(পাঁচ বছর আগের একটা পুরনো ফেসবুক পোস্ট আমার। আরও কয়েক বছর আগ থেকে ধীরে ধীরে আবিষ্কার করছিলাম কেন কন্যা জন্মালে নারীরাও মহা ব্যথিত হন! যেহেতু এই নারীদের কারো কারো বিশ্বাস পুরুষই হচ্ছে একমাত্র সুবিধাভোগী শ্রেনী- তাই নিজের মর্যাদার সিঁড়ি হিসেবে পুত্রের আকাঙ্ক্ষা করেন তাদের কেউ কেউ। এর বাইরেও এত কষ্টের সে সন্তান জরি চুমকির আড়ালে মাথা নীচু জীবন- অপদস্থ আর […]
মায়ের আলমারিতে একটা জেলির বয়াম ছিল।
কমলা রঙের জেলি ছিল কি সেখানে? আলমারিতে ঠাই দেবার আগে? আমার অবশ্য মনে হত কৌটা ভরতি রোদ। অল্প অল্প করে পাউরুটির গায়ে মাখিয়ে আমরা ভাই বোনেরা সেই কমলা রোদ খেয়ে ফেলছি। বয়ামের রোদ একসময় ফুরিয়ে যায়। আম্মু হয়ত এবার পচিশ টাকা দিয়ে রুপালী কাগজে মোড়ানো মাখনের টুকরো কিনে আনবে বাড়িতে। আর আমার চোখের সামনে ভীষণ […]
আল মাহমুদ যে দিনটিকে ঈদ মেনে নিয়েছিলেন, তাঁর অপ্রস্তুত এলোমেলো আলো অন্ধকারের ঘরে, মৃত্যুর ফেরেশতার দেয়া সেই অনিবার্য তাকিদে যেদিন সত্যিই চলে গিয়েছিলেন ওপারে, সেদিন কিছুটা বিমূঢ় হয়েই পড়ছিলাম তাকে। মনে পড়ছিল আমার শৈশবের শীতল পাটি আর দুপুর রোদের ওম।
কোত্থেকে ভেসে এসেছিল ধানক্ষেত পাড়ি দেয়া শস্যের বাতাস আর মোল্লাবাড়ির খামারের গন্ধ। এসেছিল মাহমুদ নামের এক অদ্ভুত কিশোর। তার চোখে আমায় […]
সামনে বইসা আছে রঙিন উঁচা বংশের লোক।
কালা রইদ চশমায় নায়ক লাগে তারে। গলায় বান্ধা মাফলারের লাল গোলাপীতেও তাই। আজকাল আর কেউ সাইকেলে মোটরসাইকেলে মরদের খেমতা আটকায়া রাখেনা।
তারা বিদ্যাশ যায়।
মায়ে বাপে জমি বেইচা দিবে বইলা জবান দিছে, লেবুর গন্ধওয়ালা জমিটা বেচবে তারা, জবান দিছে।
আমার তিন বছরের টুনটুনিরে মায়ে বাপে দেইখা রাখবে জবান দিছে। আমি দেইখা রাখব সামনে বসা উঁচা বংশের লোকের ছেলেসন্তানদের। […]
পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকেই বিপুল সংখ্যক এথনিক জার্মান ইস্ট ইয়োরোপ থেকে জার্মানিতে অভিবাসন প্রক্রিয়া শুরু করে।কারণটা সেখানকার কমিউনিজমের তিক্ত অভিজ্ঞতা, চরম অর্থনৈতিক দৈন্য। তাছাড়াও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে হয়ত ঠিকঠাক বেঁচে থাকা দায় হয়ে দেখা দিচ্ছিল, আর তারা চাচ্ছিলই জার্মান কমিউনিটির ভেতর মিশে থাকতে। পুরোপুরি এক হয়ে যেতে।
এই অভিবাসনের স্রোত কিন্তু ১৯৮৯ তেও থামলো না। এমনকি নব্বই এর পরেও না। “সমজাতীয়তা” […]
আমার আধামরা নানী আর কোন উদিশ না পাইয়া সব দোষ দিছিলো সিলিঙটার।
বলছিলো ঐ সিলিঙ মাংসাশী।
মায়ের রুপালী নূপুর পরা পা দুইটার কোন দোষ ছিল না। ধইরা নেয়া ভাল ঐগুলা পা না, পেন্ডুলাম। তারা বাতাসে দুইলা যায়।
