
আমরা মোটামোটি সবাই জানি যে গরুর গোশত একটি ক্ষতিকর খাবার যা এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এটি কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কিন্তু সত্যি কথা হলো যে, গরুর গোশতের অনেক উপকারী দিকও আছে। পরিমিত পরিমাণে সঠিক ভাবে খেলে এর থেকে যেই পরিমাণ পুষ্টি পাওয়া যায় তা সমপরিমাণ অন্য কিছু থেকে পাওয়া কঠিন। তাহলে কেন আমরা সঠিক উপায়ে খাওয়ার কথা চিন্তা না করে একে সম্পূর্ণ বর্জন করে এর খাদ্যগুন থেকে নিজেদের বঞ্চিত করবো?
>কি পরিমাণ খাওয়া উচিতঃ
দৈনিক গরুর গোশত খাওয়ার নিরাপদ মাত্রা হলো, ৩ আউন্স বা ৮৫ গ্রাম। আনুমানিক একটা কম্পিউটারের মাউস বা একটি তাসের বান্ডিলের সমান টুকরাতে এই পরিমাণ গোশত পাবেন।
>চর্বি ছাড়া গোশত কোথায় পাবেন?
গরুর শরীরের ২টি অংশ আছে যাতে পাবেন চর্বি ছাড়া গোশত এবং এই অংশ গুলোতে চর্বির পরিমাণ চামড়া ছাড়ানো মুরগীর থানের গোশতের চেয়েও কম। এই ২টি অংশ হলো- round এবং loin/sirloin অঞ্চল (ছবিতে দেখু...), এই অংশ গুলোতে অভ্যন্তরীন চর্বির পরিমান সর্বনিম্ন 4.2 গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ 8.2 গ্রাম যেখানে মুরগীর থানের গোশতে অভ্যন্তরীন চর্বির পরিমান 9.2 গ্রাম। তবে হ্যা, এই তুলনাটা হবে যখন আপনি গোশত থেকে দৃশ্যমান চর্বি আলাদা করে কেটে ফেলে দিবেন।
>গরুর গোশত মানেই অত্যধিক ক্যালরি নয়ঃ
আপনি যদি ৩ আউন্স বা ৮৫ গ্রাম চর্বি ছাড়া গরুর গোশত খান তাহলে এটা থেকে আপনার দৈনিক ক্যালরির চাহিদার মাত্র ১০% ক্যালরি আসবে। ( ৩ আউন্স গোশতে আছে ২০০ ক্যালরি এবং দৈনিক ক্যালরি চাহিদা ২০০০ ক্যালরি ধরে)।
>গরুর গোশতে কোলেস্টেরল এর মাত্রাঃ
৩ আউন্স sirloin অঞ্চলের গোশতে কোলেস্টেরল এর মাত্রা ৪৭ মিগ্রা এবং ৩ আউন্স round অঞ্চলের গোশতে কোলেস্টেরল এর মাত্রা ৫৩ মিগ্রা। একজন সুস্থ্য মানুষের কোলেস্টেরল এর দৈনিক নিরাপদ মাত্রা হলো ৩০০ মিগ্রা এবং হার্টের রোগীর জন্য ২০০ মিগ্রা। সুতরাং ৩ আউন্স গরুর গোশতে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিরাপদ সীমার অনেক নীচে। তুলনাটা আরেকটু ভালো করে বুঝাতে বলি, একটি ডিমের কুসুমে আছে ২১২ মিগ্রা কোলেস্টেরল। সুতরাং সব দোষ গরুর গোশতে একার না।
>গরুর গোশতে আছে পুষ্টিঃ
আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ৯টি পুষ্টি উপাদান আছে গরুর গোশতে। এগুলো হলো প্রোটিন, জিঙ্ক, ভিটামিন বি১২, সেলেনিয়াম,ফসফরাস, নায়াসিন, ভিটামিন বি৬, আয়রন এবং রিবোফ্লেভিন। প্রোটিন শরীরের পেশী গঠনে ভূমিকা রাখে, জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ফসফরাস দাত ও হাড়ের শক্তি বাড়ায়, আয়রন শরীরের পেষি গুলোতে অক্সিজেন প্রবাহে সহায়ত করে এবং ভিটামিন বি১২ খাদ্য থেকে শক্তি যোগান দেয়। ৩ আউন্স গরুর গোশত থেকে যেই পরিমাণ জিংক আসে সেই পরিমাণ জিংক পেতে আপনাকে খেতে হবে ৩ আউন্স ওজনের ১১ টুকরো টুনা মাছ, এই পরিমাণ আয়রনের জন্য খেতে হবে ৩ আউন্স ওজনের ৭ টুকরা মুরগীর বুকের গোশত এই পরিমাণ আয়রনের জন্য খেতে হবে ৩ কাপ স্পিনাচ, এই পরিমাণ রিবোফ্লেভিন এর জন্য খেতে হবে ৩ আউন্স ওজনের আড়াই টুকরা মুরগীর বুকের গোশত এবং এই পরিমাণ থায়ামিন এর জন্য খেতে হবে ৩ আউন্স ওজনের ২ টুকরা মুরগীর বুকের গোশত।
>বর্ধনশীল বাচ্চাদের জন্য গরুর গোশতে উপকারীতাঃ
বর্ধনশীল বাচ্চা বা টিনএজার দের সমর্থ ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে গরুর গোশতের তুলনা নেই। শুধু শারীরিক বর্ধন নয়, বুদ্ধি-বৃত্তিক গঠন এবং রক্ত বর্ধনেও এটি ভূমিকা রাখে। ৩ আউন্স গরুর গোশতে আছে ৯-১৩ বছর বয়সী বাচ্চার দৈনিক চাহিদার ১২৫% ভিটামিন বি১২, ৯০% প্রোটিন, ৭৪% জিংক, ৪২% সেলেনিয়াম, ৩২% ভিটামিন বি৬, ৩২% আয়রন, ২৯% নায়াসিন, ২৩% রিবোফ্লেভিন এবং ১৬% ফসফরাস।
>Conjugated Linoleic Acid (CLA)ঃ
গরুর গোশতে আছে Conjugated Linoleic Acid (CLA), এটি ক্যান্সার প্রতিরোধ, ডায়বেটিস প্রতিরোধ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে গবেষনায় প্রমাণিত হয়েছে।
>সুতরাং খান তবে রয়ে সয়েঃ
গরুর গোশত খেয়েও ঝুকি মুক্ত থাকতে, নীচের ব্যাপার গুলো মেনে চলুন।
-খাওয়ার জন্য বেছে নিন round এবং loin/sirloin অঞ্চলের গোশত।
- দৈনিক ৩ আউন্স বা ৮৫ গ্রামের বেশী খাবেন না, আয়তনের দিক দিয়ে তা একটা কম্পিউটার মাউস বা একটি তাসের বান্ডিলের সমান।
-গোশত কাটার সময় দৃশ্যমান চর্বি আলাদা করে ফেলে দিন।
-বেশী তেল দিয়ে ভুনা করার চাইতে বারবিকিউ, গ্রীল, কাবাব বা অল্প তেলে ঝোল করে ঝোল এড়িয়ে গোশত খেলে তা বাড়তি তেলে ক্ষতির সম্ভাবনা এড়াতে সহায়তা করবে।
বিঃদ্রঃ যাদের ডাক্তারের নিষেধ আছে গরুর গোশত খাওয়ার ব্যাপারে, তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলবেন।

তথ্যসূত্রঃ
https://www.beef.org/udocs/Beef%20Bytes%20Health.pdf
https://www.beefnutrition.org/CMDocs/BeefNutrition/TransFattyAcids.pdf
https://www.healthaliciousness.com/articles/foods-highest-in-cholesterol.php
https://www.livestrong.com/article/257242-the-amount-of-cholesterol-in-beef/
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)