অনির্ধারিত
মাজার সমাচার

সকাল বেলা বাসা থেকে বের হয়েছি কিছু দরকারী শপিং এর জন্য। গেটের বাহিরে পা দেওয়া মাত্র দেখলাম সাদা চুলের এক বৃদ্ধ লোক, খালি গা, গলায় একটা বড়সড় সাদা রঙের মালা ঝুলানো, একটা সাদা রঙের ব্যাগ হাতে আমাদের গেটের দিকেই আসছে।প্রথম দেখাতেই আমার মনে হলো লোকটা ভিক্ষুক। যদি ও ভিক্ষুকরা সাধারনত গলায় মালা ঝুলায় না। যাই হোক আমি কিছুটা সামনে এগিয়ে যেতেই লোকটা আমাকে বলল, কিছু সাহায্য করেন। মাজারে কিছু টাকা দেন। ভিক্ষুক ভেবে আমি হয়ত ওনাকে হেল্প করতাম কিন্তু মাজারের কথা শুনেই আমি থমকে গেলাম। মাজারে টাকা দেই না। কিন্তু কথাটা না বলেই ওনার পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলাম। লোকটা পথ আগলে দাড়ালো। আমি আবারো কোনো কথা না বলে অন্য পাশে চলে গেলাম ( একটু ভয়ে পাচ্ছিলাম। কারন এই ধরনের মানুষেরা সাধারনত পাগলাটে হয়)। তারপর দ্রুত হাটতে লাগলাম। পিছনে শুনতে পেলাম লোকটা চিতকার করে বিভিন্ন রকম অভিশাপ ছুড়ে দিচ্ছে আমার দিকে।
এই হল মাজারের সংস্কৃতি। যখন কেউ টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করে তখন মাজারে শয়িত বাবা এই করবে সেই করবে বলতে থাকে। যেন আশীর্বাদের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। বাবার যেন বিরাট ক্ষমতা। কালেক্ট করা টাকা পয়সা দিয়ে তারা কি করে সেটা সচেতন মানুষ সবাই জানে। ওই প্রসংগে আর নাই বা গেলাম। কিন্তু কেউ যদি সাহায্য না করে আথবা মাজারের প্রথায় বিশ্বাস না করে তবে তার আর রক্ষা নাই। যত রকমের আভিশাপ দেওয়া সম্ভব দিতে থাকবে। যেন মাজারে শয়িত বাবা তার খাদেমদের প্রতিদিন আশীর্বাদ আর অভিশাপের লিস্ট ধরিয়ে দেন।
আশিক্ষিত আথবা মুর্খ মানুষেরা হয়ত না বুঝেই মাজার চর্চা করে। তবে আমি বলব এই ক্ষেত্রে বাংলা আর হিন্দি মুভির আবদান আশেষ। এই রকম বহু মুভি আছে যেখানে দেখা যায় নায়ক/নায়িকা কেউ মারা গেছে, আথবা বাঁচবেই না ডাক্তার বলে দিয়েছে, সেই মানুষ টাকে মাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাবার সামনে আনেক কান্নাকাটি করা, গান গাওয়ার পর মৃত মানুষটা আবার জীবিত হয়ে ওঠে।
কিন্তু কিছু শিক্ষিত মুর্খ মানুষ তারাও একই ভাবে মাজার চর্চায় লিপ্ত। আমার ধারনা এটা তাদের এক ধরনের শর্টকার্ট পদ্ধতি। সারা বছর নামাজ রোজার ধারে কাছেও না যেয়ে, শুধু যদি একবার মাজারে গিয়ে পানি পড়া আথবা এইটা সেইটা পড়া খাওয়ার মাধ্যমে সব পাপ ধুয়ে মুছে ফেলা যায় তাহলে সেখানে যাবে না কেন? আফটার অল ইটস আ টাইম সেভার।
এইক্ষেত্রে আর একটা ঘটনা মনে পরে গেল। কয়েকদিন আগে আমার দুইজন প্রতিবেশি আন্টিদের কথা শুনছিলাম। একজন আরেকজন কে বলছে, আরে আমরা নামাজ রোজা না করতে পারি, পর্দা না করতে পারি তাতে কি? আমাদের ঈমান ঠিক ই আছে। আর ঈমান ঠিক থাকলেই সব ঠিক।
আমি বহু কষ্টে হাসি চেপে মনে মনে বলছিলাম হ্যা আন্টি ঠিক ই বলেছেন, আপনাদের ঈমান বড়ই পোক্ত …!!
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)