অনির্ধারিত

উজ্জয়িনী সিরিজ-৭

উজ্জয়িনী সিরিজ-৭

পূর্ণতা

চার পাঁচদিন বৃষ্টি হয়ে আজ রোদ উঠেছে প্রখর তাপ সহ। উজ্জয়িনী কাপড় ভিজিয়েছে বেশ কিছু। সাড়ে দশটা বাজে। তাই বুকসেলফের বইগুলো গুছিয়ে কেবলই একটা বই নিয়ে বসেছে।ছুটির দিনটা কাজে লাগছে। অষ্টাদশি পুষ্পিতা এসে বলল,
-আপা আমি কি এখন ঘর মুছে দিব?
-হ্যা। ভেজানো কাপড়্গুলো ধুয়ে তুমি গোসল সেরে নিও। মায়ের দুপুরের খাবার আমি রান্না করব।
-আচ্ছা।পুষ্পিতা দরোজা পেরোনোর আগে উজ্জয়িনী বই থেকে মাথা না তুলেই,
-শায়লা ভাবি কি করছে?
-রুমের দরজা বন্ধ, জানি না।
-আচ্ছা। তাহলে একটু পর আমি দেখছি। মেয়েদের ছুটির সময় হয়েছে নাকী?
-না আপা সাড়ে দশটা বাজে কেবলই।
-ঠিক আছে তুমি যাও।
দুপুরের পর শবনম মোস্তারী আর বড় ভাইয়ের দশ বছরের জমজ দুই মেয়ে নোভা আর শোভাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয় উজ্জয়িনী। সেদিন মিসেস আনোয়ারার সাথে গিয়ে ওদেরকে নিয়ে এসেছিলো।এরপর শায়লার সাথে উজ্জয়িনীর তেমন কথা হয়নি। উমায়েরের খু...ের কথা শুনে শুধু কেঁদেই যাচ্ছে শায়লা। এখানে এনে দুই মেয়েকেই পাশের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে উজ্জয়িনী।পুষ্পিতার দিকে তাকায়,
-পুষ্পিতা তিনজনই ঘুমিয়েছে। তুমি দেখ, আমি ভাবীর রুমে যাচ্ছি।
-আচ্ছা আপা।
রুমের কাছে গিয়ে বলল,
-ভাবী আসব?
-এসো।
ভেতরে ঢুকে শায়লার পাশে বসে উজ্জয়িনী, ভালোভাবে মুখের দিকে তাকায়,
-এতো কেদে কি হবে বল? মেয়েদের মন খারাপ হয়ে থাকে সবসময়। সামলাও নিজেকে আর আমাকে বল তুমি চলে গিয়েছিলে কি কারণে?
অশ্রু মুছে ফেলে শায়লা,
-কারণ বললে বিশ্বাাস করবে তুমি? আর অবশ্য তোমার বিশ্বাস-অবিশ্বয়াসে আমার তেমন কিছু আসে যায় না। তোমার ভাইয়ার পরকিয়া চলছিল তখন, অফিসের এক নতুন কলিগের সাথে, মহিলা বিধবা। আর বাড়িতে এসে প্রতিদিন কোন না কোন কারণ সাজিয়ে ঝগড়া করতো। মেয়েদের দিকেও খেয়াল করতো না।
উজ্জয়িনী অবাক চোখে শায়লার দিকে তাকায়,
-তুমি কি সত্যি বলছো? মিসেস আনোয়ারা তো তা বললেন না। উনিও তো ঐ অফিসেই জব করেন!
-ঐ মহিলা তো ওদের পরকিয়ায় উস্কানিদাতা।
উজ্জয়িনী থেমে যায়, প্রসংগ আর টানে না। কিছুক্ষন চুপ থেকে,
-চলো খেয়ে নেবে।
-আচ্ছা।

উজ্জয়িনীর বিয়ে হয়েছে এক সপ্তাহ প্রায়। শশুড় বাড়ী যাওয়া হয়নি এখনও। শাশুড়ি নিজেই বলেছেন, "বৌমা তোমার মা যতদিন বেচে আছেন তার কাছেই থাকো। এমন না যে আমাদের ইচ্ছে করছে না তোমাকে নিয়ে যেতে, খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু সে ইচ্ছা পরেও পুরণ হবে ইনশাআল্লাহ।" উজ্জয়িনীর মনটা ভরে গেছে শাশুড়ী মা'র কথা শুনে। বড়রা যখন উদারতার পরিচয় দেয়, তখন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা বহুগুণ বেড়ে যায়।উজ্জয়িনী অসুস্থ মায়ের পাশে বসে শাশুড়ী মা'র বলা কথা গুলো বলছে।শবনম মোস্তারীর চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক। টপটপ করে আনন্দশ্রু ঝরছে।উজ্জয়িনী মায়ের অশ্রু মুছে দেয়, সেও কেদে ফেলে। মাকে জড়িয়ে ধরে থাকে অনেক্ষন।একটু পরে পুস্পিতাকে একটু গলা উচিয়ে ডাকে,
-পুস্পিতা!
রান্নাঘর থেকে ছুটে আসে,
-আপা বলেন।
-ভাবী কি করে?
-রেডি হচ্ছেন, মার্কেটে যাবেন নাকী যেন!
-ওহ! নোভা শোভাও যাচ্ছে?
-না, ওরা পড়তে বসেছে।
-আচ্ছা, তুমি মা'র কাছে বসো,আমি একটু ওদের কাছে যাই।
শবনম মোস্তারী কিছু একটা বলার জন্য শব্দ করছেন।
উজ্জয়িনী বুঝতে পারে নাত্নীদেরকে দেখতে চাইছেন,
-ঠিক আছে মা,ওদেরকে এখানে নিয়ে আসছি।

