
চুলার আগুন, ছুরি-বঁটি সব এক স্থানে—রান্নাঘরে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা তাই থাকেই। পাকা রাঁধুনিরাও হতে পারেন এর শিকার।
এ প্রসঙ্গে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের গৃহব্যবস্থাপনা ও গৃহায়ণ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিনা আখতার বলেন, ‘রান্নাঘরে দুর্ঘটনার কারণ চিন্তা করে দেখলেই সেগুলো প্রতিরোধের উপায় বের করা সম্ভব। আর শিশুদের জন্যও কিছু বিষয়ে থাকা উচিত সতর্ক।’
দুর্ঘটনার কারণ
অবকাঠামোগত সমস্যা, যেমন মেঝে উঁচু-নিচু হওয়া বা জানালা-দরজা যথেষ্ট বড় না হওয়া৷
যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম অগোছালোভাবে রাখা৷
কাজে অনভ্যস্ততা৷
ক্লান্তি, ভয় বা কোনো বিষয় নিয়ে উত্তেজনার কারণে কাজের সময় অসতর্কতা৷
ভুল সরঞ্জাম বেছে নেওয়া ও যন্ত্রপাতির ভুল প্রয়োগ৷
নিরাপদ সরঞ্জামের অভাব।
প্রতিরোধ করুন দুর্ঘটনা
রান্নাঘরের মেঝেতে কোনো উঁচু-নিচু স্থান থাকলে তা সমান করে নিতে হবে।
রান্নাঘরের দরজা ও জানালা যথেষ্ট বড় হতে হবে। রান্নাঘরের দরজার কাছে এমন কিছু রাখা যাবে না, যার কারণে কেউ বের হতে গেলে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
কাজের সময় পর্যাপ্ত আলো নিশ্চিত করুন।
কাজ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই সব গুছিয়ে ফেলুন। ধারালো বঁটি কাজ শেষে যদি মেঝেতেই ফেলে রাখেন, তো হঠাৎ কেউ সেটির ওপর পড়ে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷
বঁটি, চাকু, দা এবং অন্যান্য ধারালো যন্ত্রপাতি শিশুদের নাগালের বাইরে রাখু...।
মেঝেতে পানি, সবজির খোসা বা মাছ-মাংস কাটার পর কোনো ময়লা পড়ে থাকলে তা পরিষ্কার করে ফেলুন।
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি কখনো ভেজা হাতে ধরবেন না। আর এগুলো অবশ্যই শুকনো জায়গায় দাঁড়িয়ে ধরবেন।
যে সরঞ্জাম যে কাজের জন্য, সেটি দিয়ে সেই কাজই করুন। অন্য কোনো কাজে সেটি ব্যবহার করবেন না।
গ্যাসের চুলা ব্যবহারের পর ঠিকমতো বন্ধ করুন। গ্যাসের চুলার ওপর কখনোই কাপড় শুকাতে দেবেন না।
বড় হাঁড়িতে পানি ফুটালে চুলা বন্ধ করে সেটি ঠান্ডা করার পর নামাবেন।
হঠাৎ দুর্ঘটনা ঘটলে
হঠাৎ দুর্ঘটনা ঘটে গেলে কী করবেন? এ প্রসঙ্গে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস এম হাফিজ—
হঠাৎ শরীরের কোথাও কেটে গেলে সেই স্থানটি চাপ দিয়ে ধরে থাকতে হবে। বেশি কেটে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন৷ তিনি প্রয়োজনে জায়গাটিতে সেলাই দিয়ে দেবেন।
পুড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে প্রচুর পানি ঢালতে হবে। বরফ বা অ্যান্টিবায়োটিক মলম লাগাতে পারেন। অনেকে ডিমের সাদা অংশ বা এ-জাতীয় কিছু লাগান, যা ঠিক নয়।
কেউ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে তাঁকে সরাসরি স্পর্শ করবেন না। কাঠের কোনো কিছুর সাহায্যে অন্যরা তাঁকে সেখান থেকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করতে পারেন৷
কেউ হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গেলে তাঁকে এমনভাবে শুইয়ে দিন, যেন তাঁর মাথাটি পায়ের থেকে কিছুটা নিচে থাকে। জ্ঞান ফিরলে তাঁকে খাবার স্যালাইন বা লবণ-পানি দিন।
কারও কাজ করতে করতে হঠাৎ খারাপ লাগলে সঙ্গে সঙ্গে বসে পড়ুন। স্যালাইন বা লবণ-পানি পান করতে পারেন।
যেকোনো দুর্ঘটনার পর যদি কারও খিঁচুনি, জ্বর, বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট হয়, অথবা তিনি যদি অজ্ঞান হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
সূত্র-প্রথম আলো।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)