অনির্ধারিত

নারী ভাবনা (দশ)

নারী ভাবনা (দশ)

বাংলাদেশের একটা জেনারেশনের মহিলারা গাছে উঠে লিচু, পেয়ারা পাড়তেন, খাঁটি খাবার খেয়ে, কঠোর পরিশ্রম করতে অভ্যস্ত ছিলেন। বিয়ে হত নয় কি দশ বছর বয়সে। মোটামুটি পঁচিশ শতাংশ মৃত সন্তানের জন্ম দিয়েও মোট সন্তান দশের মত থাকতো।

এর পরের জেনারেশন, একটু একটু স্কুলে যাওয়া জেনারেশন। নানাবিধ বারণে বেড়ে ওঠা শৈশব, কৈশোর। আগের মত খালি জায়গা, ফল পাকুড়ের গাছ নেই। খাবারের যোগান সীমিত, দুধ ডিমের জায়গা নিয়ে নিয়েছে ডাল, এঁদের বিয়ে হত মোটামুটি পনর বছর বয়সে, দশ শতাংশ মৃত সন্তানের জন্ম দিয়ে মোট সন্তান সংখ্যা গড়ে পাঁচ।

এই দুই জেনারেশনের কাঁধে গৃহস্থালী কাজের ভার প্রায় এক। শারীরিক সক্ষমতার ঘাটতি অস্বীকার করেই এঁদের ঘাড়ে সংসারের সারা বছরের চাল, ডিম, দুধ আঞ্জাম দেয়ার কাজ চলেছে। ফলাফল? দ্বিতীয় জেনারেশনের মহিলারা এখন পৌঢ়া, যারা প্রথম জেনারেশনটির মহিলাদের চেয়ে অসুস্থ, দীর্ঘমেয়াদী সমস্যায় ভুগছেন।

এর পরের জেনারেশনের মহিলারা মোটা দাগে দুই ভাগে বিভক্ত। গ্রামের মহিলাদের অবস্থা উপরের দ্বিতীয় সারির মহিলাদের মতই। তবে, সন্তানসংখ্যা গড়ে, মৃত সন্তান একজন বা শূণ্য। ঘরের বাইরের কাজ কমেছে ঠিকই, ঘরের কাজ বেড়েছে অনেক। রোদ কম পাওয়ায় হাড় কম শক্ত। এঁরা চল্লিশে পা না দিতেই অসুস্থ হচ্ছেন।

শহরের মেয়েদের কথা লিখতে ভয় পাচ্ছি। খাবার ভেজাল, কায়িক শ্রমহীন বা কম পরিশ্রমের দৈনন্দিন জীবন, খাবারের ব্যলেন্স কম, রোদ থেকে দূরে তাই হাড় আরও ভঙ্গুর, এক সন্তানের জন্ম দিয়েই দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় আক্রান্ত।

এই যে সমাজ, নারী পুরুষ উভয়কেই বলি, 'আমার মা তো এইটা পারতো', বা 'আমার মেয়ে হয়ে তুই এতো দূর্বল কেন?' এগুলো বলার আগে ভাবেন, যাঁকে বলছেন তিনি এই দায়ে দোষী কি না। লক্ষ্য রাখু..., আপনার ঘরে বড় হতে থাকা পরবর্তী জেনারেশনটি যেন রোদ-আলো, পুষ্টিকর খাবার (দামী না, ফাস্টফুড না, ট্রান্স ফ্যাট না) আর শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে বড় হয়। আর আপনার স্ত্রী? বোন? ছেড়ে দেন। আর সময় নাই। বরং টাকা জমান, হয়ত হাসপাতালের বিল দিতে হবে।

কেন শুধু মেয়েদের কথা বলছি? এই মেয়েরাই মা হয়, পরের জেনারেশনকে ধারণ করে। শরীর থেকে শরীরে এইসব অযত্নের ছাপ চলে যায়, পুষ্টিগুণের ঘাটতি বংশানুক্রমে বাড়ে। সময় এমন হয়ে যায়, যে হয়ত একটা জাতিই পংগু মানুষ নিয়ে বড় হচ্ছে। কর্মক্ষম মানুষ কমে গেছে।

আপনার চারদিকে তাকিয়ে দেখেন, এর সত্যতা পাবেন। ঘরে ঘরে মহিলারা বড় বড় দুরারোগ্য অসুখে কাতরাচ্ছেন। এ চিত্র আর যা ই হোক, স্বস্তিদায়ক নয়।

নারী ভাবনা ১-৫ঃ https://bit.ly/2QCWGNN

নারী ভাবনা-৬ঃ https://bit.ly/2rrXoPu

নারী ভাবনা-৭ঃ https://bit.ly/2Em90Mq

নারী ভাবনা-৮ঃ https://bit.ly/2BYnEXM

নারী ভাবনা-৯ঃ https://bit.ly/2PpPQXh 

নারী ভাবনা-১০ঃ https://bit.ly/2rqls5r


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)