রাত এগারোটা আরমান আসে উজ্জয়িনীদের বাসায়, শবনম মোস্তারীর পাশে বসে বলল,
-মা কেমন আছেন এখন?
আনন্দে উদবেলিত হয়ে যান তিনি, হাত তুলে মাথায় দেয়ার চেষ্টা করেন সেটা খেয়াল করে আরমান মাথাটা নিচু করে,
-এই যে মা এবার দিতে পারবেন, এইতো!
উজ্জয়িনী্ রান্নাঘর থেকে এসে বলল,
-চেইঞ্জ করে নাও। ভালো আছো?
-হ্যা! কেমন আছো? দু'দিন আসিনি মনে হচ্ছে কত যুগ পেরিয়েছে!
উজ্জয়িনী লজ্জায় মাথা নিচু করে,
-হুম আমারো তাই মনে হয়েছে। আরমান উজ্জয়িনীর কপালের এলোমেলো চুল সরিয়ে ওর কপালে চুমু দেয়,
-খুব ক্ষুধা লেগেছে।মা খেয়েছেন?
ব্যস্ত কন্ঠ উজ্জয়িনীর ,
-হ্যা, মা এখন ঘুমাবেন, চলো টেবিলে, চেইঞ্জের অপেক্ষায় ছিলাম।।
আরমান মুখের এক লোকমা শেষ করে,
-আজ ভাবীকে এক লোকের সাথে রাস্তায় তর্ক করতে দেখলাম।আমি পাশ কেটে চলে এসেছি,তখন শুনলাম ভাবী বলছে,
"আমার কী টাকার পাহাড় আছে?"
 ভাবী বাসার দিকে ফিরলে লোকটির সাথে কথা বললাম, প্রথমে বলতে চায়নি, আমি যখন বললাম আপনি বললে হেল্প করতে পারি। তখন বলল,
"আমি উমায়ের ভাইয়ের কাছে অনেকদিন আগে ৫০০০০ টাকা লোন দিয়েছিলাম, তাও প্রায় সাত আট বছর আগে।কিন্তু টাকা নিয়ে উনি বাসা চেইং করে আমার সাথে কোন যোগাযোগ করেননি। ভাবী আর ওনাকেই চিনতাম, মাঝে শুনলাম ভাইয়ের নাকী পরকিয়া চলছিল, আর সেই যের ধরে খু... হয়েছেন। শত চেষ্টা করেও ঠিকানা যোগাড় করতে পারিনি, এখন আমি আর্থিক ভাবে খুব সংকটে আছি, আল্লাহর ইচ্ছায় ভাবীর সাথে দেখা হয়ে গেল, তাই ভাবীর কাছে সব খোজ-খবর নিয়ে টাকা চেয়েছি।"
উজ্জয়িনী চিন্তিত কন্ঠে,
-তুমি কি বলেছো?
-আমি বাসার ঠিকানা টা দেখিয়ে দিয়েছি, আর এক সপ্তাহ পর আসতে বলেছি, ভাবীর সাথে এর মধ্যে তুমি কথা বলে নাও আসলে কি ঘটেছে আমি-তুমি মিলে জানার চেষ্টা করি, লোকটার কথা ঠিক হলে টাকাটা আমি দেব ইনশাআল্লাহ!

উজ্জয়িনী তাকিয়ে থাকে ওর প্রিয় মানুষ্টার মুখের দিকে ভাবে, এমন নিখাদ মানুষকে ভালো না বেসে থাকা যায়! ঝাপসা হয়ে ওঠে দৃষ্টি, তখনো জোস্নার আলোয় আরমানের মুখটায় নিজের পূর্ণতা উপলব্ধি করে সে। উঠে গিয়ে লজ্জিত অবয়বে আরমানের কপালে চুমু দেয়, সুখময় স্পর্শে  মুচকী হাসে আরমান!


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)
লেখকের অন্যান্য ব্লগ সবগুলো দেখুন