অনির্ধারিত

শিশু সামাজিকীকরণঃ কি ভাবছেন আপনার সন্তানকে নিয়ে ? – মোঃ সানজেদুর রফিক সঞ্জু

শিশু সামাজিকীকরণঃ কি ভাবছেন আপনার সন্তানকে নিয়ে ? – মোঃ সানজেদুর রফিক সঞ্জু

এমন না যে আমি সামাজিকীকরণ নিয়ে খুব ভালো জানি । কিন্তু, সামাজিকীকরণ নিয়ে এখানে লেখার আমার উদ্দেশ্য হল- আমাদের অভিভাবকদের বাচ্চাদের সামাজিকীকরণ বিশেষ করে বাচ্চাদের সামাজিকীকরণে বন্ধুদের নিয়ে আগ্রহ তৈরি করা এবং সচেতন করা ।   

চলুন, আগে আমরা সামাজিকীকরণ সম্পর্কে জানি । সমাজবিজ্ঞানী কিংসলে ডেভিসের মতে, “সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাক্তি পুরোপুরি সামাজিক মানুষে পরিণত হয় । প্রক্রিয়া ছাড়া ব্যাক্তি তার ব্যাক্তিত্ব লাভে ব্যর্থ হয় এবং সমাজে সে একজন যোগ্য ও উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না” । 

একটি শিশুর সামাজিকীকরণে যে কয়েকটি মাধ্যম কাজ করে সেগুলোর অন্যতম হল- পরিবার, খেলার সাথী, ধর্ম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম ইত্যাদি । অর্থাৎ একটি  শিশুর সামাজিকীকরণে একটি অন্যতম প্রধান মাধ্যম হল – খেলার সাথী ।

শিশুরা এই খেলার সাথীর দেখা কোথায় পাবে ? অবশ্যই মাঠে খেলতে গেলে । কিন্তু, বাংলাদেশে নগরায়নের ফলে খেলার মাঠগুলো দিনদিন আবাসন বিল্ডিঙয়ে পরিণত হচ্ছে । আবার মা-বাবারাও যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছেন যে সন্তানকে কিভাবে পড়াশোনায় ব্যাস্ত রাখবেন ! ফলে একটা বাচ্চা যে মাঠে নেমে অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে দৌড়াদৌড়ি করবে, হইচই করবে, হাসবে, খেলবে, ঝগড়া করবে আবার নিজেরা নিজেরা সেই ঝগড়া মিটমাট করবে- সেই সুযোগটি একটি বাচ্চা পাচ্ছে না ।

একটি বাচ্চা যখন অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে মিশে তখন থেকে নেতৃত্বের চর্চা শুরু হয় । কখনও সে নেতৃত্ব দেয় আবার কখনো সে কারো নেতৃত্ব মেনে চলে । প্রশ্ন হচ্ছে- একটা বাচ্চার নেতৃত্বের চর্চাটা কেন প্রয়োজন ? একজন মানুষ যে শুধু প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি হবার জন্য নেতৃত্বের চর্চা করবে, তা নয় । মানুষকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় । সামাজিক জীব হিসেবে জীবনযাপন করতে চাইলে তাকে আরেকজন মানুষের অনুভূতিগুলো বুঝতে হয় । অন্যান্য মানুষজন এর সাথে তাকে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয় । একজন মানুষ নেতৃত্বের চর্চার মাধ্যমে নিজেদের এসব গুণাবলীর বিকাশ ঘটাতে পারে । এখন একটা বাচ্চা যদি সময়মত অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে মিশতেই না পারলো, তবে সে নেতৃত্বের চর্চা করবে কিভাবে ? ফলে, যখন সে বড় হবে তখন সে একটা আত্মকেন্দ্রিক জীবনযাপন করবে । আরেকজন মানুষের আবেগ-অনুভুতি তার কাছে অর্থহীন মনে হবে ।

অভিভাবকদের মনে রাখা উচিত যে সঠিকভাবে আপনার বাচ্চার সামাজিকীকরণ না হলে সে হয়ত ‘উচ্চশিক্ষিত’ হবে, কিন্তু ‘মানুষ’ হবে না । আপনিই একসময় আপনার সন্তানের কাছে বোঝা হয়ে যাবেন । একজন মানুষ যদি ‘মানবিক’ না হতে পারে, তবে কি তাকে ‘মানুষ’ বলা যায় ? তাই আপনার সন্তানকে ‘সুস্থ পরিবেশে’ রেখে মানুষ করুন ।

 

-- মোঃ সানজেদুর রফিক সঞ্জু

শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়   


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)