পেন ফ্রেন্ড – ১
তখন নাইনে পড়ি। এক বিকেলে ক’জনের সাথে খেলছিলাম ছোট্ট গন্ডির ভেতরে। হঠাৎ গলি বেয়ে ডাকপিয়ন এলেন, সাইকেল চালিয়ে। বাড়িতে অনেক চিঠি আসতো। এলাকার ভাইয়ারা আমাদের পরিবারের খোঁজ নিতে পাঠাতেন। অনেকেই পাঠিয়েছেন। তবে চিঠি এলে খুব আনন্দ হতো, খুবই।
আমাদের দরজায় নক করলেন। খুললে ডাকপিয়োন চাচা বললেন, তোমার নামের মাঝে কি সুলতানা আছে মা? আমি বললাম হ্যাঁ। তখন চিঠি বের করে দিলেন – আমি ঠিক ধরেছি, তোমার আব্বুর নাম আছে এটা আর কেউ হতেই পারে না – রাজশাহী থেকে এর আগে তো কোন চিঠি আসেনি তাই দোটানা ছিলো। আমি খাম হাতে নিলাম, হাত কাঁপছিল আমার নামে প্রথম কোন চিঠি এসেছে। প্রেরকের জায়গায় নাম নেই শুধু লেখা রাজশাহী।
অন্যদেরকে লুকিয়ে চিঠি খুললাম …. সবটুকু মনে নাই এখন শুধু মনে পড়ে একটা বাক্য-আমি তোমার কলম বন্ধু হতে চাই। চিঠির শেষে ঠিকানা দিলাম আমাকে কলম বন্ধু করতে চাইলে চিঠি পাঠিও। আর আমার নাম দিয়ে বেশ কিছু কবিতা লেখা। এখনও বিস্মিত হই! আমাকে কি করে চিনলো তাই ভেবে!
পেন ফ্রেন্ড – ২
হসপিটালে চোখে ডাক্তারের চেম্বারের সামনে দাড়িয়েছিলাম। ছিলাম বগুড়া। আমার চেয়ে এক ক্লাস নিচে পড়া মেয়ে বসে থাকতে থাকতে এক সময় উঠে দাড়িয়ে বলল – বসো তুমি।
আমি বললাম না তুমিই বসো।
সে জোর করে বসিয়ে দিলো – আরে বসোতো, কখন থেকে দাড়িয়ে আছো! এরপর কত কথা বললাম, হাত ধরে হাঁটাহাঁটি করলাম। বললো – আমি ভি এম স্কুলে পড়ি। তোমার ঠিকানাটা দাও আমি তোমায় পেন ফ্রেন্ড বানাতে চাই!
এই পেন ফ্রেন্ডের সময়গুলো খুব দ্রুত চলে গেলো। সময় এনে দাড় করালো এক কৃত্রিমতায়, নিখাদ হতে যেয়ে ফিরে ফিরে আসে মানুষ ঠকে যাবার ভয়ে! নিখুঁত হৃদয়ের অধিকারী হতে গিয়ে ফিরে আসে যান্ত্রিকতায় খেই হারাবার ভয়ে!
আমি ডাকপিয়ন চাচার আব্বুর মতো সাইকেল মিস করি! মিস করি হলদেটে খামটা!