মায়ের নির্দোষ পা দুইটার নাগাল পাওয়ার জন্য আমি হাত তুইলা দিছিলাম আসমান বরাবর। সিমেন্টের মেঝের উপর দাঁড়াইয়া আমি আসলে আমার জান্নাত খুঁইজা নিতে চাইছিলাম।
কারা জানি […]
নিঃসঙ্গ কবরখানায় দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষের মত আঞ্জুমকে দিয়ে এই মহাঘটনার শুরু। অরুন্ধতি কাকে ঘিরে কেন ঘটনা গোছান সেটা নিশ্চিতভাবে প্রেডিক্ট করা যায়না। দ্য গড অব স্মল থিংস পড়ে সে ধারণার গোড়াপত্তন হয়েছিল। দাম্ভীক স্বাজাতিকতা, বর্ণপ্রথা থেকে বাঁচার জন্য যে ছায়ায় মানুষ যেতে চায়, সেখানেও যে তারা উদার আশ্রয় পায়না অথবা সাম্যবাদেও কেমন করে ভর করে উঁচু নীচু কমরেডতত্ত্ব সেগুলো আইমানামের […]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের পুরোটাই রাঁধুনির চাকরি করা এক পুরুষের হঠাৎ খেয়াল হল কিছু লেখা দরকার।
জীবনের আটত্রিশটা বছর কেটে গিয়েছে নানান বঞ্চনায়। সত্যি কিছু লেখা দরকার। কোত্থেকে শুরু করবেন, কিভাবে শুরু করবেন এসব খুঁজে পেতে তিনি আকাশ পাতাল ভাবেন। ভাবতে ভাবতে ধমনীর কথা মনে পড়ল। ধমনীর ভেতরে তির তির করে অনেক রহস্য বইছে, অনেক না জানা কথাও বইছে ।
পুরুষটি নিজের পূর্ব […]
পাতালপুরীতে অতীতচারণ
পরের দিন নিদার স্কুল খোলা। মামীও কাজে গিয়েছে। সাহিল সকালবেলা কিন্ডারগার্টেনে ফোন করে বলে দিয়েছে যে, ঘরে ভাগ্নে আসায় তাকে অনেক দায় দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। আজকে সে যেতে চায়না। পরে ওদের শিক্ষিকা হাসতে হাসতে ঘটনার সত্যতা জানার জন্য ক্রসচেকও করেছেন। সুতরাং সাহিলও আমাদের আজকের সফরসঙ্গী।
মামা আমাদের টুনেলবাননা (পাতাল রেল) করে সিটি সেন্টার, গামলাস্তান দেখাতে নিয়ে যাবে এরকমই পরিকল্পনা। […]
ভাইকিং, পাইন ও অন্যান্য
বার্লিন দেয়ালের টপোগ্রাফি দেস টেররের কথাবার্তা রিডিং গ্লাস চোখে দিয়ে বেশ সময় নিয়ে পড়ছিল তামান্না মামী। আশেপাশের মানুষগুলোও ইতিহাস খুঁড়ছে মন দিয়ে। মামী আমাকে নীচু গলায় বলল, -জার্মানির তো মাশাল্লাহ উথাল পাথাল হিস্ট্রি! সেই তুলনায় সুইডেনের হিস্ট্রি কমই।
আমিও আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করলাম, -কেমন কম? -ভাইকিং টাইকিংই একটু হাইলাইটেড আর কি। তবে সুইডেনের একটা ম্যাজিক আছে। কলহপ্রিয় এবং জলদস্যু অ্যানসেস্টরদের দেশ […]
ঊনবিংশ শতাব্দীর একদম শুরুর কথা। তখন পোল্যান্ড ছিল অস্ট্রিয়ার অংশ। সেখানকার লেম্বার্গ শহরে লিউপোলড উইসের জন্ম হয়। পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য ছিল ইহুদী রাব্বীর দায়িত্ব পালন। তার পিতামহ ছিলেন জার্নোবিৎসের কট্টর ইহুদী মোল্লা। পারিবারিক ঐতিহ্যের অনুসরণ হোক সেটা লিওপোলডের পরিবার চাইতেন। দীক্ষা দেয়া হল হিব্রু ধর্মের ইলম। শৈশবেই তার হিব্রু ভাষার বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের ওপর একটা মজবুত ভিত্তি তৈরি হতে থাকে। তিনি ওই […]
