অনির্ধারিত

হোক অবসান নেতিবাচক মনোভাব

হোক অবসান নেতিবাচক মনোভাব

 

আশেপাশের মানুষদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমাদের কৌতুহলের শেষ নেই!

কারো দেরিতে বিয়ে হচ্ছে...
কারো বিয়ের ২/৩ বছর পার হয়ে গেছে বাচ্চা হয়নি....
কারো ডিভোর্স হয়ে গেছে, অথবা বিধবা বা ডিভোর্সী কোনো মেয়ের বিয়ে হয়েছে...
ইত্যাদি আরো অনেক কিছু।
এগুলো নিয়ে রসালো গল্প করতে আমরা খুবই দক্ষ। এগুলোকে হাইলাইট করে তাকে বিব্রত করা যেন একটা কমন এন্টারটেইনমেন্ট!

একটা মেয়ের মাস্টার্স শেষ। এখনো বিয়ে হয়নি। শুরু হয়ে যায় নানা ধরনের কথা...কানাকানি... ' এখনো বিয়ে হচ্ছে না কেন?, নিশ্চয়ই মেয়েটার কোনো সমস্যা আছে! ভয়ংকর কোনো সমস্যা! '
একটা ছেলে বা মেয়ের বিভিন্ন কারণে দেরিতে বিয়ে হতে পারে। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত যে কারণেই হোক, চারপাশের মানুষের এ নিয়ে মাথা ব্যাথার শেষ নেই! প্রতিনিয়ত তাকে শুনতে হয় নানা ধরণের বিব্রতকর প্রশ্ন!

হয়তো কোনো মেয়ের বাচ্চা হচ্ছে না... ঘরে বাইরে সব জায়গায় একই প্রশ্ন...নানা অকথ্য কথা। কোনো অন্যায় না করেই মেয়েটা যেন হয়ে যায় ভীষণ অপরাধী!!
সন্তান হচ্ছে না এমন দম্পতি স্বাভাবিকভাবেই এক ধরনের কষ্টে থাকে। একটা মেয়ের জন্য এটা কতো দু:সহ একটা ব্যাপার তা শুধু মেয়েটিই জানে!

আবার কারো ডিভোর্স হয়েছে তাকে দেখা হয় ভিন্ন চোখে। এমন ভাবে তাকে দেখা হয় যেন সে একটা জঘন্য পাপ করে ফেলেছে। তাকে নিয়ে শুরু হয় ফিসফাস। অতি উৎসাহীদের প্রশ্ন, ডিভোর্স কেন হলো? কার দোষ? ইত্যাদি।

সে যতোই ক্যারিয়ারিস্ট বা এডুকেটেড হোক না কেন সব কিছুই মলিন হয়ে যায় ঐ একটি কথার সামনে। একটা বিয়ে অনেক তিক্ততার পরই ভেঙ্গে যায়। সেই তিক্ত জীবন থেকে বেরিয়ে এসে নতুন জীবন শুরু করা যে কোন মানুষের জন্যই কষ্টের। যেখানে তার আশেপাশের মানুষের সমব্যথী হওয়ার কথা তা না হয়ে শুরু হয়ে যায় সামাজিক গন্জ্ঞনা।

সাহাবীদের জীবনীতে দেখেছি এমন অনেক সাহাবী / মহিলা সাহাবী ছিলেন, যারা সাচ্চা মুমিন হওয়া সত্তেও তাদের মাঝে এডজাস্টমেন্ট হয়নি। সেক্ষেত্রে তারাও ডিভোর্স দিয়েছেন। ডিভোর্স দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করেছেন। এতে তাঁদের সম্মান একটুও কমেনি।
হাজবেন্ড ওয়াইফ দু'জনই ভালো মানুষ হওয়া সত্তেও তাদের মাঝে মানসিকতা / চিন্তা-চেতনার মিল নাও হতে পারে। কনজুগাল লাইফ অনেক সময়ই দূর্বিসহ হয়ে উঠতে পারে। এই দূর্বিসহ জীবন থেকে বেরিয়ে এসে কেউ যদি ভালো থাকতে চায়.... এতে তো দোষের কিছু নেই।

আবার কোন ডিভোর্সী বা বিধবা মেয়ের বিয়ে হয়েছে, তা নিয়েও শুরু হয়ে যায় ব্যাপক সমালোচনা। আর সেই মেয়ের বয়স যদি হয় একটু বেশি তাহলে তো আর কথাই নাই। নানা গন্জ্ঞনা, নানা মন্তব্য। আমাদের সমাজে বিধবা ও ডিভোর্সী নারীদের বিয়ে কুসংস্কারের জালে আবদ্ধ এবং অযৌক্তিক প্রথাগত বাধার সম্মুখীন। এ বাধার কারণে তারা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিয়ের স্বপ্ন দেখতে পারে না। কেউ ভাবে না তার নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্বের কথা। অথচ তারও তো জীবন বলে কিছু আছে।
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজ মদীনার সমাজে অনেক মহিলা সাহাবীরাই ৫৫/৬০ বছরেও বিয়ে করেছেন এবং তাদের আগের সন্তানও ছিলো।

সমাজে বিয়ের বয়স নিয়েও আছে নানা কুসংস্কার। ওয়াইফ যদি হাজবেন্ডের চেয়ে বয়সে বড় হয়, এটা সমাজ মেনে নিতে পারে না। এমনকি স্বামী যদি বয়সে স্ত্রীর সমানও হন, সেটাও অনেকে সহজভাবে নেয় না। আমাদের সমাজে স্বামী স্ত্রীর চেয়ে ২০/২৫ বছরের বড় হলেও এটা খুব সাধারণ বিষয়। অথচ স্ত্রীর বয়স স্বামীর চেয়ে ২/৩ বছরের বড় হলে আশেপাশের মানুষের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।

বয়স নয়, দাম্পত্যে বোঝাপড়াই মূল কথা। রাসূল (সা.) তাঁর নিজের জীবনে তা বাস্তবায়িত করে তা দেখিয়ে দিয়েছেন। রাসূল (সা.) প্রথম বিয়ে করেন হজরত খাদিজা রা. কে। তিনি রাসূল (সা.) এর চেয়ে বয়সে বড়, বিধবা এবং তার সন্তানও ছিলো। অথচ আমাদের নবী খাদিজার সাথেই তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তগুলো কাটিয়েছেন। রাসূল সা. তাঁকে এতো বেশি ভালোবাসতেন যে খাদিজা রা. বেঁচে থাকা অবস্থায় তিনি আর কোনো বিয়ে করেননি।

সুখি দাম্পত্য জীবনের জন্য কার বয়স কতো, কে বড়, কে ছোট এসব কোনো প্রভাব রাখতে পারে না। বয়স তখন অসম হলেও পারস্পরিক বোঝাপড়াটা হয়ে যায় সম।

জীবনের গল্প একেক জায়গায় একেক রকম! একজনের জীবনের ঘটনা আরেকজনের জীবনের সাথে মিলবে না। তাই বলে নেগেটিভ মনোভাব বা অশ্রদ্ধা কখনোই কাম্য নয়।

কাউকে ছোট করার মাঝে গৌরবের কিছু নেই! কাউকে কষ্ট দেয়ার মাঝে কোনো সুখ নেই।

চারপাশ ঘেরা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীই হতাশাগ্রস্ত মানুষের ভালো থাকার কারণ হতে পারে।
এনে দিতে পারে অস্থির মনে প্রশান্তি!


আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।)