও মুহুর্তেই শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। কাজেই অনেকেই এক্সপেরিমেন্ট করলেও স্বামী স্ত্রীর মাঝে তুই-তুই সম্বোধনটি খুব একটা গ্রহনযোগ্যতা পায় নি। কারন সব কিছুরই সম্ভবত একটা সেচুরেশন পয়েন্ট রয়েছে। এই সেচুরেশন পয়েন্টের পরে প্রগতির শরাব ঢালতে গেলে সমাজ তা উগলে দেয়। তবে একেক সমাজের একেক সেচুরেশন পয়েন্ট থাকার এই বাস্তব সত্যটি বড় বড় এই ডক্টরগণ স্বীকার করতে চান না। আমেরিকায় যা সম্ভব তা এই মুল্লুকে সম্ভব নয়, আমাদের সমাজব্যবস্থার সাথে ওদের অনেক কিছুই কমপ্যাটিবল নয়। আমাদের সমস্যা হলো এই অবুঝ লোকগুলিকেই আমরা নিজেদের সমাজের চিকিৎসক বা হেড মালি বানিয়ে বসেছি। সমাজের কুসংস্কার বা আগাছা পরিস্কার করতে গিয়ে এরা মূল গাছগুলিই উপড়ে ফেলতে চান। অনেক জায়গায় ছেলে মেয়েরা নিজের বাপ মাকে নাম ধরে ডাকে । ওদের সমাজ বিষয়টি সহজভাবে গ্রহন করলেও আমাদের সমাজ সহ আরো অনেক রক্ষনশীল সমাজ এটি কোনদিন সহজভাবে গ্রহণ করবে না। আগেই বলেছি ধর্ম,সংস্কৃতি,কৃষ্টি এবং প্রগতির যুগপদ বোঝাপড়ায় কোন বিষয়ে একটি সমাজের সেচুরেশন পয়েন্ট নির্ণিত হয়। বাবা ছেলের মধ্যে সম্পর্কের ন্যায় ছাত্র শিক্ষকের মাঝেও একটা ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক আমাদের দেশে রয়েছে। যুগ যুগ ধরে এই সম্পর্কের ভিতটি রচিত হয়েছে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং বোধ-বিশ্বাসের বিভিন্ন শেকড় থেকে রস আস্বাদন করে। এদেশে ছাত্রশিক্ষকের মাঝে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার একটা পর্দা রয়েছে । সেই পর্দাটি মহামান্য জাফর স্যার ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় এবং মহামান্য পরিমল স্যার এনালগ প্রক্রিয়ায় ছিড়ে ফেলতে চাচ্ছেন ।  এই স্যার পশ্চিমা বিশ্বে অনেকদিন অবস্থান করলেও সেখানকার গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বোধগুলি তাকে সেভাবে স্পর্শ করেনি। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সবক গুলি আগে মাঝে মাঝে পরিবেশন করলেও তিনি এখন ওগুলি একপাশে রেখে দিয়েছেন। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে পশ্চিমাদের কঠিন কঠিন অনুশীলনগুলি তিনি এদেশে চালু করতে চান না। কিন্ত অল্প বয়েসী ছাত্রীদের হাত ধরে বুড়ো শিক্ষকের নাচার মত পশ্চিমা ধারাগুলি চালু করতে রীতিমত জেহাদ শুরু করে দিয়েছেন । বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগ ডে তে বাঙালী সংস্কৃতির এই সিপাহসালার (!) নেচেছেন ওয়েস্টার্ন স্টাইলে, তরুণী ছাত্রীদের হাত ধরে। লেখার শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে যে পশ্চিমা স্টাইলের এই নাচে হিন্দি ধুম ধারাক্কা গানের সাথে ছিল মমতাজের চটুল সেই গান - পোলা তো নয় যেন আগুনেরই গোলা । সন্দেহ নেই সেদিনের এই রসগোল্লা বা আগুনের গোলা ছিলেন আমাদের এই জাফর স্যার।  অনেকেই বলতে পারেন এই ধরনের নিস্পাপ নাচা নাচিতে কোন অপরাধ নেই। কিন্তু এই নাচ সব সময় নির্দোষ বা নিস্পাপ থাকে না। এই আপাত নিস্পাপ কাজগুলি অনেক সময় শুধু একজন নারীর বা একটি সুখী পরিবারের রক্ত ক্ষরণের কারন হয় না, অনেক সময় তা পুরো জাতির রক্ত ক্ষরণ ঘটায়। নিজের মেয়ের বয়েসী কোন মেয়ে কিংবা খোদ মেয়ের বান্ধবীকে নিয়ে সংসার করেছে এই ধরনের উদাহরনের জন্যে খুব বেশি দূর যাওয়ার দরকার পড়বে না। সত্য যত অপ্রিয় হোক, অামাদেরকে তা উচ্চারন করতেই হবে। এর মুখোমুখি হতে হবে। কারন মুরব্বীর ভুলকে গ্লোরিফাই করার মধ্যে কোন ফায়দা নেই। পশ্চিমা বিশ্বে পরিবার নষ্ট হয়ে গেলেও ওদের আরো অনেক কিছু থাকে । কিন্তু আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস হয়ে গেলে আমাদের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। আগুনের গোলা এই স্যাররা সম্ভবত এই সুখটিই আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাচ্ছেন। বিমানের ইঞ্জিন গরুর গাড়ীর সঙ্গে লাগিয়ে দিলে যেরকম পরিণতি হবে তেমনি পশ্চিমের কালচার প্রাচ্যে লাগিয়ে দিলে তেমন হবে। তখন দুয়েকজন জাফর ডিজিটাল থাকতে পারলেও হাজার হাজার পরিমল এনালগ (ছাত্রী ধ...কারী) হয়ে পড়বে। উন্নত বিশ্বে মৌলিক মানবিক গুনাবলীর স্ফুরনটি আমাদের থেকে অনেক বেশি । তাছাড়া আইনের শাসন বলবত থাকায় সেসব দেশ ও সমাজে মানুষের বল্গাহীন ভোগের উপর একটা মিনিমাম নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে। কাজেই ওদের যা খেলে হজম হবে তা আমরা খেলে বদহজম হয়ে পড়বে। ডিজিটাল জাফর স্যারগণ কীভাবে এনালগ পরিমল স্যারদের সৃষ্টি করেন তা তারা নিজেরাও টের পান না। কাজেই আগুনের গোলা এই স্যারদের ডিজিটাল এবং এনালগ উভয় সেক্টরেই প্রতিহত করা ছাড়া আপাতত অন্য কোন বিকল্প দেখা যাচ্ছে না।78702_1

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
সম্পর্কিত ব্লগ