বাঁধের শহরে বসতি, প্রার্থনা
আমস্টারডামের বেশ অনেক বাসার ছাদগুলো, স্পেসিফিকলি পুরনো বাসার ছাদ ইউরোপের গতানুগতিক ছাদের মত না। একটু তিনকোণা কিন্তু কোণের প্রান্তবিন্দু আবার অর্ধবৃত্তাকার। এগুলোকে বলা হয় ত্রিকোণ গেবল বা চুড়ো। আমস্টারডামেই শুধু এমন চুড়াওয়ালা বাসা দেখলাম। বাড়িগুলো হোমোজিনিয়াস আর দুই দালানের মাঝখানে কোন তফাৎ নেই।
একে তো বাঁধের শহর, স্বাভাবিকভাবেই অতি ওজনদার বাড়ির ভার বইতে পারার কথা না। তাই এক […]
জাদুঘর, হতাশা এবং শিথানের বালিশ
অডিও গাইড ডামস্কয়ারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। এই নগর কেন্দ্রে পাওয়া যাবে ডাচ রাজার রাজপ্রাসাদ। রাজ প্রাসাদের সামনেই খোলা চত্বরে কোথাও হারমোনিকার সুর, বেহালাবাদকের উপার্জনের থলে, চেয়ার পেতে অবকাশ যাপন আর কতরকমের বিকিকিনি! সেন্ট্রাল ষ্টেশনে যেমন দেখেছি, এখানেও তাই। বিভিন্ন জাতীয়তার সম্মেলনকেন্দ্র যেন। প্রায় ১৭৭ দেশের মানুষের বাস এই বহুজাতিক শহরটিতে।
ডামস্কয়ারকে কেন্দ্রে রেখে পুরো শহরে রয়েছে […]
ক্যাফেইনে বন্দি
হামবুর্গ জীবনে অভ্যস্ত হওয়ার পাঠ শুরু হয়েছে বেশীদিন হয়নি। তখন বার্লিনে গিয়ে যুক্তরাজ্যের ভিসা নিয়ে আসতে হত। আমার শ্বশুর শাশুড়ি বেলফাস্ট থাকতেন। সরাসরি ফ্লাইট ছিল না ওদিকে সেজন্য মিটফার পদ্ধতিতে আমস্টারডাম রওনা হয়েছি মধ্য এপ্রিলের কোন এক সকালবেলা। মিটফার (mitfahr) হল গাড়ি ভাগাভাগি পদ্ধতি। ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়িতে সিট সাপেক্ষে বাড়তি যাত্রী ওঠানো হয় অনেক সময়। আমরা […]
যে কথা বলতেই হবে
আমি যখন স্বদেশ ছেড়ে অন্যের দেশে আসছি তখন আমার এককালের জাতীয়তাবাদী হোমসিক পরবর্তীতে বিশ্ব নাগরিক তত্ত্বে আস্থা আনা পিতা বেশ কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন। এর মধ্যে একটা ছিল আমি নতুন ভাষাটিকে এমনভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনি যেন গুন্টার গ্রাসের ভাষাতেই গুন্টার গ্রাসকে জানতে পারি। সিম্বোলিক আর কি। ভাষা প্রসঙ্গে আলাপ আরেকদিন করব তবে গুন্টার গ্রাস বিষয়ে আমার আগ্রহ আছে […]
“ভাবছো তুমি চুপচাপ শহরে-গ্রাফিতি আঁকা দেয়ালজুড়ে”
লোহালক্কড় বেড়িয়ে আছে কোথাও। কোথাও পলেস্তারা খসে পড়া ইট। এভাবেই সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মহান এক দেয়াল। ফ্রেঞ্চ চিত্রশিল্পী চেরী নরের তুলির আঁচড়ের মাধ্যমে ফ্রিডম অব সেন্সরশীপের খোলা খাতা- পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত ক্যানভাসে পরিণত হয় একসময়ের অবরোধের প্রতীকটি। বিশ্বব্যপি চলমান বঞ্চনার প্রতিবাদ লেখা হয় এখানে, রাজনৈতিক কার্টুন-ট্রল সব থাকে এখানে।
