অনির্ধারিত

ওরা ফিরে আসে বার বার...

ওরা ফিরে আসে বার বার...

এক হাতে প্রকান্ড এক খাতার বান্ডেল, আরেক হাতে ল্যাপটপের ব্যাগ আর কাধে রেগুলার ইউজের ব্যাগ নিয়ে ফুট ওভার ব্রিজ দিয়ে দ্রুত পায়ে হাটছি ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বাসটি ধরতে; যেন আবার প্রথমটির মতো মিস না হয়ে যায়। এদিকে ড্রাইভার সাহেবকে ফোন দেয়ার তাড়া, ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করার সুযোগ নাই; হাততো মাত্র দুইটা! চেষ্টা করেও পারলাম না। দুইজন স্কুল ছাত্র হেলেদুলে হাটছে, তার মধ্যে একজনের কানে হেডফোন। হেডফোন লাগিয়ে রাস্তায় হাটা কাউকে দেখলে মনে হয় মানুষটা বেজায় স্বার্থপর, আশেপাশে কী হচ্ছে হুশ নাই!!! ওই বেহুশ জুনিয়র সিটিজেনটাই পেছন থেকে ডেকে বললো, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?

কিঞ্চিৎ ভ্রু উঁচু করে বললাম, এইতো সামনে, বাসের অপেক্ষায়।  "আমাকে আপনার হাতের খাতাটা দিবেন? আমি আপনাকে এগিয়ে দেই। আপনার এত কিছু নিয়ে হাটতে কষ্ট হচ্ছে।"

ভেবেছিলাম এই হুজুগে বাংগালীর দেশে হুজুগের বেলুনটা ফেটে গেলেই সব শেষ!!! কিন্তু আমি ভুল প্রমাণিত হলাম আবারো; গত দেড় সপ্তাহে যেমন ভুল প্রমাণিত হয়েছি!!! আমার দেশেও ইমার্জেন্সী লেন সম্ভব? মুখ বাকাতাম। আমার দেশে লাইসেন্স থাকলে চকলেট পাওয়া যায়, আর না থাকলে গাড়ি থামিয়ে দেয়া যায়? জানতাম না। আকাশ ছোয়া অসীম স্বপ্নের ছোট ছোট মানুষগুলোকে কি সবসময় আমরাই গড়ি? নাকি ওরাও মাঝে মাঝে আমাদেরকে গড়ে?শিখায়, বুঝায়, চোখে আংগুল দিয়ে দেখায়?  হুজুগের বেলুন্নটাকে দুমড়ে মুচড়ে ফাটিয়ে দিলেও, হুজুগ কিন্তু উবে যায়নি। ওরা এখনো আসে ক্ষত-বিক্ষত স্মৃতিতে ভরা মনটাকে সামলে, হাসি মুখে আসে। আর ওদের পথ অনুসরণ করে বাসের কন্ডাক্টর থেকে বিজ্ঞজনেরাও বলেন, ‘ম্যাডাম এরপর থেকে একটু কষ্ট করে বাস স্টপেজে দাড়াবেন, রাস্তায় বাস থামিয়ে আর উঠানো যাবে না।’

আর ওইযে, জীবন মরণের ফিফটি ফিফটি চান্স নিয়ে হসপিটালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতড়ানো ছেলেটা? কোনো স্লোগান দেয়নি, আগে পিছেও থাকেনি। ভুল করেছিল একটাই। গলায় স্টুডেন্ট  আইডি কার্ড ঝুলিয়ে বাধ্য ছেলের মতো ইউনিভার্সিটি যাচ্ছিল। এই মায়ের টলটলে চোখ দেখে আমি কাদি না, ভাবি.....

সেমিস্টার শেষে বাকি ছিল শুধু ফাইনাল পরীক্ষাটা। শেষ করলেই জীবনের লক্ষ্যে আরো একধাপ এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু হলো কই? ভাঙ্গা আঙ্গুলে লিখবে কি করে?


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)