[…]
বার্লিনের সাথে আমার পরিচয় খুব সামান্যই ছিল। শহর বা রাজধানী হিসেবে তো নয়ই, ব্যাক্তির নাম হিসেবে। লুসিয়া বার্লিন নামের মোটামুটি অখ্যাত এক লেখকের নাম আমার বাবার লাইব্রেরীর কোথাও পড়ে ছিল তখন। আবার নাম ভুলে যাওয়া কোন ছিন্নমূল শিশু বার্লিনের রাস্তায় কষ্ট নিয়ে হেঁটে যেত এরকম অনুবাদ গল্প শৈশবের শীতলপাটিতে বসে পড়েছিলাম;মনে পড়ে।
দ্বৈত জীবনের একদম শুরুর দিকে। দুই দরজা বিশিষ্ট পঙ্খীরাজ […]
আগস্ট মাসের শোকের বাতাস সেপ্টেম্বরেও বওয়া নিয়ম । তবু এক অনাহুত ১৮ই এপ্রিলের প্রসঙ্গ আনতেই হল। দুঃখিত ।
বরাইবাড়ির কথা মনে আছে ? রৌমারির বরাইবাড়ি । একাত্তর সালে যেটা ছিল মুক্তাঞ্চল । বেঁচে থাকার আশায় সারা দেশ থেকে লক্ষাধিক মানুষ পালিয়ে জড়ো হয়েছিল সেখানে । এদের সিংহভাগই আবার আরেকটু ভাল ভাবে বেঁচে থাকার জন্য সীমান্তের ওই পাশে […]
আমি রান্না বান্না নিয়ে প্রচুর ভাবি ।ক্লাস ফোর থেকেই ভাবি । কাজের কাজ খুব কিছু না হলেও ভাবনা অব্যাহত আছে – থাকবে । ব্যপারটা এমন না যে মেয়ে হয়ে জন্মেছি – রান্নাবাটি জিনিসটা আমার মজ্জায় প্রোথিত আছে , খুব ভাল হতেই হবে । অনেক ভাল রান্না করাটা আমার […]
এবার দেশে গিয়ে কিছু মানুষকে চিনতে পারিনি ।
এদের ভেতর একজন হল মাহফুজ । মাহফুজের সাথে আমাদের পরিচয় আট ন বছর আগ থেকেই , যখন সে কাগজে কাগজে নিজের নাম লিখে বেড়াতো , ‘মাফুজুল রমাহাম ’ ।
সে যে স্কুলে পড়ে সেখানে দু একটা বড়লোকের ছেলেও আসে । তার বোন যে কলেজ থেকে এবার […]
খুব হুট হাটের ডিসিশন সব সময় খারাপ না ।
কাকভোর থেকে রাত নিশুতি পর্যন্ত দৌঁড়ানোর ফাঁকে এক বিকেলে উনি গলা বাড়িয়ে বললেন , পলিরা (সিস্টার ইন ল) যাচ্ছে , যাবা ?
´´ আমি ঝর্না হয়ে গলে যেতাম অমনি পরম সুখে … ´´লাইনগুলো ছোটবেলায় বিভিন্ন কম্পিটিশনে অসংখ্যবার না বুঝে গেয়েছি । একটু বড় হয়ে মানুষের অন্তরে এত তৃষ্ণা কেন জমে- কিভাবে জমে বুঝতে চাইতাম , অনুভব করতে চাইতাম । । এক সেকেন্ডের জন্যেও জায়গাটি যেহেতু থেমে থাকে না , তাই […]
আজকে দীবা রাণী আম কাটতে গিয়ে আঙ্গুলটাই কেটে ফেলেছে । পুরো আঙ্গুল গোল হয়ে কেটে একটা কোনা কোনরকমে ঝুলে ছিল কেবল । দীবার মা সেই ঝুলে পড়া অংশটুকু, থেকে যাওয়া অংশের সাথে চেপে ধরে এক দৌড়ে মহেশ ডাক্তারের কাছে গেল এই মাত্র । রুমার মা , পূজার মা , ঝিনুকের মা , রুমা , পূজা , ঝিনুক এরা সবাই রাস্তায় গোল হয়ে আঙ্গুল কর্তন প্রক্রিয়া নিয়ে আলাপ চারিতায় ব্যস্ত যখন , তখন তুলি […]